কৃষি

পটাশ সার: ফুলবাড়ীতে বিঘা প্রতি বরাদ্দ ২ কেজি! জমিতে প্রয়োজন ১৫ কেজি।

ফুলবাড়ী, দিনাজপর প্রতিনিধিঃ
চলতি আমন মৌসুমে ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষকরা চাহিদা মাফিক পাটাশ পাচ্ছে না । বিঘা প্রতি ১৫ কেজি চাহিদা থাকলেও, সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী মিলছে বিঘা প্রতি ২ কেজি পটাশ।
আমন চাষাবাদ মৌসুমে কৃষকদের জমিতে প্রয়োগের জন্য অপরিহার্য রাসায়নিক সার এমওপি (মিউরেট অফ পটাশ) বা পাটাশ । যা কৃষকের কাছে পটাশ নামেই পরিচিত। কিন্তু উপজেলার আমন চাষীরা টাকা দিয়েও পাচ্ছেনা পটাশ সার। কোথাও সল্প পরিমানে পাওয়া গেলেও কোথাও আবার পাওয়াই যাচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানাগেছে, আমন মৌসুমে পাটাশের চাহিদা ১হাজার ২৭৩ মেট্রিক টন। চলতি মাসে বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ১৩৩ মেট্রিক টন। উপজেলায় ২২হাজার ৮শ ৪ হেক্টর আবাদী জমি রয়েছে এর মধ্যে চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টোর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারন করা হয়েছে। কার্ডধারী কৃষক রয়েছে ৩২ হাজার ৫শ ৫৫জন। এই উপজেলায় ১০জন বিসিআইসি এবং ১২জন বিএডিসি অনুমোদিত মোট ২২ জন সার ডিলার রয়েছে। উপজেলা কৃষি অদিপ্তরের তথ্য মতে এ পর্যন্ত৭০ শতাংশ জমি রোপন করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে ফুলবাড়ী পৌর শহরের মেসার্স ইসলাম ট্রেডার্স সার ডিলার খোরশেদুল আলম লালু’র সাথে কথা বললে তিনি জানান, কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী (এমওপি) পটাশ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। চলতি মাসের সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী পাটাশ সারের যা বরাদ্দ পাওয়া গেছে, তা প্রতি বিঘা জমির জন্য ২ কেজি করে। অথচ কৃষকের প্রয়োজন ১৫ কেজি করে। এতে প্রতি বিঘা জমিতে ১২ কেজি সার ঘাড়তি।
পৌর শহরের সার ব্যবসায়ী মেসার্স পরিতোষ কুমার মল্লিক ও এমআর ট্রেডার্স বলেন, বাজারে প্রচুর পরিমাণ পটাশের চাহিদা। আমরা চাহিদা মাফিক পটাশ পাচ্ছি না। অথচ কৃষক পটাশের জন্য দোকানে র্ধনা দিচ্ছেন। তারা আরও বলেন, সাধারণত পটাশ রাশিয়া, ইউক্রেন, বেলারুশ থেকে আমদানী করে সরকার। আর যুদ্ধের কারণে আমদানী কম।
শিবনগর ইউনিয়নের রাজারামপুর গ্রামের কৃষক গণেশ চন্দ্র বলেন, তিনি পাঁচ একর জমিতে আমন ধান রোপণ করেছেন। অনাবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট খরা বিদ্যুতের লোড সেডিং এর কারণে সঠিক সময়ে সেচ দিতে পারছে না। এদিকে সার ও ডিজেলে মূল্য বৃদ্ধি। তার ওপর প্রয়োজন মতো বাজারে মিলছে না পটাশ সার। অথচ পটাশ সারের কারণে আমন চাষে সমস্যা, কারণ পটাশ সার জমিতে প্রয়োগ করলেই ধানের চারার শিকড় বৃদ্ধি পায়, চারা গাছ শক্ত হয় এবং দানা পুষ্ট হতেও সহায়তা করে পটাশ সার।
একই কথা বলেন কৃষক তমাল হোসেন ও শাইনুর ইসলাম। তারা জানান, প্রতি বিঘা জমির জন্য প্রয়োজন ১৫ কেজি করে পটাশ অথচ সরকার বরাদ্ধ দিয়েছে ২ কেজি করে। এতে প্রতি বিঘা জমিতে ১২ কেজি সার ঘাড়তি।তারা বলেন, এমনিতেই বিদ্যুৎ, সার, ডিজেল সব মিলে এবার আমন চাষে খরচ বেশী পড়বে। এখন ভাবতে হচ্ছে এত খরচ করে কি আমন চাষে লাভ করা যাবে?
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বিঘা প্রতি ১৫ কেজি’র স্থলে ২ কেজি পাটাশ সারের বরাদ্দের কথা স্বীকার করে বলেন, চলতি মাসে এই অবস্থা হলেও আগামী মাসে পটাশের কোন ঘাটতি থাকবে না আশা করা যায়। এদিকে কিছু সার ব্যবসায়ী সার নিয়ে কারসাজি করছে বলে অনেকে অভিযোগ তোলেন। তারা উত্তোলনকৃত সার অন্যত্র গোপনে বিক্রি করে দিচ্ছেন চড়া দামে। কাগজ কলমে ঠিক রেখেছেন।
এ দিকে দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় সার ঘটতি দেখা দিয়েছে। চলতি বছর কৃষকেরা বেশি দামে সার কিনে আমন ধান চাষে হিমসীম খাচ্ছে। আনেক ডিলার দোকন সংলগ্ন গুদামে সার না রেখে অন্য বিভিন্ন স্থানে সার গোডাউনে রাখছেন। সেখান থেকে ভ্যানে করে সার এনে দোকানে বিক্রি করছেন।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments