সারাদেশ
ডেমু ট্রেন চালুর নেপথ্যে
আল মামুন মিলন, পাবতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ স্বল্প দুরত্বে চলাচলের উপযোগী আধুনিক প্রযুক্তির ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) ট্রেন ২০১৩ সালের জুলাইয়ে চীন থেকে আমদানী করা হয়েছিল। আমাদানীকৃত ২০টি ট্রেনের আয়ুকাল ৩৫ বছর থাকলেও ৪ বছরের মধ্যে নানা যান্ত্রিক ত্রুুটি দেখা দেয়। দীর্ঘ সময় ট্রেন সমুহ অকেজো হয়ে থাকায় এ খাতে লোকসানের মুখে পড়ে সরকার। শুরুতেই ডেমু ট্রেন চলাচলকারী রুট গুলোতে দেখা দেয় যাত্রী উঠানামায় লেভেল জটিলতা। ট্রেনটির উঠানামার দরজা সমুহ অন্যান্য ট্রেনের চেয়ে উচু হওয়ায় প্লাটফর্ম থেকে যাত্রী উঠানামায় বিড়াম্বনায় পড়তে হতো সাধারনের। ফলে প্রয়াজন হয়ে উঠে রেলওয়ের প্লাটফর্ম সংস্কারের। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে উচু করে নির্মান করা হয় অর্ধশত প্লাটফর্ম। এর পরপরই চালুর ৪ বছরের মাথায় ওভার রোলিং ও ইলেকট্রনিক ট্রাবলের কারনে অকেজো হতে থাকে ডেমু। ফলে ২০২০ সালের মার্চে বন্ধ হয়ে যায় ডেমুর চলাচল।
ডেমু সচল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মঞ্জুর-উল আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল দেশীয় প্রকৌশলীদের উদ্ভাবনী প্রযুক্তিতে পার্বতীপুর লোকোমোটিভ কারখানায় একসেট ডেমু মেরামতে মোটিফেকশনে নেওয়া হয়। এতে সময় লাগে ১বছর ৩ মাস। সম্প্রতি মেরামত শেষে একসেট ডেমু ট্রেন পার্বতীপুর থেকে ঠাকুরগাঁও পর্যন্ত চুড়–ন্তভাবে সফল ট্রায়ালরান করা হয়। ব্যয়বহুল মডিউল হটিয়ে বসানো হয় মাত্র ২টি কন্ট্রোলার। ট্রেনটি মেরামতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। যা আমদানি করা হলে কয়েক গুন বেশি টাকা ব্যয় হতো। এ প্রযুক্তিতে ট্রেন মেরামত করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এটি পুনাঙ্গ চালু হলে আরও ১৯ সেট ডেমু মেরামতে উদ্যোগ নিবেন কর্তৃপক্ষ। ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে চীন থেকে ২০ সেট (দুই দিকে ইঞ্জিন ও মাঝ খানে একটি বগি নিয়ে একসেট) ডেমু ট্রেন আমদানি করে সরকার। চীনের তানংশান ইন্টারন্যাশনাল এই ডেমু ট্রেনের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ট্রেনগুলো এক ধরনের বিশেষ সফটওয়্যার দিয়ে পরিচালিত। কিন্ত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তি বাংলাদেশকে হস্তান্তর করেনি। ডেমুর মডিউল বিকল হলে নতুন মডিউলের সঙ্গে সফটওয়্যার সেটআপ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিত। এর জন্য ধর্ণা দিতে হত চীনা প্রকৌশলীদের কাছে। যা ছিল অনেক ব্যয়বহুল। একটি ডেমুতে ৪০টি মডিউল রয়েছে। যার এক একটির দাম প্রায় ৭ লাখ টাকা। চীনা প্রকৌশলীরা প্রযুক্তি হস্তান্তর না করায় একটার পর একটা ডেমু অকেজো হয়ে পড়ে। পার্বর্তীপুর লোকোসেড কারখানায় এস এস এ ই/ (আবাসিক) মোঃ কাফিউল ইসলাম জানান, রেলওয়ের ট্রফিক ডিপাটমেন্টের নির্দেশনা আসলে নিদিষ্ট রুটে বানিজ্যিক ও পুনাঙ্গ চলাচল শুরু করবে ডেমু।
Comments