জাতীয়

তোয়াব খানের দ্বিতীয় জানাজা জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত

বর্ষীয়ান সাংবাদিক তোয়াব খানের দ্বিতীয় জানাজা জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্য দিয়ে চিরদিনের জন্য প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণ ছাড়লেন তিনি। সোমবার (৩ অক্টোবর) দুপুর ১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের টেনিস গ্রাউন্ডে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে তার প্রথম জানাজা সকাল ১০টায় তেজগাঁওয়ের দৈনিক বাংলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে তার মরদেহ রাখা হয় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।
জানাজা নামাজের আগে তোয়াব খানের ছোট ভাই ওবায়দুল কবির খান বলেন, আমার বড় ভাই গত শনিবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ হচ্ছে, যদি উনি কখন আপনাদের সঙ্গে ভুল ব্যবহার বা অন্য কোনো কিছু করে থাকে তবে তাকে ক্ষমা করে দেবেন। একই সঙ্গে তার আত্মার মাগফিরাতের জন্য দোয়া রাখবেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আজকে আমরা শোকে ভারাক্রান্ত। আমাদের সঙ্গে হয়তো প্রকৃতিও আজ কাঁদছে। আমাদের আজীবন সদস্য তোয়াব ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আমি সবার কাছে বলব, আপনারা সবাই তার প্রতি দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন। উনার মৃত্যুতে সাংবাদিকতা আজকে শূন্যস্থানে গিয়ে পৌঁছেছে। তোয়াব ভাইয়ের চলে যাওয়া মানে সাংবাদিকতার একটি ইতিহাসের অধ্যায় শেষ হওয়া।
জানাজা নামাজ শেষে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জনাব তোয়াব খান বাংলাদেশের ইতিহাসের একজন কিংবদন্তি সাংবাদিক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার অসামান্য অবদান ছিল। স্বাধীন বাংলা সঙ্গে কাজ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর পরবর্তী সময়ে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিব হিসেবে কাজ করেছেন, প্রধান তথ্যকর্ম হিসেবে কাজ করেছেন এবং পিআইবির মহাপরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, দৈনিক পাকিস্তান যখন নাম পরিবর্তন করে দৈনিক বাংলা হলো সেটির প্রথম সম্পাদক ছিলেন জনাব তোয়াব খান। আজকের দিনে দৈনিক বাংলার সম্পাদক থাকা অবস্থায় তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তার হাত ধরে বাংলাদেশের বহু প্রথিতযশা সাংবাদিকের জন্ম হয়েছে। তার লেখনী আমাদের দেশ ও জাতিকে উপকৃত করেছে। তিনি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একজন পথিকৃৎ। তার মৃত্যু আমাদের সাংবাদিকতা জগতের জন্য শুধু নয়, পুরো জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
শিক্ষা মন্ত্রী দীপু মনি বলেন, বাংলাদেশের বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা এবং সাহসী সাংবাদিকতার পথিকৃত ছিলেন তোয়াব খান। আমি মনে করি যে- তিনি যে দেশপ্রেম ও আদর্শ নিয়ে সাংবাদিকতা করেছেন, এখন যারা সাংবাদিকতা করছেন, আগামীতে যারা এই পেশায় আসবেন, তারাও সেই আদর্শ গ্রহণ করবেন ও স্মরণে রাখবেন। সংবাদ মাধ্যম আমাদের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেয়, সেখান থেকে তোয়াব খানের মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরনীয় ক্ষতি। তার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য আমাদের তার আদর্শ ও বস্তুনিষ্ঠতা স্মরণে রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, যেকোনো পরিবেশ পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার অনন্য এক ক্ষমতা ছিল তোয়াব খানের। তার সাংবাদিকতা, কর্মজীবন আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।
জানাজা নামাজ শেষে সাংবাদিক তোয়াব খানের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করে জাতীয় প্রেসক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ সাব-এডিটর কাউন্সিল, দৈনিক প্রথম আলো, কালেরকণ্ঠ, জনকণ্ঠ, সাংবাদিক কল্যান ট্রাস্ট, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রে, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক ফোরাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য সংগঠন।
এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তোয়াব খানকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়েছে। ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলামের উপস্থিতিতে তাকে এই সম্মান দেওয়া হয়। এ সময় তার মরদেহ জাতীয় পতাকায় মুড়ে দেওয়া হয়।
শহীদ মিনারে বরেণ্য সাংবাদিক তোয়াব খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার কার্যালয়ের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সহকারী সামরিক সচিব জিএম রাজিব আহমেদ, আওয়ামী লীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments