সারাদেশ

রংপুরে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানোর দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

স্বনামে বেনামে বিত্তবানদের বন্দোবস্তকৃত অকৃষি খাসজমির বরাদ্দ বাতিল করে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানো এবং প্রত্যেক গরীর পরিবারকে রেশনিংয়ের আওতায় এনে তাদের আর্মি ও পুলিশের রেটে রেশন দেওয়ার দাবিতে ভূমিহীনদের সংবাদ সম্মেলন।
গতকাল ১৬ অক্টোবর ২০২২,রবিবার ভূমিহীন ও গৃহহীন সংগঠন, রংপুর এর উদ্যোগে নিউক্রস রোডস্থ সুমি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাসদ(মার্কসবাদী),রংপুর জেলার সদস্যসচিব আহসানুল আরেফিন তিতু।সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভূমিহীন আন্দোলনের প্রধান সংগঠক, বাসদ(মার্কসবাদী) রংপুর জেলার আহ্বায়ক কমরেড আনোয়ার হোসেন বাবলু, ভূমিহীন সংগঠনের বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটির নেতা যথাক্রমে বাবু মিয়া,ছায়া বেগম,মেরিনা খাতুন,হাবলু মিয়া,রোকেয়া খাতুন, আম্বিয়া বেগম,রমজান আলী,রুপানা বেগম,গুড়িয়া,হাসিনা বেগম প্রমুখ। লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আনোয়ার হোসেন বাবলু বলেন, ভূমিহীন ও গৃহহীন সংগঠন সরকারী খাস জমিতে গৃহহীনদের পুনর্বাসনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে । চলমান আন্দোলনের এক পর্যায়ে রংপুরের (১৯৯৫-২০০০ সালে ) তৎকালীন জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল রংপুর শহর এলাকায় সেরকম খাসজমি নেই, যেখানে ভূমিহীনদের পুনর্বাসন করা যায় । সংগঠনের পক্ষ থেকে কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে কয়েকটি এলাকায় খাস জমি চিহ্নিত করে তদস্থলে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য ব্যবহারে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য তালুক ধর্মদাস মৌজায় সাবেক দাগ -৫৮০২ (জমি ৭ একর ৯২ শতক) ও খলিশাকুড়ি মৌজায় ১২ একর খাস জমি চিহ্নিত করে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা ছিলো। পরবর্তীতে সাবেক এডিসি ( রেভিন্যু ) এ.কে আজাদ সাহেব বলেছিলেন ৫৮০২ দাগের জমিটি শ্রেণীতে নদী হওয়ায় শ্রেণী পরিবর্তন না করা পর্যন্ত বন্দোবস্ত দেয়া যাবে না । এজন্য মন্ত্রণালয়ের শ্রেণী পরিবর্তনের আদেশ প্রয়োজন । বর্তমান সরকারের ক্ষমতাসীন দল সে সময় দেশ পরিচালনা করছিলো । এ ঘটনাটি ২০/২২ বছরের পুরনো কথা, যা আজ পর্যন্ত শ্রেণী পরিবর্তন হয়নি এবং তদস্থলে ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।খলিশাকুড়ি মৌজার খাস জমিতে অন্য কিছু করার পরিকল্পনা চলছে।কিন্তু ভূমিহীনদের এখানে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হচ্ছে না।
বর্তমান সরকার, "বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না-প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সমগ্র দেশে সকল ভূমিহীনদের জমিসহ সেমি পাঁকা ঘর দেবার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এই উপলক্ষে সকল ভূমিহীন পরিবারকে দুইটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছে।যথাক্রমে ক-শ্রেণীর পরিবার (যার ভূমি নেই এবং ঘর নেই এমন ভূমিহীন পরিবার)।খ-শ্রেণীর পরিবার-(যার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ জমি আছে কিন্ত ঘর নেই এমন পরিবার)।প্রাথমিকভাবে ক-শ্রেণীকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সরকারি জমি, সরকারের কেনা জমি,কারো দানকৃত জমিতে পুনর্বাসন করার ঘোষণা আছে।এ অবস্থায় আমরা রংপুর সিটি কর্পোরেশন ও আশপাশের উপজেলার কিছু পরিবার নিয়ে প্রায় ৬ হাজার পরিবারের পুনর্বাসনেের জন্য আবেদন করেছি।তার সাথে আরও দুটি দাবি যুক্ত করে তিন দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছি। দাবি বাস্তবায়নে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ব্যাপক জনগণকে যুক্ত করতে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরির মাঠে ১৭ অক্টোবর, বেলা-৩.০টায় জনসভার দিন ধার্য করি।১৪/১৫দিন পর আমাদের জানানো হয় ঐ দিন মাঠে সরকারি প্রোগ্রাম আছে।তাই পরের দিন ১৮/১০/২২ তারিখ মাঠ ব্যবহারের জন্য গত ২৯/৯/ ২২ আবেদন করি।এর ভিত্তিতে পোস্টার,লিফলেট ছাপানো হয়েছিল এবং ব্যাপক প্রচার চলছিল।এ অবস্থায় গত ১৩/১০/২২ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয় টাউন হলে সরকারি প্রোগ্রাম আছে। তাই মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেয়া গেল না।উপায় না পেয়ে সকল ভূমিহীন সংগঠকদের ডেকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ৩১/১০/২২ বিকাল ৩.০ টায় জনসভার দিন ধার্য করা হয়।তিনি আরও বলেন
গ্রাম থেকে নিঃস্ব মানুষ জীবন বাঁচানোর তাগিদে রংপুর সিটি শহরে এসে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভাড়া বাসায় থেকে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়ে অতি কষ্টে জীবন নির্বাহ করছে।এরকম শত শত মানুষ রেলসড়ক, মহাসড়কের পাশে জীবনের ঝুঁকি নিয়া বসবাস করছে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে বলা হলো সিটি এলাকায় যেহেতু অকৃষি খাস জমি বরাদ্দ দেয়ার বিধান নাই,তাই উপজেলায় যেতে হবে।সিটি বা শহর ছেড়ে উপজেলায় গিয়ে কর্মহীন মানুষ জীবিকা চালাতে পারবে না। তাই শহর থেকে উপজেলায় যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।আমাদের ভূমিহীনদের দাবি সিটি এলাকাতেই খাস জমিতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।নিত্যপ্রয়োজনীয়
পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় আয়ের সাথে ব্যয়ের অসামঞ্জস্য অবস্থা বিরাজ করছে।ইতোমধ্যে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে,অনেকের আয় কমেছে। যারা বাসা ভাড়ায় থাকে তাদের ৩/৪ মাসের ভাড়া এবং দোকানে বাকী পড়েছে। অন্যদিকে জমির মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে অন্যের জমিতে আশ্রিতরা জমি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে।ফলে এসকল উপায়হীন মানুষদের জন্য অবিলম্বে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা এবং জিনিসপত্রের মূল্য কমানো অত্যন্ত জরুরী।যেহেতু সীমিত আয়ের মাধ্যমেই জীবন চালাতে হচ্ছে তাই সকল গরীবদের রেশনিংয়ের আওতায় আনার দাবি করছি।
এসকল বিষয় বাস্তবায়ন করার জন্য আপনাদের মাধ্যমে সরকারের কাছে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।পাশাপাশি ভূমিহীদের ন্যায্য দাবি আদায়ে ৩১ অক্টোবরের জনসভা সফল করতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সহযোগিতা, সমর্থন এবং অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানাই।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments