মুক্তমত

অধ্যয়নই ছাত্রজীবনের একমাত্র তপস্যা

।। মোল্লা তানিয়া ইসলাম তমা ।।
জীবনের সবচেয়ে ভালো সময়টুকু কাটে ছাত্র জীবনে, যেন পড়ালেখা ও আড্ডাবাজি ব্যতিত সবকিছুই মূল্যহীন। তৃপ্তির আবহে আবর্তিত সারাক্ষণ । এ বয়সে নিজের মনের গভীরে ডুব দিয়ে খুঁজি কোথায় আনন্দ পাওয়া যায়। জীবন হয়ে যায় সরল রেখা, বক্রতা আর পাই না । এ সময় ভবিষ্যৎ নিয়ে একটাই আগ্রহ থাকে- কীভাবে ভালো রেজাল্ট করা যায়। বাবা-মায়ের চোখে আনন্দ তুলে দেওয়া যায়। আমরা অন্ধের মতো পড়ালেখা করে যাই। অন্ধের মতো পড়ালেখা করে কখনোই বেশি দূরে যাওয়া যায় না। কারণ শিক্ষাকে উপকরণ করে পরবর্তীতে যে পেশাগত জীবনেই যাই না কেন দরকার কৌশলী হওয়া । তা না হলে দীর্ঘ এ শিক্ষা জীবনের শিক্ষাটাই বৃথা। তাই ভালো রেজাল্ট করে অনেকেই ভালো চাকরি পায় না বা চাকরি পেলেও কৌশলগত অজ্ঞতার কারণে পেশাজীবনে ভালো করতে পারে না । ভালো ছাত্র হলেই যে পেশাগত জীবনে ভালো করবে এমনটা নাও হতে পারে। তাই শিক্ষাজীবন থেকেই শিক্ষা পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি নিতে হবে। চাকরীদাতারা ভালো রেজাল্টের চেয়ে বেশি পছন্দ করে একজন অভিজ্ঞ ও কুশলী ব্যক্তিকে। পেশাগত জীবন সব সময়েই ছাত্রজীবন থেকে আলাদা। ছাত্রজীবনে অনেক সফল ও মেধাবী ব্যক্তিকেই পেশাগত জীবনে সাফল্য লাভ করতে দেখা যায় না। আবার ছাত্রজীবনে মেধার স্বাক্ষর রাখেনি এমন অনেকেই পরবর্তীতে পেশাগত জীবনে ব্যাপক সাফল্য লাভ করে। করপোরেট জগত কখনোই সহজ নয়। এখানে বিভিন্ন শ্রেণীর ও বয়সের মানুষ রয়েছে। তাদের কালচার বা চিন্তা ধারাও ভিন্ন। শুধু কাজ করলেই হবে না, আশেপাশের পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে হবে। বর্তমান যুগ হলো বিশ্বায়নের যুগ। নিজের জন্যই পুরো বিশ্বের সঙ্গে কানেক্টেড থাকা প্রয়োজন। বর্তমান যুগ হচ্ছে নেটওয়ার্কিংয়ের যুগ। আপনি কি জানেন তা নয় বরং আপনি কাকে কতটা জানেন এটাই অনেক ক্ষেত্রে বেশি জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ। জ্ঞান এক কথায় হলো পরিচিতি থাকা, কোনো কিছু সম্পর্কে বা কারো বিষয়ে জেনে থাকা বা বুঝে থাকা, হতে পারে কোনো কিছুর প্রকৃত অবস্থা, তথ্য, বিবরণ, বা গুনাবলী সম্পর্কে জ্ঞান থাকা, যেটি অর্জিত হয়েছে উপলব্ধির মাধ্যমে, অনুসন্ধানের মাধ্যমে বা শিক্ষা গ্রহণের ফলে অভিজ্ঞ হওয়ায় বা পড়াশুনা করে। পুঁথিগত জ্ঞানের বাইরেও অনেক বিস্তৃত জ্ঞান আছে, তা বিশ্বাস করতে হবে। যুগের সাথে সঙ্গতি রেখে পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি কিছু বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে হবে। দক্ষতা অর্জনের অন্যতম জায়গা হলো বিভিন্ন পেশাজীবীদের সংগঠন। সংগঠনে জড়িত থাকলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বাস্তব ভিত্তিক বিভিন্ন তথ্য ও জ্ঞান বিনিময়ের পাশাপাশি নিজেকে বিকশিত করার সুযোগ। পাঠ্য বইয়ের বক্স থেকে আপনাকে বের হয়ে আসতেই হবে। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে প্লাটফর্ম তৈরি করে দেবে, কিন্তু নিজেরটা নিজেকেই গড়ে নিতে হবে। আমাদের দেশে শিক্ষা আর পেশার মধ্যে নেই কোনো সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক। বাংলা সাহিত্য বা ইতিহাস নিয়ে পাশ করে চাকরি করতে হচ্ছে ব্যাংকে। অনেককে দেখেছি এমবিবিএস পাশ করে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশে কাজ করতে। শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কাজ করার মধ্য দিয়ে যে অধিকতর যোগ্যতা রাখা সম্ভব অন্য বিষয়ের লোকদের দিয়ে তা করা দুরহ। এমনিতেই বিসিএস-এ পরীক্ষার্থীর ভিড়ে অনেকেই হারিয়ে যায়। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার চেয়ে শিক্ষাকে কীভাবে আমাদের পেশাজীবনে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে এই এলোমেলো ব্যবস্থার পরও নিজেদের ক্যারিয়ার তৈরি করার জন্য সবকিছুর সঙ্গে মিলিয়ে চলতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন হয় সব বিষয়েই সম্যক ধারণা রাখা। যেহেতু আমাদের জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটে ছাত্রাবস্থায়। বিষয়গুলো উপলব্ধির মোক্ষম সময় তখনই। ঐ সময়টুকু যদি আমরা যথাযথভার কাজে না লাগাতে পারি, বাকি জীবনটুকু হতাশা আর আক্ষেপে করতেই চলে যাবে। সাফল্যের প্রত্যাশা ঢেকে যাবে সংশয়ের মেঘে। তাই আমার দৃষ্টিতে ছাত্রজীবন হচ্ছে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় । যেমন বিদ্যার্থীর অর্থ হলো- বিদ্যা যে গ্রহণ করে । তাই ছাত্রজীবন বড় সুখের । আবার ছাত্রজীবনের গুরুত্ব ও দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি, কর্তব্য সর্বাপেক্ষা কঠোর। এটাই জীবন গড়ার সময়, কর্মজীবন গঠনের প্রস্তুতি পর্ব। সংযম, শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার দ্বারা পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়সহকারে দেহ, মন ও মস্তিষ্কের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ করতে হয়, জীবন সংগ্রামে সৈনিক হয়ে কঠোর দুঃসময়েরও মোকাবিলা করতে হয়। বলিষ্ঠ মেধাবী জীবন, শ্রদ্ধাশীল, নিষ্ঠাবান, উন্নত চরিত্র, বহুজন হিতায় মহৎ কর্মপ্রয়াস- ছাত্রজীবনের মহত্তম আদর্শ। বাল্যকাল ও যুবাবস্থার প্রথম জীবনে অর্থাৎ ২৫ বছর ছাত্রজীবনের উৎকৃষ্ট সময়। এই সময়ে ছাত্ররা সব চিন্তা থেকে মুক্ত থাকে ও বিদ্যাভ্যাসের প্রতি নিজেকে সমর্পণ করে। সে সময় শিক্ষাগুরুর অধিক মহত্ত্ব। ছাত্রজীবন তপস্যার, সাধনার। এ অধ্যয়নই সর্বোত্তম তপস্যা, কিন্তু একমাত্র নয়। ছাত্ররা দেশের ভবিষ্যৎ, দেশের নায়ক। পরিবার, সমাজ ও দেশের প্রতিও তাদের কর্তব্যবোধ থাকা জরুরি। সেজন্য ছাত্রদের সুস্বাস্থ্য, মনে অদম্য উৎসাহ ও সাহস, বুদ্ধি সজাগ, সহিষ্ণু ও অনুশাসনময় হতে হবে। অনুশাসনের অর্থ হলো, নিয়মের মধ্যে থেকে কাজ সম্পন্ন করা। অনুশাসন কেবল ছাত্রদের নয়, প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনের তাৎপর্য আছে। বিনা অনুশাসনে কোনো ব্যক্তি সুসম্পন্নভাবে কার্য সম্পাদন করতে পারে না। অনুশাসনবদ্ধ ছাত্ররাই দেশকে উন্নত থেকে উন্নততর করতে পারে। ছাত্রজীবনে অনুশাসনের বিশেষ গুরুত্ব আছে। ছাত্রজীবনে ব্যায়াম চর্চার দ্বারা শারীরিক স্বাস্থ্য ও শক্তি অর্জন করা, পাঠ্যগ্রন্থবহির্ভূত বিবিধ উৎকৃষ্ট গ্রন্থ পাঠ দ্বারা জীবনে জ্ঞান ও আনন্দ লাভ করা, সাংসারিক বা কোনো বৃত্তিবিষয়ক কাজ করা, আত্মিক জীবন সমৃদ্ধ করা, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা ছাত্রছাত্রীদের অবশ্য কর্তব্য। শিক্ষা লাভ বা জ্ঞানার্জন আমাদের জীবনব্যাপী সাধনা হতে পারে। কিন্তু তার সঙ্গে আমাদের জীবনের ভিত্তি এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যার দৃঢ়তা ও স্থিরতার ওপর ভবিষ্যতের জীবনসৌধের উন্নতি ও উৎকর্ষ নির্ভর করে। তাই এ মূল্যবান দিনগুলো কাজে লাগাতে হবে। অবহেলায়, গল্পগুজবে না কাটিয়ে নিজেকে বিদ্যাচর্চায় সমর্পিত করতে হয়। বিদ্যায়, বুদ্ধিতে, স্বাস্থ্যে, শক্তিতে, সংযমে, সেবায়, শ্রদ্ধায়, ত্যাগে পরিপূর্ণভাবে নিজেকে যোগ্য হতে হয়। আদর্শ বিদ্যার্থীকে সব সময় উচ্চ বিচারে বিশ্বাসী হতে হয়। বিদ্যার্থীকে বিনম্র অনুশাসনপ্রিয়, জিজ্ঞাসু, সংযমী আদি গুণসম্পন্ন হতে হয়। বিদ্যা সব সময় আমাদের বিনম্রতার পাঠ পড়ায়। সংযম, শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতায় ছাত্রাবস্থায় জীবনকে সুগঠিত করার পক্ষে অপরিহার্য । ভবিষ্যতে সুযোগ্য নাগরিকরূপে দায়িত্বপূর্ণ কার্যভার গ্রহণ করার যোগ্যতা তাদের দ্বারা সম্পন্ন হবে। ভবিষ্যতে যারা দেশের কর্ণধার হবে, তাদের পক্ষে এ তিনটি গুণ একান্ত প্রয়োজনীয়। ছাত্রাবস্থায় জীবনের আদর্শ স্থির করে জীবনপথে অগ্রসর হতে হবে। বিংশ শতাব্দীতে বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্রসমাজের অবদান বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ছাত্রদের চিন্তাশক্তি, যুক্তি, বিচার-বিবেচনা, দূরদৃষ্টি, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সবকিছুই দেশের উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করতে হবে। তাহলে দেশ উন্নত থেকে উন্নততর হবে। ছাত্রজীবনে শিক্ষার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। শিক্ষাই তো ছাত্রজীবন গড়ার মূল চাবিকাঠি। শিক্ষা ও ছাত্রজীবন একে-অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত । ছাত্ররা একটি দেশের ভবিষ্যৎ। ছাত্রসমাজের কাছে দেশ ও জাতি চেয়ে থাকে। ছাত্রদের জাগরণে যেমন একটি সমাজ, জাতি ও দেশ জেগে উঠে ঠিক তেমনই ছাত্রসমাজের মাঝে ঘুণ ধরলে তার প্রভাব পুরো জাতির উপরেই পড়ে। সাধারণ অর্থে যে শিক্ষাগ্রহণ করে তাকেই ছাত্র বা ছাত্রী বলা হয়। সেই দিক দিয়ে পৃথিবীর সব মানুষই ছাত্র-ছাত্রী। কারণ মানুষ মৃত্যু পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণ করতেই থাকে। তবে, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের সময়কে মূলত ছাত্রজীবন হিসেবে গণ্য করা হয়। ছাত্রজীবন মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। এই সময়টিই তার ভবিষ্যৎ গড়ে দিয়ে থাকে । আজ যারা ছাত্র, তারা আগামী দিনে দেশ ও জাতির নেতৃত্ব দেবে। তাই তাই গ.ক এধহফযর বলেছিলেন, “ঞযব ংঃঁফবহঃং ধৎব ঃযব ঋঁঃঁৎব ষবধফবৎং ড়ভ ঃযব পড়ঁহঃৎু যিড় পড়ঁষফ ভঁষষরষষ পড়ঁহঃৎু’ং যড়ঢ়বং নবরহম পধঢ়ধনষব.” ইংরেজীতে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে- ঊফঁপধঃরড়হ রং ঃযব নধপশনড়হব ড়ভ ধ হধঃরড়হ. অর্থ্যাৎ শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ছাড়া কোনও জাতি উন্নয়ন করতে পারেনা। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। তবে, শিক্ষার সাথে যদি আদর্শিক শিক্ষার সংমিশ্রণ না ঘটে তাহলে সে শিক্ষা পূর্ণতা লাভ করতে পারেনা। একজন অন্ধকে তার হাতে মশাল দিয়ে যদি বলা হয় তুমি লোকদের পথ দেখিয়ে এসো। চোখ না থাকার দরুণ সে যতটুকু না লোকদের পথ দেখাবে তার চেয়ে ঘর বাড়ি আগুন লাগাবে অনেক বেশি। ঠিক তদ্রুপ একজন ছাত্রকে যদি সুশিক্ষায় শিক্ষিত না করা হয় তাহলে সে দেশের নেতৃত্ব হাতে নিয়ে দেশকে সামনের দিকে যতটুকু না এগিয়ে নিয়ে যাবে তার চেয়ে দেশ ও জাতিকে বিপথে পরিচালিত করবে। “ছাত্র নং অধ্যয়নং তপঃ” এটিই ছাত্রজীবনের মূলমন্ত্র। সংস্কৃত এই কথাটির অর্থ হলো- অধ্যয়নই ছাত্রজীবনের একমাত্র তপস্যা। মহান আল্লাহতায়ালা মহাগ্রন্থ পবিত্র আল-কোরআনের প্রথম শব্দটি নাযিল করেছেন ‘‘ইকরা’’ যার অর্থ পড়। ছাত্রজীবনে পড়ালিখার কোনও বিকল্প নেই। পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি ইসলামিক বইপত্র, বিজ্ঞান বিষয়ক বই পড়ার চর্চা করতে হবে। তাহলে জ্ঞানের পূর্ণতা লাভ এবং মেধার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ হবে। বাংলাদেশের প্রধান কবি আল মাহমুদকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনি শিক্ষার্থীদের কোন কাজটি প্রাধান্য দিয়ে করতে বলবেন? তিনি বলেছিলেন, চোখের সামনে যে বই পাবে, তাই যেন সে পড়ে ফেলে। ছাত্রজীবনে বেশকিছু দ্বায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। সেগুলো যথাযথভাবে পালন করা উচিত। মা-বাবা, শিক্ষক-শিক্ষিকা আমাদের গুরুজন। তাদের সাথে আমাদের সর্বদা সর্বোত্তম আচরণ করতে হবে। হাদীসে আছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। আরেকটি হাদীসে রয়েছে, পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। তাই, মাতাপিতার মনে কখনও কষ্ট দেওয়া যাবেনা। পিতামাতার পরেই শিক্ষকের স্থান। একজন শিক্ষকের আদেশ-নিষেধ, পরামর্শ যথাযথভাবে পালন করলে ভালো গুণের ছাত্র হওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ঘড়হব নঁঃ ঃযড়ংব যিড় যধাব ঃযব ংঢ়ৎরঃ ড়ভ ভড়ৎনবধৎধহপব ধৎব ভরঃ ঃড় নব ঃবধপযবৎ. তাই শিক্ষককে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করতে হবে । ছাত্রসমাজ হলো একটি দেশের সচেতন নাগরিক। ছাত্রদের মূল লক্ষ্য পড়ালেখা হলেও এর পাশাপাশি সমাজের উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করা উচিত। নিরক্ষরদের মাঝে অক্ষরজ্ঞাণ প্রদান, তাদেরকে জনসংখ্যাবৃদ্ধির কুফল ও তা রোধে করণীয়, স্বাস্থ্যসচেতনতা সম্পর্কে তাদের সাথে আলোচনা করে তাদেরকে সচেতন করতে হবে। শিক্ষিত যুবকেরা যদি কৃষি কাজ, মৎস চাষ, পশুপালন, নার্সারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগায় তাহলে তা একদিকে যেমন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে তেমনি সেটি দেশের বেকারত্বও হ্রাস করবে। ঝড়-বন্যা কিংবা দুর্যোগকালে সেবা ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। ছাত্রসমাজ বরাবরই অন্যায়-অনাচার, দূর্নীতি, অবিচার, অত্যাচার ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। আদর্শগতভাবেই একজন ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। রাজনীতির বিষবৃক্ষ মুলোৎপাটন করা ছাত্রসমাজের অন্যতম একটি দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য। আমাদের দেশের ছাত্ররাজনীতির একসময় সুনাম ছিলো। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, দেশ স্বধীনের পর স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন ও নেতৃত্ব ছাত্ররাজনীতিকে এক অনন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু বর্তমানে এই ছাত্ররাজনীতি কেমন যেন একটু কলুষিত হয়ে পড়েছে। বর্তমান ছাত্ররা রাজনীতির প্রকৃত আদর্শ থেকে দূরে সরে গিয়ে ক্যাম্পাসে অস্ত্রবাজি, সন্ত্রাসবাজি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন দুষ্কৃতিমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে যেয়ে নিজের প্রখর মেধাকে নষ্ট করার পাশাপাশি ছাত্ররাজনীতিকে কলঙ্কিত করছে। যখন কোন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মী চাদাবাজি করতে গিয়ে ধরা পড়ে বা সহপাঠীকে ধর্ষণ চেষ্টাকালে গণঢোলাই খেয়ে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে, তখন তা কেবল ঐ ছাত্রসংগঠনের জন্য দুর্নাম বয়ে আনেনা বরং তা পুরো ছাত্ররাজনীতির জন্য লজ্জাকর বিষয় হয়ে দাড়ায়। বর্তমান ছাত্রসমাজের কাছে ছাত্ররাজনীতির গুণগত পরিবর্তন করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। সমায়ানুবর্তীতা ছাত্রজীবনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সময়ের কাজ যথাসময়েই মনোযোগের সাথে করতে হবে। তাই ইংরেজিতে বলা হয়- ““ডড়ৎশ যিরষব ুড়ঁ ড়িৎশ, ঢ়ষধু যিরষব ুড়ঁ ঢ়ষধু. অহফ ঃযধঃ রং ঃযব ধিু ঃড় নব যধঢ়ঢ়ু.” ছাত্রজীবনে এই নীতি অনুসরণ করে চললে অবশ্যই সাফল্যের শিখরে আরোহণ করা সম্ভব হবে। একদিনের কাজ পরের দিনের জন্য কখনোই রেখে দিলে চলবেনা। নিয়মিত পড়ালিখা করা, সময়মত ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে উঠা, স্কুলে যাওয়াসহ সব কিছুই নিয়ম মেনে করতে হবে। ছাত্রজীবন থেকে এই নিয়মানুবর্তিতার মাঝে বেড়ে উঠলে কর্মজীবনে এর প্রভাব পড়ে এবং জীবনযাপন সহজতর হয়ে উঠে । নৈতিক মূল্যবোধ একজন ছাত্রকে সৎ, কর্তব্যনিষ্ঠ ও পরিশ্রমী করে তোলে। সাইয়্যেদ কুতুব রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, যে সমাজে মানবীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতার প্রাধান্য থাকে সে সমাজই সভ্য সমাজ। কথাবার্তায়, চলাফেরায়, পোশাক-পরিচ্ছদে বিনয়ী হতে হবে। শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ একজন ছাত্রকে নম্র ও ভদ্র করে তোলে। যারা এইগুলো অর্জন করতে পারবে, ভবিষ্যতে তারাই জাতির সুষ্ঠু নেতৃত্ব দিতে পারবে। তবে একজন আদর্শ ছাত্র-ছাত্রী হবার জন্য সবসময় নিজেকে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, গীবত, মিথ্যাবলা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করতে হবে। বন্ধু নির্বাচনে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা একটি প্রবাদ আছে, “সৎ সঙ্গে সর্গবাস এবং অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments