সারাদেশ

গাইবান্ধায় দুই মাসে বন্ধ ৮০০ খামার

                         সব কিছুর দাম বৃদ্ধিতে পোল্ট্রিশিল্পে অশনি সংকেত

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ দফায় দফায় পোল্ট্রি ফিড, বাচ্চা এবং ওষুধের দাম বেড়েই চলেছে। কিন্তু সে তুলনায় বাড়ছে না উৎপাদিত ডিম ও মুরগির দাম। ফলে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে গাইবান্ধার প্রান্তিক খামারিদের। এতে দিন দিন ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে পোল্ট্রিশিল্প আর বন্ধ হচ্ছে খামার।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার যদি স্থানীয় পর্যায়ে খামারি, খাদ্য বিক্রেতাদের মধ্যে সমন্বয় করে সব কিছুর মূল্য নির্ধারণ করে দেয় তাহলে এই শিল্পটা টিকে থাকবে। অন্যথায় ধ্বংস হবে।জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত দুমাস আগে দুই হাজার ৮০০ বাণিজ্যিক খামার ছিল গাইবান্ধায়। এরইমধ্যে ৮০০টি খামার বন্ধ হয়েছে।খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যারা বিভিন্ন বেসরকারি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বেয়ালী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান বছর দুয়েক আগে দুই হাজার মুরগি নিয়ে পোলট্রি ফার্ম দিয়েছিলেন। পোলট্রি ফিডের দামের সঙ্গে পেরে উঠতে না পেরে মাসখানেক আগে সব মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে তার খামারে কোনো মুরগি নেই।

খলিলুর রহমান বলেন, তিন মাস আগে মুরগির খাবার কিনেছি বস্তাপ্রতি দুই হাজার ২০০ টাকায়। সেই খাবার এখন সাড়ে তিন হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। ওষুধ ও ভ্যাকসিনের দামও বেড়েছে।তিনি বলেন, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে লোকসানের মুখে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোলট্রি খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।শুধু খলিলুর রহমান নয়, এমন বক্তব্য শহিদুল ইসলাম, নুরুন নাহারদেরও।

শহিদুল বলেন, খামার বন্ধ করি দিছি, আর পোষায় না। যে হারে সবকিছুর দাম বাড়ছে সরকার যদি সময় মতো কোনো পদক্ষেপ না নেয় তাহলে গাইবান্ধার পোল্ট্রিশিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যে কয়টি খামার চালু রয়েছে তাও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে।কথা হয় ওই গ্রামের রাজা মিয়ার স্ত্রী নুরুন নাহার বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘১৫ বছর থাকি মুরগির খামার করি আসপের নাগছি। কোনো নাভতো দূরের কথা, সহায় সম্বল হারে ফেলাছি। দেনার অত্যাচারে বাড়ি ছাড়া হছে স্বামী। চিটাগাংগোত যায়য়্যা লেবারি কাম করবেন নাগছে তাঁই।’

আর এক খামারি ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালী ইউনিয়নের নীলের ভিটা গ্রামের নজিবুল হক নাইম। স্নাতক পাস করে পোলট্রি খামার দিয়েছিলেন। বছর পাঁচেক আগে এক হাজার মুরগি নিয়ে শুরু করা খামারে তিন হাজার মুরগি তুলেছিলেন তিনি। বর্তমানে তার খামারে মুরগি আছে এক হাজার ৮০০টি। প্রতি মাসে খাবার, ওষুধের খরচ যুগিয়ে আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় আর কুলাতে পারছেন না তিনি।

নজিবুল হক বলেন, ফুলছড়ি উপজেলায় আড়াই শতাধিক খামার আছে। সব মিলিয়ে নতুন করে মুরগি তুলেছেন সর্বোচ্চ ২০ জন।

পোল্ট্রি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে গেলে সরকারকেই সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে বলে জানান তিনি।খামারিরা বলছেন, পোলট্রির প্রত্যেক জিনিস বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যাতে তাদের ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ না করতে পারে সেদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। তাহলে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে পোল্ট্রিশিল্প।

পোলট্রি খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে গাইবান্ধার টিটু পোলট্রি ফিডের সত্ত্বাধিকারী টিটু মিয়া বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের খৈলসহ প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে। আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের কিছু করার নেই। বেশি দামে কিনে আমরা তো আর লোকসানে বিক্রি করতে পারবো না।

দেশের সিংহভাগ পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা পূরণ করে থাকে এই পোল্ট্রিশিল্প। যদি তা ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে পুষ্টি ও আমিষের সংকট দেখা দেবে জানিয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাসুদার রহমান বলেন, পোল্ট্রি খাদ্যের মূল্য বাড়ানো বা কমানো ক্ষমতা আমাদের নেই। নীতিনির্ধারকরা যদি ভোক্তা, খামারি ও খাদ্য ব্যবসায়ীর সঙ্গে সমন্বয় করে সব কিছুর মূল্য নির্ধারণ করে, তাহলে পোল্ট্রিশিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যেত।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments