জাতীয়

৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে আইএমএফ প্রতিনিধি দল আসছে কাল

বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে আগামীকাল বুধবার (২৬ অক্টোবর) বাংলাদেশে আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশে আইএমএফ মিশন প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি অর্থমন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সংস্থাটির ঋণ পাওয়ার শর্তগুলোর বিষয়ে আলোচনা করবে।
বাংলাদেশও এই ঋণের বিষয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ইতোমধ্যেই আইএমএফের কয়েকটি শর্ত বাংলাদেশ প্রতিপালন করেছে। আগামী ডিসেম্বররের মধ্যে ঋণের প্রথম কিস্তির ডলার পাওয়ার কথা। এই ডলার পেলে আগামী জানুয়ারি থেকেই দেশের বাজারে ডলারের সংকট অনেক কেটে যাবে এবং অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে বলে মনে করছেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও অর্থনীতিবীদরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) আজকালের খবরকে বলেন, আগামী দিনে যাতে আমদানী ব্যয় মেটাতে কোনো সমস্যা না হয় এবং দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ না হয়, তার জন্য আইএমএফের এই তহবিল আমাদের প্রয়োজন। আমাদের রির্জাভ ঠিক রাখতে আমরা এই ঋণ নিচ্ছি। আশা করছি এই তহবিল পেলে আমরা আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি কেটে উঠতে পারবো।
আইএমফের প্রতিনিধি দলটি আজ থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করবে। প্রতিনিধি দলটি ফিরে গিয়ে তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার পর ঋণের ছাড়ের প্রস্তুতি শুরু করবে আইএমএফ।
সংশ্লিষ্ট কর্মকতারা জানান, ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে আইএমএফ দেশের পুরো অর্থনীতির ঝুকি ও সমস্যাগুলোর একটি মূল্যায়ন করবে। একই সঙ্গে আইএমএফের শর্তগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে সেটি পর্যালোচনা করবে। ইতোমধ্যে সরকার আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য প্রধান চারটি শর্ত বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমিয়েছে, সারের দাম বাড়িয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণে বাড়িয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারকে বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস হিসাবের পাশাপাশি নিট হিসাবও করছে এবং তা নিয়মিতভাবে আইএমএফকে দিচ্ছে। এই চারটি প্রধান শর্ত বাস্তবায়ন করায় আইএমএফের ঋণ পেতে সরকার অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর আজকালের খবরকে বলেন, আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় আগামী তিন মাসের মধ্যে যদি সরকার পরিস্থিতি স্থীতিশীল করতে পারে তাহলে সেটা আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিকভাবে প্রভাব পরবে। আমরা চাইবো যে টাকাটা আইএমএফ থেকে দেওয়া হবে সেই টাকাটা খরচ হবে না। এই টাকাটা রিজার্ভ বাড়ানোর কাজে ব্যবহার হবে। সরকার অন্যান্য বাজেট সহায়তাও পাবে, সরকার সেটা ব্যয় করুক। কিন্তু ডলার সংকটের জন্য যেটা নিচ্ছে সেটা যেনো রির্জাভে থাকে। তাহলে আমাদের রির্জাভ বাড়বে এতে আমারা আগের অবস্থায় ফিরে যাবো। তিনি আরও বলেন, রাজস্ব খাতে কিছু সংস্কার আইএমএফ চাইবে। সেটা সরকারের আরও আগেই করা দরকার ছিল, সেটা করা হয়নি। এছাড়া আর্থিক খাতে যে নির্দিষ্ট সুদের হার সরকার করে দিয়েছে সেটা তুলে দিতে বলবে।
চলমান ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া এবং মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন বা ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। নতুন করে আর কোনো সঙ্কট না হলে ডিসেম্বর নাগাদ ডলার সংকট থাকবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক গ্রুপ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে গত ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশে ব্যাংকের গর্ভণর আবদুর রউফ তালুকদার জানিয়েছিলেন, আইএমএফ ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে মৌখিকভাবে সম্মতি দিয়েছে। আএমএফের প্রতিনিধি দল ঢাকায় গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে ফিরে তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার পর ঋণের টাকা ছাড়া দেওয়া হবে। আইএমএফের ঋণের ডলার পেলে ডলার সঙ্কট কেটে যাবে বলেও গভর্ণর তখন আশা প্রকাশ করেছিলেন।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments