অপরাধ

তুরাগে জালিয়াত চক্রের দৌরাত্ম্য, আতঙ্কে জমির মালিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজধানীর তুরাগে প্রকৃত জমি মালিকদের মাঝে জালিয়াত চক্রের আতঙ্ক বিরাজ করছে । চক্রটি বিভিন্ন রকম কৌশলে জমি আত্মসাৎ করতে চেষ্টা চালানোয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অসংখ্য প্রকৃত জমির মালিগন । জানা যায়, জালিয়াত চক্রটি প্রথমে ভুয়া দলিল তৈরি করে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস থেকে নামজারি ও জমা খারিজ করিয়ে নেয় । পরে তা বিক্রি করে দেয় প্রভাবশালী মহলের কাছে । এতে চরম ভোগান্তির শিকার হন ভূমি মালিকরা । সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর - উত্তর সিমান্ত ঘেঁষা ডি এম পির তুরাগ থানা, আর এই থানা এলাকায় ১৯৯৯ সালের ১২ আগস্ট ও ২০০০ সালের ২৪ মে ধউর মৌজায় ১৪২৩, ১৪৮৮, ১৯২৮ নম্বর খতিয়ানের ১২৪৮, ১২৪৯, ১২৫০ ও ১৭০১ নম্বর দাগে জমি কেনেন যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি (যুবক)। যুবকের পক্ষে রেজিস্ট্রিকৃত ৪৭০৩ ও ২৯০৮ নম্বর দলিলে ৪৯ শতাংশ জমি কেনেন যুবকের পক্ষে চেয়ারম্যান আবু মোহাম্মদ সাঈদ । কিন্তু যুবকের সেই জমিটি জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া দলিল বানিয়ে যুবকের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবু মোহাম্মদ সাঈদের স্ত্রী শাহনাজ আখতার ও তাঁর দুই মেয়ে নাজনী আমিন, সুবহা সাঈদকে ওয়ারিশ বানিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে তুরাগ এলাকার একটি ভূমি জালিয়াত চক্র । আসল দলিলে যুবক-এর পক্ষে গ্রহীতা আবু মোহাম্মদ সাঈদের নাম উল্লেখ থাকলেও জাল দলিলে ‘যুবক-এর পক্ষে’ কথাটি বাদ দেওয়া হয়েছে । সরাসরি গ্রহীতা হিসেবে আবু মোহাম্মদ সাঈদের নামে জাল দলিল তৈরি করা হয়েছে । যুবক-এর পক্ষে জমির গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান হোসেনকে ক্রেতা দেখিয়েও জমির দলিল জাল করা হয়েছে । তাঁর ওয়ারিশদের নামে নামজারি ও খাজনা-খারিজ করিয়ে জমি বিক্রি করা হয়েছে । এ ছাড়া আরো ৮-১০ বিঘা জমির জাল দলিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে । আর এই জালজালিয়াতির মাধ্যমে কাগজ পত্র সৃজন করিয়া আর সেইসব কাগজ পত্র দেখিয়ে বিভিন্ন জনের কাছে জমি বিক্রি করে প্রতারক চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা । অনুসন্ধানে জানা যায়, এই প্রতারক ও জালিয়াত চক্রের মূলহোতা তুরাগের রাজাবাড়ি এলাকার শুক্কুর আলীর ছেলে স্থানীয় ভূমি দস্যু নুরনবী ওরফে নুরুদ্দিন ও পার্শ্ববর্তী ভাটুলিয়া এলাকার ইসমাইল হোসেনের ছেলে ভূমি দস্যু গোলাম রাসেল সেইয়াল । আর এদের শেল্টারদাতা স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল । অপর দিকে এই প্রতারক ও জালিয়াত চক্রের পক্ষ নিয়ে কাজ করে থাকেন স্থানীয় থানা পুলিশের অসাধু কিছু কর্মকর্তা । তারা প্রকৃত ভুক্তভোগীদের মামলা না নিয়ে উল্টো জালিয়াত চক্রের মিথ্যা মামলা মোকদ্দমা নিয়ে থাকেন বলে গুরুতর অভিযোগ করেছেন, তুরাগের রাজাবাড়ি এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে ব্যবসায়ী মোঃ শাহজালাল মিয়া । তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভূমি দস্যু নুরনবী ওরফে নুরুদ্দিন ও গোলাম রাসেল সেইয়াল গংরা তার ১৮শতাংশ জমি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার জন্য গত ১০/০৯/২০২০ইং তারিখে ঢাকার বিজ্ঞ মুখ্য মহানগর হাকিম এর আদালতে এক মহিলাকে আমার ভুয়া স্ত্রী সাজিয়ে আমার বিরুদ্ধে যৌতুক আইনে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করান । পরে উক্ত মামলায় জেলেও খাটেন তিনি । এক পর্যায় মামলার বাদি বা বাদি পক্ষের আইনজীবী আদালতে হাজিরা না দেওয়ার কারনে ০৩/১১/২০২১ইং তারিখে মামলার আসামীদের বে- কশুল খালাস প্রদান করে মামলাটি নিষ্পত্তি করেন বিজ্ঞ আদালত । পরে এই মামলার বিবাদী মোঃ শাহজালাল মিয়া বাদী হয়ে উক্ত মিথ্যা মামলার বাদিনীসহ মোট ৫জনের বিরুদ্ধে গত ০৯/০২/২০২২ ইং তারিখে ঢাকার চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দ্বায়ের করেন, যার পিটিশন মামলা নং- ১৭৯/২২ । বিজ্ঞ আদালত উক্ত মামলাটি আমলে নিয়ে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সি আই ডি)কে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন । বর্তমানে মামলাটি তদন্তধীন রয়েছে । এই বিষয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ব্যপক ভাবে সংবাদ প্রকাশ হয় । তাই সত্য ঘটনা আড়াল করতে ও নিজেদের বাঁচানোর জন্য জালিয়াত চক্রের হোতা ও ভূমিদস্যু গোলাম রাসেল সেইয়াল তুরাগ থানার এস আই লাল মিয়ার সহায়তায় গত ২২/১১/২০২২ইং তারিখে মোঃ শাহজালাল মিয়াকে প্রধান আসামী করে মোট ৩ জনের বিরুদ্ধে তুরাগ থানায় একটি মিথ্যা বানোয়াট মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং- ৩১ । উক্ত মামলায় এজাহারে উল্লেখ্য করা হয় গত ১৯/১১/২০২২ইং তারিখ সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে যুবক হাউজিং প্রকল্পের ভিতরে উক্ত মামলার বিবাদী দ্বয়রা মামলার বাদি গোলাম রাসেল সেইয়াল ও তার কেয়ারটেকার জহিরকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে তাদের সাথে থাকা টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয় । কিন্তু উক্ত এলাকার একাধিক লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, উক্ত তারিখ ও সময়ে এই ধারনের কোন ঘটনা ঘটেনি । এই ভূমিদস্যু চক্রের কবল থেকে বাঁচতে, মোঃ শাহজালাল মিয়া ইতিমধ্যে প্রধান মন্ত্রীর দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দ্বায়ের করেছেন । অপর দিকে মঞ্জুরুল ইসলাম নামে এক প্রবাসী প্রতিবেদককে জানান, ২৮/১২/২০০৮ইং সালে ৪৪৪৭২নং দলিল মুলে জৈনক মন্নাফ মিয়ার কাছ থেকে ৬৯শতাংশ ও ১৯/১/২০০৯ইং সালে ৩৩০৮নং দলিল মুলে জৈনক বাচ্চু মিয়া গংদের নিকট থেকে সাড়ে ৩৪ শতাংশ জমি ক্রয় করিয়া নিজ নামে নামজারি ও খাজনা পরিষদ করিয়া দখলে থাকেন । পরে তিনি বিদেশে চলে জান । এদিকে ১/৯/২০২০ইং তারিখে তিনি বিদেশে অবস্থান করা কালে এই জালিয়াত ও ভূমি দস্যু চক্রের সদস্যরা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজ পত্র সৃজন করিয়া তার ক্রয়কৃত জমি অন্যত্র বিক্রি করিয়া দেন । পরে ঐ প্রবাসী দেশে এসে উক্ত ঘটনা জানতে পারিয়া এই জালিয়াত চক্রের ৫ সদস্যর বিরুদ্ধে গত ১৫/০৬/২০২২ইং তারিখে ঢাকার বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট. আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন, যার সি আর মামলা ন- ৬৬৩/২২ । ভাটুলিয়া এলাকার মোঃ শহিদুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, তার বাবার দাদি তারাবান বিবি ২০০৪ সালে তার বাবা আলম চানকে তার নিজনামীয় গ্রাম ভাটুলিয়া মৌজার জে এল নং- আর এস, ১ স্থিত এস, এ, ২নং আর, এস, ১৫৮নং খতিয়ান ভুক্ত এস, এ, ২০১নং, আর, এস, ২০৭নং দাগে ৩৩ শতাংশ জমি হস্তান্তর করেন । তারপর উক্ত জমি তার বাবা আলম চানের নামে খাজনা খারিজ করে ভোগ দখলে থাকেন, কিন্তু কয়েক বছর পূর্বে উক্ত জমিসহ তাদের আরও কিছু জমি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজ পত্র সৃজন করিয়া এই জালিয়াত চক্র বিক্রি করে দেন । পরে জমির প্রকৃত মালিক আলম চান আদালতের দারস্ত হন । আদালত কাগজ পত্র যাচাই বাছাই শেষে আলম চানের পক্ষে রায় প্রদান করেন । বর্তমানে উক্ত জমিতে আলম চান স্থাপনা নির্মাণের কাজ করতেছেন । তার আরও জমি উদ্ধারের জন্য আদালতে আরও একটি মামলা চলমান রয়েছে বলে জানান, মোঃ শহিদুল ইসলাম । এই ধরনের জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজ পত্র সৃজন করিয়া অনেক জমি ক্রয় বিক্রয় করেছে এই জালিয়াত চক্র এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে । উপরোক্ত বিষয় সংশ্লিষ্ট ভূমি ও দলিল রেজিস্টারি অফিসে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোন প্রকার সদুত্তর দিতে পারছেন না দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগণ । সূত্র বলছে এই জালিয়াত চক্রের বিষয়ে পূর্বেও একাধিক জাতীয় দৈনিক ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে, তখন মিরপুর সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ মুরাদ হোসেন উক্ত সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকদের জানিয়ে ছিলেন, এই জালিয়াতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে । কিন্তু আদও তারা মামলা করেছেন কিনা প্রশ্ন সাধারণ জনগনের । নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার একাধিক ব্যক্তিবর্গ জানান, নুর নবী ওরফে নুরুদ্দিন ও গোলাম রাসেল সেইয়াল ভূমি জালিয়াতি চক্রের সক্রিয় সদস্য । তাদের বিরুদ্ধে ভূমি জালিয়াতির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে ।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments