খেলা

ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

ভারতের বিপক্ষে মেহেদী হাসান মিরাজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরিতে ৫ রানে জয় পেয়েছে টাইগাররা। এতেই এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করলো স্বাগতীক বাংলাদেশ। ৭ বছর টানা দ্বিতীয়র ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতল টাইগাররা।
বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রানে করে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শেষ বল পর্যন্ত খেলে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৬৬ রানে থামে ভারতের ইনিংস। এতে বাংলাদেশের কাছে ৫ রানে হারে ভারত। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সাথে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। একই সাথে ভারতের বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় ওয়ানডে সিরিজ জয় করলো টাইগাররা। প্রথম ও সর্বশেষ ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ।
প্রথম ম্যাচের মত এবারও টস জিতেন বাংলাদেশের অধিনায়ক লিটন দাস। এবার প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেন লিটন। আগের ম্যাচ থেকে একটি পরিবর্তন- পেসার হাসান মাহমুদের জায়গায় স্পিনার নাসুম আহমেদকে অন্তর্ভুক্ত করে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ওভারের প্রথম দুই বলে দু’টি চার মারেন ওপেনার হিসেবে খেলতে নামা এনামুল হক বিজয়। ওভারের চতুর্থ বলে স্লিপে রোহিত শর্মাকে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান তিনি। বিজয়ের ক্যাচ মিস করার পাশাপাশি আঙুলে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন রোাহিত। পেসার মোহাম্মদ সিরাজের পরের বলেই লেগ বিফোর আউট হন বিজয়। রিভিউ নিয়েও টিকতে না পারলে ৯ বলে ১১ রান ইতি ঘটে বিজয়ের ইনিংসের।
বিজয়কে হারানোর পর তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন লিটন। দেখেশুনে খেলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। দশম ওভারে লিটন-শান্তর জুটি ভাঙ্গেন সিরাজ। টেস্ট মেজাজে খেলা লিটন সিরাজের বলে বোল্ড আউট হওয়ার আগে ১টি চারে ২৩ বল খেলে ৭ রান করেন ।
অধিনায়ক ফেরার কিছুক্ষণ পর প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন শান্তও। ভারতের পেসার উমরান মালিকের অফ-স্ট্যাম্পের ডেলিভারিতে বলের লাইনে পা না নিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন শান্ত। ৩টি চারে ৩৫ বল খেলে ২১ রান করেন তিনি।
৫২ রানে ৩ উইকেট পতনের পর ক্রিজে জুটি বাঁধেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। উইকেট সেট হতে সময় নিচ্ছিলেন তারা। ভারতের দুই পেসার সিরাজ ও মালিকের বল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন সাকিব।
আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে ১৭তম ওভারে ভারতের স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দরের উপর চড়াও হতে বিদায় নেন সাকিব। তবে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিস টাইমিংয়ে শর্ট ফাইন লেগে শিখর ধাওয়ানকে ক্যাচ দেন ২০ বলে ১টি চারে ৮ রান করা সাকিব।
নিজের দ্বিতীয় ওভারে সাকিবকে ফেরানোর পর তৃতীয় ওভারে মুশফিক ও আফিফ হোসেনকে থামান সুন্দর।
সুন্দরের ডেলিভারি ডিফেন্স করতে গিয়ে লেগ স্লিপে ধাওয়ানকে ক্যাচ দেন মুশফিক। রিভিউতে বিদায় হয় ২টি চারে ২৪ বলে ১২ রান করা মুশফিকের। অফ-স্ট্যাম্পে করা পরের ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন আফিফ। ১ বল খেলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মত খালি হাতে ফিরেন তিনি।
১৯তম ওভারে ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে মহাচাপে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় পরিস্থিতির সাথে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে বাংলাদেশের রানের চাকা সচল করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আগের ম্যাচের হিরো মেহেদী হাসান মিরাজ। ২৪তম ওভারে ১০০ ও ৩৬তম ওভারে দলের রান দেড়শ পূর্ণ করেন তারা। স্বাচ্ছন্দ্যে উইকেটের চারপাশ থেকে রান তুলেছেন মাহমুদউল্লাহ-মিরাজ জুটি। বাহারি সব শটে বলকে সীমানা ছাড়াও করেছেন তারা।
৩৮তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তৃতীয় ও ভারতের বিপক্ষে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মিরাজ। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। ৪০তম ওভারে জুটিতে ১০০ পূর্ণ হয় মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহর।
পরের ওভারে ৭৪তম বলে ২১৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৭তম ও ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মাহমুদউল্লাহ। ৪৫তম ওভারে বাংলাদেশের রান ২০০ স্পর্শ করে।
অবশেষে ৪৭তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ২১৭ রানে মাহমুদউল্লাহ-মিরাজ জুটি ভাঙ্গতে পারে ভারত। মালিকের বলে আপার কাট শট মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ।
খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তুলে সপ্তম উইকেটে মিরাজের সাথে ১৬৫ বলে ১৪৮ রান যোগ করেন মাহমুদউল্লাহ। ভারতের বিপক্ষে যেকোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি। ৭টি চারে ৯৬ বলে ৭৭ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।
মাহমুদউল্লাহ’র আউটের পর অষ্টম উইকেটে ২৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫৪ রান তুলে দলকে শক্তপোক্ত সংগ্রহ এনে দেন মিরাজ ও নাসুম আহমেদ। ৭ উইকেটে ২৭১ রান করে টাইগাররা।
ইনিংসের শেষ ওভারে ২টি ছক্কায় সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগান মিরাজ। শেষ বলে ১ রান নিয়ে ৬৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি করেন মিরাজ। টেস্টেও ১টি সেঞ্চুরি রয়েছে মিরাজের। ৮৩ বল খেলে ৮টি চার ও ৪টি ছক্কায় অপরাজিত ১০০ রান করেন মিরাজ। ২টি চার ও ১টি ছয়ে ১১ বলে অপরাজিত ১৮ রান করেন নাসুম। ভারতের সুন্দর ৩টি, সিরাজ ও মালিক ২টি করে উইকেট নেন।
২৭২ রানের জবাবে অধিনায়ক রোহিত শর্মার আঙুলের ইনজুরির কারণে ধাওয়ানের সাথে ইনিংস শুরু করেন কোহলি। দ্বিতীয় ওভারেই বাংলাদেশি পেসার এবাদত হোসেনের বলে বোল্ড হয়ে ৫ রানে থামেন কোহলি। পরের ওভারে ধাওয়ানকে ৮ রানে থামান মুস্তাফিজুর রহমান। ১৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে ভারত।
দশম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই উইকেট শিকার করেন সাকিব। চার নম্বরে নামা সুন্দরকে ১১ রানে বিদায় দেন তিনি। উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুলও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন। মিরাজের বলে লেগ বিফোর হয়ে ১৪ রানে আউট হন তিনি।
৬৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে ভারত।তবে পঞ্চম উইকেটে জুটি বেঁধে ভারতকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা শুরু করেন শ্রেয়াস আইয়ার ও অক্ষর প্যাটেল। বাংলাদেশ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এ জুটি।
আইয়ার-প্যাটেলের জুটিতে ৩২তম ওভারে ভারতের রান দেড়শ স্পর্শ করে। এই জুটি ভাঙতে বারবার বোলিং পরিবর্তন করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন। অবশেষে ৩৫তম ওভারে আইয়ার-প্যাটেল জুটি ভাঙেন মিরাজ। ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১০২ বলে ৮২ রান করা আইয়ার শিকার হন মিরাজের। প্যাটেলের সাথে জুটি বেঁধে ১০১ বলে ১০৭ রান যোগ করেন আইয়ার।আইয়ারের পর প্যাটেলকে বিদায় দেন এবাদত। ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৬ বলে ৫৬ রান করেন তিনি।
এরপর শারদুলকে ৭ রানে সাকিব ও চাহারকে ১১ রানে আউট করেন এবাদত। আঙুলের ব্যান্ডেজ নিয়ে নয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত। এবাদতের করা ৪৬তম ওভারে ২টি ছক্কা ও ১টি চারে ১৮ রান তুলেন রোহিত। ৪৮তম ওভারে মেডেন নেন মুস্তাফিজ। স্ট্রাইকে ছিলেন সিরাজ। শেষ ২ ওভারে ৪০ রান দরকার পড়ে ভারতের।  
মাহমুদউল্লাহর করা ৪৯তম ওভারে দু’বার রোহিতের ক্যাচ ফেলেন এবাদত ও বিজয়। তারপরও ঐ ওভারে রোহিতের দুই ছক্কায় ২০ রান পায় ভারত। ওভারের শেষ বলে সিরাজ বোল্ড হন। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ২০ রান দরকার পড়ে ভারতের।
মুস্তাফিজের করা শেষ ওভারের প্রথম পাঁচ বলে ১৪ রান নেন রোহিত। শেষ বলে ৬ রান দরকার পড়ে ভারতের। শেষ বল ডট দেন ফিজ। ৩টি চার ও ৫টি ছক্কায় ২৮ বলে অপরাজিত ৫১ রান করেন রোহিত। বাংলাদেশের এবাদত ৩টি, মিরাজ-সাকিব ২টি করে উইকেট নেন।
আগামী ১০ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ:
৫০ ওভারে ২৭১/৭ (এনামুল ১১, লিটন ৭, শান্ত ২১, সাকিব ৮, মুশফিক ১২, মাহমুদউল্লাহ ৭৭, আফিফ ০, মিরাজ ১০০*, নাসুম ১৮*; চাহার ৩-০-১২-০, সিরাজ ১০-০-৭৩-২, শার্দুল ১০-১-৪৭-০, উমরান ১০-০-৫৮-২, ওয়াশিংটন ১০-০-৩৭-৩, আকসার ৭-০-৪০-০)
ভারত:
৫০ ওভারে ওভারে ২৬৬/৯ (কোহলি ৫, ধাওয়ান ৮, শ্রেয়াস ৮২, ওয়াশিংটন ১১, রাহুল ১৪, আকসার ৫৬, শার্দুল ৭, চাহার ১১, রোহিত ৫১, সিরাজ ২, উমরান ০*; মিরাজ ৬.১-০-৪৬-২, ইবাদত ১০-০-৪৫-৩, মুস্তাফিজুর ০-০-০-০, নাসুম ১০-০-৫৪-০, সাকিব ১০-১-৩৯-২, মাহমুদউল্লাহ ৩.৫-০-৩৩-১)
ফল: বাংলাদেশ ৫ রানে জয়ী
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments