মুক্তমত

তারুণ্য দীপ্তিকে ছড়িয়ে দিতে হবে নবীন প্রজন্মের শিরা–উপশিরায়

।। মোল্লা তানিয়া ইসলাম তমা ।।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, মুক্তির দিবস। বিজয় দিবস আসলে আমাদের ভাবনা মনের হৃদয়ে উঁকি দিতে থাকে। তাই এদিন আমাদের সবার অতি প্রিয়, অতি আনন্দের দিন। এই দিনটির মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মকে ও বিশ্বকে বারবার মনে করিয়ে দিই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা, শহীদদের কথা । তরুণের তারুণ্য নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা অসামান্য চরিত্রের একজন তরুণকে কল্পনা করা যাক... সকল কালে সকল দেশে সকল লাভ-লোভকে জয় করিয়াছে তরুণ। ওগো বাংলার তরুণের দল-ওগো আমার আগুন খেলার নির্ভীক ভাইরা! ঐ দেখ লক্ষ অকালমৃতের লাশ তোমার দুয়ারে দাঁড়াইয়া! তার প্রতিকার চায়। তোমরা ঐ শকুনির দলে নও, তোমরা আগুনের শিখা, তোমাদের জাতি নাই। তোমরা আলোর, তোমরা গানের, তোমরা কল্যাণের। তোমরা বাহিরে এস এই দুর্দিনে তাড়াও ঐ ভাগাড়ে পড়া শকুনির দলকে। তারুণ্যকে বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না, কিন্তু তরুণদের মধ্যে যদি তারুণ্যই না থাকে তবে বুড়োদের আলাদা করব কীভাবে? তারুণ্যের কোনো বয়স, স্থান-কাল-পাত্র নেই; কঠিন মানসিক শক্তি, ইচ্ছা, সংগ্রাম, বিদ্রোহই তারুণ্য। তারুণ্য মনে, মননে, শক্তিতে, সামর্থ্যে এবং ভাবনায় । একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের শক্তি হিসেবে কাজ করেছে আমাদের তারুণ্য। সেখানে বয়স কোনো বাধা ছিল না। যার মধ্যে ছিল তরুণ-তরুণী, মাঝবয়সী শ্রেণি-পেশার মানুষ, এক কথায় আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। যে তরুণ তার জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে, যে তরুণী তার নিজের সম্ভ্রম বিলিয়ে দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে; শুধু স্বাধীনতা অর্জনকে লক্ষ্য ও প্রতিপাদ্য করে, তারা এখনও জীবিত। দীর্ঘ ৯ মাসের সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। আজ গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি অগণিত মুক্তিযোদ্ধাকে, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের দেশ, প্রিয় মাতৃভূমি । একাত্তরে আমাদের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৭ কোটি । আজ আমাদের জনসংখ্যা ১৭ কোটিরও বেশি। বয়সে তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশেরও বেশি । এ তরুণরা আমাদের গর্ব এবং আগামী দিনের পথচলার শক্তি । 'তারুণ্য' শব্দটি উচ্চারণ করলে যার কথা হৃদয়পটে ভেসে ওঠার কথা, যার থাকার কথা এমন এক নেতৃত্ব, যার মধ্যে ছিল না কোনো খাদ, সন্দেহ আর অবিশ্বাস। আমার দেখা একজন তরুণ, সবাই উন্মুখ ছিল যার ডাকের অপেক্ষায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এমন নেতা আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়া তরুণ সমাজকে সঠিকভাবে পরিচালিত করা সম্ভব নয়। তাদের সঠিক পথ দেখাতে, তাদের মধ্যে সাহস জোগাতে এবং সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীলতার প্রকাশে সহায়তা করতে পারে শুধু তারুণ্যের শক্তি। যেমনটি পেরেছিলেন তারুণ্যে বিদ্রোহে অদম্য তরুণ আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমার চোখে কেন তিনি তারুণ্যের প্রতীক? আসুন একনজরে দেখে নিইথ ১৯৭৫-এর ১৪ আগস্ট পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৫ বছরের কিছু বেশি সময়ের রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধুকে তারুণ্যের ঔজ্জ্বল্যে এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য করা যায়। তবে ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাঁর রাজনৈতিক ইতিহাস, সাংগঠনিক কর্মকা- এবং চিন্তা-চেতনার পরিধি মুক্তিযুদ্ধপূর্ব ও মুক্তিযুদ্ধোত্তর, এ দুটি পর্বে বিশ্লেষণ জরুরি। তেমনি কী কারণে তরুণদের কাছে তিনি এখন পর্যন্ত কিংবদন্তি, ভেবে দেখা যাক । ১৯৫৩ সালে 'মুসলিম' শব্দ বাদ দিয়ে দলটির নামকরণ হয় 'ছাত্রলীগ'। মূলত তৎকালীন পরিস্থিতির জন্য 'মুসলিম' শব্দটি ব্যবহার করা হলেও দলের আদর্শ ছিল অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি। শেখ মুজিব ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন সোহরাওয়ার্দীর উদ্যোগে ঢাকায় গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এ দলের প্রথম যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৫৩-৫৮ সম্পাদক, ১৯৬৬-৭০ সভাপতি, পুনরায় ১৯৭০-৭৩ পর্যন্ত সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের পর আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দেওয়া হয় । ১৯৪৯ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত একটানা জেলে বন্দি ছিলেন জনপ্রিয় এই তরুণ নেতা। তবে জেল-জুলুমের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এবং ভাষা আন্দোলন ও বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে অবিস্মরণীয় অবদান রেখে তিনি পরিণত হন জাতির জনক ও বিশ্বনেতৃত্বে। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানের সংবর্ধনায় 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি পান। একই সালের ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেন, 'জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি...আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম 'পূর্ব পাকিস্তান'-এর পরিবর্তে শুধুমাত্র 'বাংলাদেশ'। সে সময় বাংলাদেশের ইতিহাস ও শেখ মুজিব দুটি অবিচ্ছিন্ন সত্তা হয়ে ওঠে। একটি ছাড়া অন্যটি অসম্পূর্ণ। তাঁর ব্যক্তিচরিত্র একটি অখ- সংগ্রামের ইতিহাস হিসেবে চিহ্নিত। তিনি বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন এবং একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন মনেপ্রাণে তরুণ বাঙালি। এ কারণে মুক্তিসংগ্রামের প্রতিটি পর্বে দলের বিশ্বাস ও নিজের জীবনদর্শনকে একীভূত করে নিয়েছেন তিনি। তাঁর স্বপ্ন ছিল শোষণহীন রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তোলা। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির ভাষণে তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে, আর তার ভিত্তি কোনো ধর্মভিত্তিক হবে না । রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা । 'যার যার ধর্ম তার তার'থ ধর্মনিরপেক্ষতার এই ব্যাখ্যা বঙ্গবন্ধুই প্রথম উপস্থাপন করেন । সব ধর্মকে শ্রদ্ধা করলেও বঙ্গবন্ধু ধর্মান্ধতাকে ঘৃণা করতেন । এ প্রজন্মের তরুণদের মনে রাখা দরকার, বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা থেকে শুরু করে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পূর্ব দিন পর্যন্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে ছিল তাঁর রাষ্ট্রনীতি। তিনি সব সময় শোষিতের মুক্তি কামনা করতেন। আজীবন সংগ্রামে যেমন তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি; তেমনি স্বাধীন দেশের সমাজকে সব অপশক্তির কবল থেকে মুক্ত করার জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিল তাঁর বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। ৫৪-তে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার ১৩ নম্বর দফা ছিল দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে। ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের ৬-দফা কর্মসূচিতেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাঁর অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে নাথ এ ব্যাপারে সবাই নিশ্চয় অবগত । পরিশেষে একটি কথা বলতে চাই, বিশ্বব্যাপী তরুণের আদর্শ হিসেবে যাকে এখন বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করে বিশ্ব, তার তারুণ্য নির্দ্বিধায় অতুলনীয় । আমরা নিরাপদে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে জানান দিচ্ছি আমাদের স্বাধীনতা। উদযাপন করছি বিজয় দিবস। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের মতো গৌরবময় ইতিহাসের ঘটনাগুলো দেখিনি। তবে ইতিহাস থেকে পড়েশুনে জেনেছি, জানছি। উন্নয়নের সোপান বেয়ে পদ্মাসেতু গড়ে উঠছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু পথ এখনো অনেক বাকি! যে গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, সে গণতন্ত্রের চচার্ কতটুকু হচ্ছে? কতটা ভালো আছি আমি, আমরা, এই দেশটা? স্বপ্ন দেখি এই ছোট্ট দেশটা একদিন অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। সেই সফল রাষ্ট্র গড়ার আমরাও এক ছোট্ট কারিগর হতে চাই। বিশ্বের বুকে এক অপরাজেয় জাতি ‘১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অজের্নর পর বাংলাদেশিরা বিশ্বের বুকে এক অপরাজেয় জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এ বিজয় এখনো যে কোনো ক্ষেত্রে আমাদের জয় ছিনিয়ে আনতে সাহস জোগায়। ইতিহাসের এক হিংস্র ও নিকৃষ্ট পাক-বাহিনীর কাছ থেকে যদি আমরা বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারি, তা হলে আজ কেন আমরা দেশের অভ্যন্তরীণ দলাদলি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পাশবিকতাকে পরাজিত করে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারি না? প্রতিটা বাংলাদেশির মতো আমিও স্বপ্ন দেখি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের। যে স্বপ্নটা দেখেছিলেন জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান সে স্বপ্নটা পূরণ করতে পারব এমনটাই আশা । বাক-স্বাধীনতা, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা এ দেশে যেন আকাশ-কুসুম কল্পনার মতো। এই আকাশ-কুসুম কল্পনা একদিন বাস্তবায়িত হবে এ দেশে। সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতার কালো আলখাল্লা আমাদের দেশটাকে আরও পিছনে নিয়ে যেতে চাইছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় সবাই মিলে প্রতিরোধ না করলে পিছিয়ে পড়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না আমাদের । মুক্তিযুদ্ধ দেখার সৌভাগ্য হয়নি নবীন প্রজন্মের । কিন্তু বিজয়ের আবেশ পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমাদের । যখনই বিজয়ের মাস আসে তখন দেহ-মন-প্রাণে এক নব স্বদেশপ্রেম ও তারুণ্য জোয়ার আসে আর সেই জোয়ার খোরাক জোগায় তারুণ্যশক্তির। উৎসাহ দেয় নতুন কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করার। আর এই তারুণ্যশক্তির জোয়ার পৃথিবীর সব অন্যায়–অবিচারকে এমনভাবে আছাড় মারতে পারে, যার প্রভাবে এই অন্যায়–অবিচার ও দুর্নীতি দূর করা সম্ভব। আর প্রাপ্ত সুফল ভোগ করবে প্রতিটি জনগণ । আমরা অনাগত উত্তরসূরিদের জন্য রেখে যেতে পারি এক নতুন পৃথিবী। যেমনি করে আমাদের পূর্বপুরুষের স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলা প্রকৃতিতে প্রাণভরে প্রশ্বাস নিতে পারছি, যার প্রতিটি সেকেন্ড একেকটি স্বস্তির উপন্যাস। এখন আমাদের তারুণ্যশক্তির জাগরণ ঘটাতে হলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পেছনেই গল্পের দিকে তাকাতে হবে। সেই গল্পকে যে যত বেশি নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারবে, সে তত বেশি সফলকাম হবে ও দিনশেষে বিজয়ের মুখ দেখবে। আমরা তো সেই জাতিরই উত্তরসূরি। আমরা সেই চেতনার অংশ। আমাদের রক্তে মিশে আছে সেই শহীদদের, সেই গাজিদের বীরত্ব সাফল্যগাথার গল্পে। আর তারুণ্য দীপ্তির আন্দোলন হবে সব অন্যায়–দুর্নীতি ও দুঃখ–কষ্টের বিরুদ্ধে। সমাজে কত অন্যায়–অবিচার, কত কুসংস্কারে নিমগ্ন আছে জাতি। নিপীড়িত ও অসহায় মানুষের কষ্ট ও দুর্দশার কথা এখনো আমাদের কানে কি পৌঁছায় না? ভাবতে অবাক লাগে আমরা কি সেই মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরি? আমরা কেন সমাজের খবর রাখি না, অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই না? তাহলে আমাদের মাঝে কিসের অভাব? কেন এই স্বাধীন দেশে দুঃখ-দুর্দশা ও অন্যায়–অবিচার? কেন আমাদের চেতনাকে আমরা সীমাবদ্ধ রেখেছি। শুধুমাত্র বিজয় দিবসে নয়, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের সাফল্য চেতনা সারা বছর আমাদের আঁকড়ে ধরে রাখতে হবে। তারুণ্য দীপ্তিকে ছড়িয়ে দিতে হবে নবীন প্রজন্মের শিরা–উপশিরায়। প্রতিটি নিশ্বাস-প্রশ্বাস যেন বিজয় আবেশে তারুণ্য দীপ্তিতে উচ্চারিত হয় সেই মূলমন্ত্র ‘জয় বাংলা ।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments