September 19, 2024
সারাদেশ

দিনাজপুরে সফল উদোক্তা খামারী যুব নারী জেসমিন

দু"টি থেকে ১'শ গরু কোটি টাকার সম্পদ॥
ফুলবাড়ী, দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে জেসমিনের বাড়ি। ২০০৫ সালে মাত্র দুটি গরুকিনে বাড়িতেই পালন শুরুকরেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর তাঁর খামারের আয়তন বেড়েছে বহুগুণে। তাঁকে দেখে এখন আশপাশের অনেকেই গরুপালন করছেন। তাঁর কাছে পরামর্শ নিতে আসছেন কেউ কেউ। সম্প্রতি প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে জেসমিনের এলাকাটিকে ‘দুগ্ধপল্লি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।বিরামপুরের কাটলা বাজার থেকে চার কিলোমিটার গেলেই রাস্তার পাশে চোখে পড়বে ‘জেসমিন ডেইরি ফার্ম’ লেখা একটি সাইনবোর্ড। ১১৫ শতক জমির ওপর আধুনিক পদ্ধতিতে খামারটি তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বসানো হয়েছে ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা। দৈনিক ২৫০ লিটারের মতো দুধ পান। খামার থেকে প্রতি মাসের খরচ বাদ দিয়ে প্রায় লাখ টাকা আয় হয়।সম্প্রতি জেসমিনের খামার ঘুরে দেখা যায়, ঝকঝকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খামার এলাকা। একদিকে খড় কাটার মেশিনে খড় কুচি করছেন শ্রমিকেরা। কেউ খইল-ভুসি-ধানের কুঁড়া দিয়ে খাবার প্রস্তুত করছেন। গরুগুলোকে গোসল করাতে ব্যস্ত দুজন। জেসমিন আরা জানান, খামারে ফ্রিজিয়ান, হলস্টেইন ও দেশি জাতের গরুআছে। এর মধ্যে মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে ২২টি গরু, দুধ দিচ্ছে ২০টি গরু। দৈনিক ২৫০ লিটারের মতো দুধ পান। খামারসহ সবকিছু থেকে প্রতি মাসের খরচ বাদ দিয়ে প্রায় লাখ টাকা আয় হয়।কীভাবে এমন চিন্তা মাথায় এল? জানতে চাইলে জেসমিন আরা বলেন, তাঁর শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা ছিল। তবে উচ্চমাধ্যমিক শেষে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। ২০০৪ সালে বিয়ে হয় ফুলবাড়ী উপজেলার আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এরপর কিছু একটা করার ভাবনা থেকেই ২০০৫ সালে গরুপালন শুরুকরেন। এরপর দুটি গরুকিনে খামার শুরুকরেন। এভাবে ছয়টি গরুহয়। এর মধ্যে স্নাতক পাস করেন তিনি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে গরুপালনের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। ব্যাংক থেকে কিছু টাকা ঋণও নেন।বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে স্বামীর ৪০ শতক জমিতে খামার করার সিদ্ধান্ত নেন। খামারের আয় বাড়ার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে ৭৫ শতক জমি কিনেছেন। খামারসংলগ্ন পুকুরের পাশাপাশি আরও তিনটি পুকুর লিজ নিয়ে মাছও চাষ করছেন। বর্তমানে খামারে সাতজন কর্মচারী কাজ করছেন। খামারি হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছেন জেসমিন আরা। পৃথকভাবে কয়েকবার উপজেলা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে ‘শ্রেষ্ঠ খামারি’ হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন।খামার ও সংসার একসঙ্গে সামলান কীভাবে, জানতে চাইলে জেসমিন বলেন, ‘খুব যতœ করি গরুগুলোর। ভোরে ঘুম থেকে উঠি। রান্নাবাটি, ঘরদোর পরিষ্কার করে খামারে চলে যাই। দুপুরে আসি। এরপর বিকেল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত থাকি। দিনের বেশির ভাগ সময় সংসারের কাজের পাশাপাশি খামারেই কাটে।’দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় জেসমিন আরার খামার। খামারের পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি হাঁসও পালন করা হচ্ছে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘স্ত্রীর আগ্রহ দেখে আমিও সহযোগিতা করছি। অনেকেই খামার দেখতে আসছেন। ওকে দেখে এলাকার অনেকেই খামার করছেন। জোতবানী ইউনিয়নে প্রায় সবার ঘরে গরুআছে। গ্রামের নারীরা নিজ উদ্যোগে স্বাবলম্বী হচ্ছেন, এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, জেসমিন পরিশ্রম করে এত দূর এসেছেন। প্রাণিসম্পদ কার্যালয় খামারে গরুর সব ধরনের টিকা প্রদান, কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছে। জেসমিনকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এলাকার অনেকেই।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments