সারাদেশ

হরিজন জনগোষ্ঠীর প্রতি ভেদাভেদ-বৈষম্য বন্ধের দাবিতে রংপুরে সংবাদ সম্মেলন

রংপুরঃ আজ বুধববার ১১জানুয়ারি সকাল ১১টায় স্থানীয় সুমি কমিউনিটি সেন্টারে জাত-পাত,পেশা-ভাষা ও সংস্কৃতির কারণে হরিজন জনগোষ্ঠীর প্রতি ভেদাভেদ-বৈষম্য বন্ধের দাবিতে হরিজন অধিকার আদায় সংগঠন, রংপুর এর উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি সুরেশ বাসফোর। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা লিটন বাসফোর,কানাই বাসফোর,সবরন বাসফোর,কানাই বাসফোর,সহ-সভাপতি রাজু বাসফোর,সাধারণ সম্পাদক সাজু বাসফোরসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি সুরেশ বাসফোর বলেন আমরা হরিজন জনগোষ্ঠী যুগ যুগ ধরে দেশকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছি। মহান মুক্তিযুদ্ধে তথা দেশের সংকটময় সময়ে সর্বদা অন্যান্যদের মতো আমরাও সামনের কাতারে দাঁড়িয়ে লড়েছি কিন্তু বরাবর সেই দায়িত্বকে-ত্যাগকে-আমাদের শ্রমকে অবহেলার চোখে, দেখে আসছে প্রতিটি সরকার ও এই সমাজের বহুলাংশের মানুষ।দেশের স্বাধীনতার ৫০বছর অতিক্রম করলেও আজও আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে ও সামাজিকভাবে বৈষম্যের শিকার।তাই দেশের ১৭লক্ষ হরিজন জনগোষ্ঠী এখনও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমরা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক,সামাজিক- সাংস্কৃতিকসহ সকল ক্ষেত্রে অবহেলার শিকার।সমাজে এখনো জাত-পাত, পেশা-ভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতির কারণে আমাদের শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের লাঞ্চনা-নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে।আপনারা জানেন আজ হরিজন জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে,অনেকে এখন অ্যাডভোকেট - নার্স-শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত।কিন্তু এখনো বিরাট অংশ এই পরিচ্ছন্নতা পেশায় যুক্ত। তাই পরিচ্ছন্নতা পেশার প্রতি সামাজিক মর্যাদা তথা শ্রমিক হিসেবে হরিজনদের মর্যাদা দেয়া প্রয়োজন।আমাদের দেশে এই পরিচ্ছন্নতা পেশাকে ঘৃণা করলেও অনেক শিক্ষিত- সচেতন মানুষ বিদেশে গিয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন।দেশের সমস্ত সিটি কর্পোরেশন-পৌরসভাসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অহরিজনরা এ পেশায় কাজ করছেন।তাদের সাথে কোনরকম বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় না,তাদের হোটেলে প্রবেশে বাধা নেই, তাহলে আমাদের প্রতি এই বৈষম্য কেন? ভাবনার বিষয় হলো মানবিক সভ্যতার জমিন কতটা ক্ষয়িষ্ণু হলে জাত ভেদাভেদ একজন নিস্পাপ শিশুকেও লাঞ্চনা ও নিপীড়নের শিকার হতে হয়।আপনারা জানেন রংপুরে মৌবন হোটেলে ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জীবন বাসফোর বৈষম্যের শিকার হয়।যার প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলি।গত ২৩ নভেম্বর দ্যা ডেইলি স্টার পত্রিকায় এসেছিল মৌলভী বাজারের কুলাউড়াতে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ৭বছরের শিশু বীরা স্কুল ড্রেস পরিহিত অবস্থায় হোটেলের বাইরে বসে খাবার খাচ্ছে।১১ডিসেম্বর সান্তাহারে মিঠুন বাসফোর হোটেলের এক কর্মচারীকে স্পর্শ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে কর্মচারী তাকে মারধর করে,এক পর্যায় গরম তেলে পরে তার হাত ঝলসে যায়, যা স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন।অন্যদিকে ফেসবুকে লালমনিরহাটে এক হরিজন পরিবারকে হোটেলের বাইরে বসে খাওয়ার ছবিসহ পোস্ট দেখে গত ৪জানুয়ারি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, এমন ঘটনা মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনে প্রতিয়মান।আরো বলেছেন দেশ স্মার্ট বাংলাদেশে রুপান্তরের স্বপ্ন দেখছে,তখন দেশের যেকোনো প্রান্তে বৈষম্যের এমন অভিযোগ অনভিপ্রেত ও নিন্দনীয়।আমরা বহুকাল ধরে দেখছি, সমাজে হরিজন জনগোষ্ঠীর প্রতি সকল স্তরের মানুষ এই বর্ণবাদী আচরণ করছে।কিন্তু আজ পর্যন্ত এই বর্ণবাদী আচরণকে প্রতিরোধ করার জন্য বা বৈষম্য দূরীকরণের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।না হয়েছে সামাজিকভাবে সচেতনতার কাজ, না হয়েছে এই অন্যায় রুখতে আইনের প্রয়োগ।তাই আধুনিক যুগেও নানান শ্রেণী-পেশার মানুষের মাঝে হরিজন জনগোষ্ঠীর প্রতি ভুল চিন্তাভাবনা কাজ করে,যা পুরাতন দিনের ভাবনা।রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা অবহেলিত বলেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করতে পারছি না।গত বছর সরকারের আইন মন্ত্রণালয় "বৈষম্য বিরোধী বিল-২০২২" আইনটি সংসদে উত্থান করে পর্যবেক্ষণ জন্য পাঠিয়েছে। আমরা হরিজন-দলিত এই বৈষম্য বিরোধী বিল-২০২২ আইনটি আমাদের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে বিশেষ কোন ভূমিকা পালন করবে না বলে মনে করি।বরং নাগরিক হিসেবে বৈষম্যের শিকার হলে তাৎক্ষণিক যে প্রশাসনিক সহায়তা পাওয়া যায়,এই আইন এভাবে পাস হলে আমরা এর মধ্যে আরো আটকে থাকবো।যা আমাদের প্রতি আরেক রকম রাষ্ট্রীয় বৈষম্য। তাই বৈষম্য বিরোধী বিল-২০২২ আইনটি বাতিল করা দরকার। হরিজন জনগোষ্ঠীর প্রতি যে কোন বৈষম্যমূলক- বর্ণবাদী আচরণকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করে দ্রুত বিচার আইনের আওতায় বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।বহুকাল ধরে এই রাষ্ট্রকে সেবাদান করার পরও নাগরিক হিসেবে ভাবতে অবাক লাগে যে বাংলাদেশ জাতিসত্তা গেজেটে হরিজন জনগোষ্ঠী নাম নেই,জীবন-মান উন্নয়ন, শিক্ষা বিস্তারে, দক্ষ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হরিজন জনগোষ্ঠী প্রতি রাষ্ট্রের বিশেষ কোন পরিকল্পনা দেখিনি।আমাদের শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা ভিন্ন পেশায় কিভাবে যাবে তার কোন ব্যবস্থা দেখছি না।আমরা এক চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।আপনারা দেখবেন আমাদের হরিজন জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা নিজের স্বজাতির পরিচয় দিতে ভয় পায়।কখন যে কে কি বলে।সুইপার, মেথর বলে ঘৃণা করে,এই সংকোচ ও হীনমন্যতায় সমাজে সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে আমাদের ছেলেমেয়েরা বেড়ে উঠতে পারছে না।পাড়ায় পাড়ায় শিক্ষার হার বাড়ছে, তরুণ-যুবকরা মদ সেবনকে "না "বলছে।আমরা হরিজন অধিকার আদায় সংগঠন, রংপুর জেলা এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বলতে চাই রাষ্ট্রীয় বৈষম্য কমলেই সামাজিক বৈষম্য কমবে।অন্যদিকে এই সমাজে কিছু প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ আছেন যারা হরিজন জনগোষ্ঠীর জীবন-মান নিয়ে ভাবেন।আমরা চাই সমাজের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিকব্যক্তিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আমাদের পাশে দাড়াবেন।তাই এখন প্রয়োজন হরিজন জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণ ও জীবন-মান উন্নয়নে বিশেষ রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা গ্রহণ এবং অন্যদিকে সামাজিকভাবে হরিজন জনগোষ্ঠীর প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ ও ভুল চিন্তাভাবনা- মানসিকতা পরিবর্তন করা।রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে বৈষম্যের প্রতিবাদে আমরা দু'মাসব্যাপী "বৈষম্য বিরোধী" সামাজিক নানান কর্মসূচি পালন করেছি। এর ধারাবাহিকতায় আমরা হরিজন অধিকার আদায় সংগঠন, রংপুর জেলা আপনাদের মাধ্যমে সরকারের কাছে আমাদের দাবি তুলে ধরছি।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments