সারাদেশ

পাঁচ’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী গোপীনাথপুর মেলা শুরু

মওদুদ আহম্মেদ, আক্কেলপুর(জয়পুরহাট)প্রতিনিধিঃ
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে পাঁচ শত বছরের ঐতিহ্যবাহী গোপীনাথপুর মেলা শুরু হয়েছে। প্রতি বছর দোল পূর্ণিমাতে উপজেলার গোপীনাথপুরে এই মেলা বসে। ০৭ ই মার্চ সনাতন হিন্দু ধর্মের দোলযাত্রার মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক মেলা শুরু হয়েছে। মেলার প্রধান আকর্ষণ থাকে ঘোড়ার মেলা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিযোগীতার ঘোড়া ক্রয় বিক্রয়ের জন্য মেলায় আসে ক্রেতা বিক্রেতারা। ঘোড়ার দৌড় দেখার জন্য উৎসুক জনতা ভীর জমায় মেলায়। তাছাড়া গরু, মহিষ ক্রয় বিক্রয় মেলা শুরু হওয়ার পরবর্তী পাঁচদিন পর্যন্ত চলে।
ইতিহাস এবং উইকিপিডিয়ার সূত্র অনুযায়ী জানা যায়, প্রায় পাঁচ শত বছর পূর্বে তৎকালীন সময়ে নন্দিনী প্রিয়া নামক এক সাধক বরেন্দ্র এলাকায় বর্তমানে উপজেলার গোপীনাথপুর থেকে ১কিঃমিঃ উত্তরে গভীর জঙ্গলে নদীর ধারে একটি মন্দির স্থাপন করে পূঁজা আর্চনা শুরু করেন। তৎকালীন বাংলার শাসক নবাব আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এই এলাকার গোপীনাথপুরে বেড়াতে আসেন। গহীন বনের ভীতরে ওই সাধকের সাথে তার সাক্ষাত হয় এবং তার আতিথিয়তা গ্রহন করেন। এখানে তার আতিথিয়তায় মুগ্ধ হয়ে নবাব ওই সাধককে তাম্রফলকে লিখে পূর্ণ গোপীনাথপুর ও গোপালপুর মৌজার সম্পত্তি দেবোত্তর হিসেবে দান করে দিয়ে যান, যার উৎস থেকে প্রতি বছর দোল যাত্রা উপলক্ষে মেলা উৎসব চলে আসছে।
পাঁচ শত বছরের পুরানো এই মেলা শুরু থেকেই ঘোড়ার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে মেলায় ভুটান, নেপাল, ভারত, পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে উন্নত জাতের ঘোড়া আসতো। বর্তমানে রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঘোড় সওয়ারি ও ঘোড়া মালিকরা এ মেলায় ঘোড়া ক্রয় বিক্রয়ের জন্য আসেন।
স্থানীয় ও মেলা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর দোল পূর্ণিমায় ঐতিহ্যবাহী এই মেলা বসে। দোল শুরুর আগে থেকেই মেলায় বিভিন্ন দোকান পাট আসতে শুরু করেছে। সারা দেশের ঘোড়া বেচা কেনার একমাত্র মেলা এটি। মেলাটি প্রায় মাসব্যাপী চলে। তবে এবার মেলায় বিনোদন মূলক যাত্রা, সার্কাসের অনুমোদন দেয়নি প্রশাসন। মেলায় ঘোড়া, গরু, মহিষ, কাপড়, জুতা, ছাতা, গৃহস্থালি সামগ্রী, মসলা, কাঠের ও প্লাস্টিকের আসবাব পত্র, কম্বল, মিষ্টান্ন সহ নানা রকমের দোকানপাট বসেছে। মেলায় দুই থেকে চার কেজি ওজনের মাছ আকৃতির মিষ্টান্ন’র আকর্ষণ ধরে রেখেছে দির্ঘ দিন থেকে। এসব দোকান রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মেলায় আসে। তাঁরা দোলপূর্ণিমা শুরুর দুই দিন আগেই এখানে এসে দোকানঘরের বরাদ্দ নেন।
বগুড়ার শেরপুর থেকে আসা ঘোড়া বিক্রেতা দুলাল প্রামানিক বলেন, ‘প্রতি বছর এই মেলার জন্য আগ্রহে থাকি। এবার তিনটি ঘোড়া নিয়ে এসেছি। প্রতি বছরই কম বেশি লাভ হয়। তবে এবার এখনো ঘোড়া বিক্রয় হয়নি’।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে আসা এক ঘোড়া বিক্রেতা বলেন, ‘আমি গত বারেও এই মেলায় ঘোড়া নিয়ে এসেছিলাম। গতবার খুব ভাল লাভ হয়েছিল। এবার মেলায় ছোট বড় মোট নয়টি ঘোড়া নিয়ে এসেছি। আশা করছি এবারও ভাল লাভ হবে’।
গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গোপীনাথপুর মেলাটি এবার পাঁচ শত ১৫ বছরে পদার্পন করেছে। এটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম মেলা। এবার প্রশাসন ১৩ দিনের অনুমতি দিয়েছে। মেলায় কোন ধরনের অপ্রিতীকর ঘটনা যেন না ঘটে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সাথে সমন্বয় রেখে আমরা কাজ করছি’।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘গোপীনাথপুরের মেলাটি একটি প্রাচীন মেলা। এই মেলাকে ঘিরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য বিনোদনমূলক যাত্রা, সার্কাসের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কেউ কোন বিশৃঙ্খলা ঘটানোর চেষ্টা করলে কঠোর ভাবে দমন করা হবে। মেলাটি আমারা নজরদারির মধ্যে রেখেছি’।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments