সারাদেশ

নওগাঁয় র‍্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের নারী কর্মচারীর মৃত্যুর অভিযোগ

নওগাঁ শহরের নওজোয়ান মাঠের সামনে থেকে আটকের পর র‌্যাব হেফাজতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনের (৪৫) মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 
জানা যায়, গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে আটকের পর গত শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই নারীর মৃত্যু হয়। সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অফিস সহকারী পদে কর্মরত ছিলেন।
র‌্যাবের দাবি, সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়েছিল।
নিহত সুলতানা জেসমিনের মামা ও নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ন্যায্যমূল্য হক (মন্টু) বলেন, ‘আমার ভাগ্নি বুধবার সকালে অফিস করার জন্য বাসা থেকে বের হন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নওজোয়ান মাঠের সামনে থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র‌্যাবের পোশাক পরা লোকজন তাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাকে কোন ক্যাম্প নেওয়া হলো এ ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ খবর নিয়ে দুপুর পৌনে ২টার পর জানতে পারি, সুলতানা নওগাঁ সদর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সেখানে গিয়ে দেখি র‍্যাবের লোকজন সেখানে অবস্থান করছে। সুলতানা কোনো কথাবার্তা বলতে পারছিল না। এরপর কিছুক্ষণ পর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। শুক্রবার সকাল মৃত্যু হলেও লাশ দেওয়া হয় গতকাল শনিবার বিকেলে। নামাজে জানাজা শেষে শনিবার রাতে তাকে নওগাঁ সরকারি গোরস্থানে দাফন করা হয়।
তিনি বলেন, সুলতানার সঙ্গে তার স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয় ১৭ বছর আগে। এরপর থেকে সে তার একমাত্র সন্তানকে অত্যন্ত কষ্ট করে লালন-পালন করে আসছে। নওগাঁ শহরের জনকল্যাণ এলাকায় একটা ভাড়া বাড়িতে থাকতেন জেসমিন। ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। সে ভূমি অফিসের একজন সামান্য কর্মচারী। এ পর্যন্ত কোনো দিন তাঁর বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতি কিংবা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ কেউ করেননি।
এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে ন্যায্যমূল্য হক গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা খুব শীঘ্রই পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবো।
সুলতানার ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার মা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। র‌্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে, যে কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।’
র‌্যাব-৫ রাজশাহী এর কোম্পানি কমান্ডার সিপিএসসি মেজর নাজমুস সাকিব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে পাওয়া আর্থিক প্রতারণার একটি অভিযোগ পাওয়া যায়। তার ব্যাংক হিসেবে অস্বাভাবিক টাকা লেনদেনের অভিযোগ ছিল। পরে তার ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করে আমরা তার সত্যতা পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে র‌্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়।
আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তৎক্ষণাৎ তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক ট্রিটমেন্টের পর চিকিৎসকেরা তাকে রাজশাহী নেওয়ার পরামর্শ নেন। এরপর তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয় এবং গত শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ট্রোক করে তার মৃত্যু হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে গতকাল শনিবার দুপুরে স্বজনদের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করা হয়।
নওগাঁ সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মৌমিতা জলিল বলেন, ওই নারীকে নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে আসাহলে প্রাথমিকভাবে তার হৃদরোগে আক্রান্ত হবার লক্ষণ পাওয়া যায়্ এ অবস্থায় তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।তিনি অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তার শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন ছিলো কিনা তা দেখা হয়নি।
জেসমিনের এক সহকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সুলতানা জেসমিন একজন সৎ ও ভালো কর্মচারী ছিলেন। একজন সরকারি কর্মচারীকে র‌্যাব কিভাবে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে তুলে নিয়ে গেল তা বোধগম্য নয়। বিষয়টি অন্যান্য কর্মচারীদের ও ভাবিয়ে তুলেছে। এই মৃত্যুর বিষয়টি সুষ্ঠ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা গণমাধ্যম কর্মীদের আরও জানান, আটকের পর ওই নারীকে র‌্যাবের কোনো ক্যাম্পে নেওয়া হয়নি। আটকের পর পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ হওয়ায় তাকে হাসপাতালে নেয়ার পর থেকেই তার পরিবারের লোকজন মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তার সঙ্গেই ছিল। নির্যাতনের যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক নয়।
তবে এই মৃত্যুর বিষয়ে এখন পর্যন্ত নওগাঁ সদর মডেল থানায় কোন অভিযোগ করা হয়নি বলে জানান থানার এস আই এনাম।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments