রাজনীতি

রংপুরে বিএনপির উপজেলা-পৌর কমিটিতে পদবঞ্চিত ত্যাগীরা, নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ

রংপুর অফিস॥
রংপুর জেলায় বিএনপির কার্যক্রমকে গতিশীল করতে জেলার আট উপজেলা ও ৩টি পৌ সভায় বিএনপি নতুন আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে দলটির জেলা সভাপতি-সম্পাদক।গত মঙ্গলবার রাতে জেলা আহবায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সব কমিটির ঘোষণা করা হয়।
এর পরেই কমিটির তালিকাসহ পদ-পদবীর বিষয়টি ব্যক্তিগত ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
বিভিন্ন উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই ত্যাগী ও দুর্দিনের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে অযোগ্য, নানা অপকর্মের সাথে জড়িত ও রাজনীতিতে সক্রিয় নয় এমন ব্যক্তিদের পদ দেয়ায় এমন মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এসব কমিটিতে অনেকে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও নির্যাতিত-ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করাও হয়েছে বলে কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছেন। এছাড়াও বদরগঞ্জ, পীরগাছা ও পীরগঞ্জ উপজেলায় একই ব্যক্তিরা বার বার শীষ পদ আখড়ে ধরে রাখেছেন। মিঠাপুকুর উপজেলা সদর, পীরগাছা, বদরগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভও অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বদরগঞ্জ, রংপুর সদর উপজেলা ও গঙ্গাচড়ায় পদ বঞ্চিতরা সভা করেছেন। বদরগঞ্জ পৌরসভার কমিটি নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে দুই পক্ষ।
ঘোষিত কমিটি গুলো হলো, রংপুর সদর, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, মিঠাপুকুর,পীরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ উপজেলা ও কাউনিয়ার হারাগাছ পৌরসভা, বদরগঞ্জ ও পীরগঞ্জ পৌরসভা।
নেতাকর্মীরা জানান, 'দুর্দিনে দলের জন্য কাজ করেছেন এমন ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে স্বজনপ্রীতি করে অদক্ষ ও অসাংগঠনিক দের কমিটির শীর্ষ পদ দেয়া হয়েছে। ঘোষিত এসব কমিটিতে অনেক ত্যাগী ও প্রবীণ নেতার স্থান হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের এপ্রিল পূর্বের কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে সাইফুল ইসলামকে আহবায়ক ও আনিছুর রহমান লাকুকে সদস্য সচিব করে রংপুর জেলা বিএনপির কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর পর থেকে তারা জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি গঠনে কার্যক্রম শুরু করেন। প্রতিটি উপজেলা ও পৌরসভায় জেলা নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে কর্মী সভা করা হয়। তবে কমিটি ঘোষণা না করে কর্মীসভার কয়েক মাস পর হঠাৎ করে মঙ্গলবার রাতের বেলায় জেলা আহবায়ক ও সদস্য সচিব স্বাক্ষরিত রংপুর সদর, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, মিঠাপুকুর,পীরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ উপজেলা ও কাউনিয়ার হারাগাছ পৌরসভা, বদরগঞ্জ ও পীরগঞ্জ পৌরসভার কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে রংপুর নগরীসহ জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যন্ত নেতাকর্মীরা মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা গেছে। অনেকেই মূল্যায়ন না পেয়ে নিষ্কিয় থাকারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়াও ত্যাগী ও সিনিয়রদের পদ মূল্যায়নে জোষ্ঠ্যতা মানা হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। সব মিলিয়ে নব ঘোষিত কমিটি নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে আসন্তোষ বিরাজ করছে।
দলীয় সুত্র জানায়, রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় সদস্য সচিব পদপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, উপজেলা যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শরিফুল ইসলাম ডালেস, অথচ তাকে কমিটিতে ৫ নং যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে। অথচ তিনি দীর্ঘদিন ধরে পীরগাছা উপজেলায় দলের জন্য নিবেদিত ভাবে কাজ করছেন। তার নেতৃত্বে বিএনপিও অঙ্গ সংগঠনের বৃহৎ একটি অংশ চলে। একই ভাবে মিঠাপুকুর উপজেলায় সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ খাজানুর রহমান খাজা, সাবেক যুগ্ম আহবায়ক সাজেদুর রহমান রানা, ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ তালুকদার, সাবেক ছাত্রদল সভাপতি সাদেকুল ইসলাম, শিল্পপতি ডা. মমতাজ হোসেন, আখতার হোসেন ও সাবেক স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি একেএম রুহুল্ল্যাহ জুয়েলকে শীর্ষ কোন পদে রাখা হয়নি। অথচ তারা আহবায়ক ও সদস্য সচিব পদ প্রত্যাশী ছিলেন। একই ভাবে পীরগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম সেবু মন্ডলকে বাদ দেয়া হয়েছে। তার স্থানে উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল আজাদকে পদ দেয়া হয়। রংপুর সদর উপজেলায় মিজানুর রহমান রন্টু, আজহার আলী, আব্দুল আজিজ খোকা, আব্দুল কাইয়ুম যাদু সহ অনেকে ত্যাগীরা পদ বঞ্চীত হয়েছে। গঙ্গাচড়া উপজেলায় বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আখেরুজ্জামান মিলনকে যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে। প্রতারণার মামলায় বর্তমানে জেল হাজতে থাকা বাস্তুহারা দলের সাবেক নেতা নাজমুল হুদাও যুগ্ম আহবায়ক পদ পেয়েছেন। কাউনিয়া উপজেলার বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিকে সদস্য পদে রাখা হয়। তার স্থানে সদস্য সচিব করা হয় একটি ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি মোজাহারুল ইসলাম বাবলুকে। অথচ এই উপজেলায় বিএনপিকে দীর্ঘদিন ধরে সু-সংগঠিত করে আসছেন তিনি। তরাগঞ্জ উপজেলায় সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানকে সদস্য করা হলেও কমিটি স্থান পাননি সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। একই অবস্থা রংপুর সদর, পীরগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায়। ঘোষিত এই সব কমিটি নিয়ে দলের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে। কেউ কেউ কমিটি বাতিল করে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের দাবি করেন। অন্যথায় গণপদত্যাগসহ নানা কর্মসূচীর হুশিয়ারিও দেন তারা।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একতরফা ভাবে জেলার আহবায়ক ও সদস্য সচিবের আর্শীবাদপ্রাপ্ত নেতাদের পদ দেয়া হয় বলেও জানা গেছে। যারা তাদের অনুগত ছিলেন, তারাই পদ পেয়েছেন। নিষ্কিয়ও পদ পেয়েছেন। আর যারা যোগ্য, ত্যাগী ও রাজপথে সক্রিয় এমন অনেককে বাদ দেয়া হয়। এর ফলে কেউ কেউ এইসব কমিটিকে পকেট কমিটি হিসাবেও আখ্যায়িত করছেন। অনতিবিলম্বে তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মী নিয়ে পুনরায় কমিটি গঠনের জন্য দলের হাইকমান্ডের কাছে জোর দাবি জানান তারা।
তাদের অভিযোগ, কমিটি গঠনের কথা ছিল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। সম্মেলনের মাধ্যমে। অথচ ঘোষণা করা হয়েছে প্যাড তান্ত্রিকভাবে। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নানা অপকর্মের সাথে জড়িত, অজনপ্রিয় ও অচেনা মুখকে পদ দেয়া হয়েছে। বর্তমান জেলা আহবায়ক, সিনিয়র যুগ্ম আহবায় ও সদস্য সচিব স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থের বিনিময়ে স্বজনপ্রতির মাধ্যমে নিজেদের অনুগতদের দিয়ে এমন কমিটি ঘোষণা করেন। এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীরা অসন্তোষ হয়েছেন। যার প্রভাব আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রম ও দলীয় রাজনীতিতে পড়তে পারে বলে তারা ধারণা করেন।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments