রাজনীতি

রংপুর সদর-৩ আসনে আ.লীগ-বিএনপি’র একাধিক, প্রার্থী নিয়ে দোটানায় জাপা

রংপুর প্রতিনিধি॥
রংপুরকে বলা হতো জাতীয় পার্টির দূর্গ। দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বাড়ি হওয়াতে এখানে দলটির সাংগঠনিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত। প্রতিটি নির্বাচনে দলটির মনোনীত প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। কিন্তুু সেই দুর্গে ফাটল ধরে বহুদিন আগেই। এরশাদের মৃত্যুর পর দলের অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। বিগত সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনে যার প্রতিফলন দেখা যায়। এর ফলে দিনকে দিন বদলে যাচ্ছে রংপুরের রাজনীতি। একসময় রংপুরের ছয়টি আসন জাতীয় পার্টির দখলে থাকলেও এখন রংপুর-১ ও রংপুর-৩ দলটির সংসদ সদস্য রয়েছে। বাকি ৪টি আসন আওয়ামী লীগের দখলে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য থাকায় স্থানীয়ভাবে দলে কিছুটা বিভেদ রয়েছে। তবে আগের চেয়ে এখানে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন বেশি শক্তিশালী হয়েছে। বেড়েছে নেতাকর্মীসহ সমর্থক ও ভোটার। রংপুরের ৬টি সংসদীয় আসনে দ্বাদশ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী দলের মনোনয়ন পেতে তৎপরতা শুরু করেছেন। এর বাহিরেও ইসলামী আন্দোলন, জাসদ, বাসদ, ওয়াকার্স পার্টি, গণফোরাম, কল্যাণ পার্টি, জাকের পার্টি, খেলাফত মসলিস, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, কংগ্রেস, এনপিপিসহ অন্যান্য দলগুলো মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। সব দলেরই নেতারাই নির্বাচন প্রার্থী দেয়া নিয়ে ভাবছেন। চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতে সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, রংপুর সিটি কর্পোরেশন ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-৩ আসন । স্বাধীনতার পর এ আসনটি জাপার দখলে রয়েছে । এ আসনের বর্তমান সাংসদ রয়েছেন প্রয়াত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেকরাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পুত্র রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এ আসনে পরপর চারবার এমপি নির্বাচিত হন। তার মৃত্যুর পর উপ নির্বাচনে তার পুত্র সাদ এরশাদ সাংসদ নির্বাচিত হন। তবে এবার দলীয় নেতাকর্মীরা চাইছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের প্রার্থী হোক। তবে তিনি নিজে এই বিষয়ে এখনো কোন কথা বলেননি। অনেকে মনে করছেন এই আসনটি কৌশলের কারণে জাপাকে ছেড়ে দেয়া হবে। তবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এবার সদর আসন ছাড় দিতে নারাজ। তবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের যদি শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হন তাহলে পাল্টে যেতে পারে সমীকরণ।
এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও সাবেক সাংসদ এ্যাড. হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপদেষ্টা চৌধুরী খালেকুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবির) পরিচালক অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম, রংপুর মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল এবং বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি এখানে দুর্বল হলেও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক শহিদুল ইসলাম মিজু ও মহানগর বিএনপির সদস্য তরুণ উদ্যাক্তা ইঞ্জিনিয়ার আশিকুর রহমান তুহিন, তবে বিএনপির একটি পক্ষ চাইছে এখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল প্রার্থী হোক। এছাড়াও গত দুই নির্বাচনের প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির সদস্য প্রয়াত মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়ার কন্যা রিটা রহমানও প্রার্থী হতে লবিং করছেন বলে দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে। সম্প্রতি ঈদ উপলক্ষে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী কাওসার জামান বাবলাও প্রার্থী হতে বিলবোর্ড-ফেস্টুন সাটিঁয়ে দোয়া চেয়েছেন। তবে একটি অংশ চাইছেন রংপুর বিএনপির প্রয়াত নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেনের স্ত্রী সুফিয়া হোসেনকে প্রার্থী করা হোক। তাহলে দলের ত্যাগী ও নিবেদিত পরিবারকে মূল্যায়ন করা হবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
এছাড়াও ইসলামী আন্দোলন থেকে এটিএম গোলাম মোস্তফা, বাসদ থেকে আনোয়ার হোসেন বাবলু, আব্দুল কুদ্দুস, জাসদ থেকে গৌতম রায়, সাব্বির হোসেন, খেলাফত মজলিস থেকে তৌহিদুল ইসলাম মন্ডল রাজু’র নাম শোনা যাচ্ছে। এর বাহিরেও এনপিপি, জাকের পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ প্রার্থী দিতে বলে শোনা যাচ্ছে।
এব্যাপারে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আবুল কাশেম বলেন, সারাদেশের মতো রংপুরেও উন্নয়নের জোয়ার বইছে। মানুষের জীবন যাত্রার দিনবদল হয়েছে। মানুষ ভাল মন্দ বুঝে। কোন আবেগ এবারের ভোটে স্থান পাবে না। রংপুর জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের দখলে রাখার জন্য তৃণমুলের নের্তাকর্মীরা মুখিয়ে আছেন । তারা দিনরাত দলের হয়ে কাজ করছেন।
রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব হাজ্বি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রংপুরে জাতীয় পার্টি আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালি। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি রংপুরের ৬টি আসনেই জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে।  
রংপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও কাকসুর সাবেক জিএস শহিদুল ইসলাম মিজু বলেন, বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহনের সম্ভাবনা খুবই কম রয়েছে। তারপরও দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহন করে তাহলে এবার রংপুরে বিএনপি আগের চেয়ে অনেক ভাল ফল করবে বলে তিনি আশাবাদি।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments