অপরাধ

সুন্দরগঞ্জে তিন বছর ধরে স্কুলে আসেন না শিক্ষক, নিয়মিত তুলছেন বেতন-ভাতা

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃগাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় হায়দার আলী নামে এক শিক্ষক তিন বছর ধরে স্কুলে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত তুলছেন বেতন-ভাতা। তিনি উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের উত্তর রাজিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি হায়দারের আত্মীয় হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে গত ১৪ মে সকাল সাড়ে ১০ থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত রাজিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অবস্থান করেও সহকারী শিক্ষক হায়দার আলীকে স্কুলে পাওয়া যায়নি। চলমান এসএসসি পরীক্ষার দায়িত্বেও নেই তিনি। ওইদিন শিক্ষক হাজিরা খাতায়ও তার অনুপস্থিতির চিত্র পাওয়া যায়।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হায়দার আলী সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে সোহেল রানা নামে একজনের কাছ থেকে দুই দফায় ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। পরে তিনি একটি নিয়োগপত্র সোহেল রানার হাতে ধরিয়ে দেন। সেই নিয়োগপত্র নিয়ে সোহেল চাকরিতে যোগদান করতে গেলে জানতে পারেন নিয়োগপত্রটি ভুয়া। ওই সময় সোহেল বাড়িতে ফিলে আসলে পরিবারের লোকজন হায়দার আলীর কাছে টাকা ফেরত চান। তিনি টাকা ফেরত দিতে দুই মাসের সময় নেন। দুই মাস পেরিয়ে গেলে হায়দার টাকা ফেরত না দেওয়ায় সোহেলের পরিবারের লোকজন স্কুলে গিয়ে বিষয়টি জানান।পরে স্কুলের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে হায়দার টাকা পরিশোধের জন্য আরও এক মাসের সময় নেন। সেই সময়ও পেরিয়ে গেলে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে সোহেলের পরিবারে লোকজন টাকার জন্য স্কুলে গেলে হায়দার স্কুলে আসা বন্ধ করে দেন। এমনকী তিনি সোহেলের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখাও করেন না, টাকাও ফেরত দেন না।এরপর বিষয়টি নিয়ে সোহেলের পরিবারের লোকজন প্রধান শিক্ষকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেন। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার দুইপক্ষকে চিঠি দিয়ে তার অফিসে ডাকেন। সোহেলের পরিবারের লোকজন উপস্থিত হলেও শিক্ষক হায়দার আলী উপস্থিত হননি। এমনকী এখন পর্যন্ত ওই চিঠির জবাবও দেননি। এছাড়া তিনি তিন বছর থেকে স্কুলেও আসেন না। কিন্তু তিনি নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, হায়দার আলী ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ছোট বোনের স্বামী এবং স্কুলের সভাপতি আবার প্রধান শিক্ষকের শ্যালক। হায়দার আলী স্কুলে না আসলেও প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে ওই প্রতিষ্ঠানের নাইটগার্ড সুলতান তার ছাপরহাটী ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে মাস শেষে হাজিরা খাতায় সই করে নিয়ে আসেন।উত্তর রাজিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বললো, দীর্ঘদিন ধরে হায়দার স্যার স্কুলে আসেন না। স্যারের ক্লাসগুলো অন্য শিক্ষকরা আজ একজন, কাল আরেকজন এভাবে নেন। এতে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে।তিন বছর ধরে স্কুলে না এসেও বেতন-ভাতা উত্তোলন করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতদিন মানবিক কারণে বেতন-ভাতা দিয়েছি। আগামী মাস থেকে তার আর দেওয়া হবে না।
উত্তর রাজিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি চৌধুরী মো. সাফিউল বারী লিয়াকত বলেন, সহকারী শিক্ষক স্কুলে না আসলে তার বিরুদ্ধে সরাসরি কোন অ্যাকশন নেওয়ার সুযোগ নেই। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হলে আইন মেনেই নিতে হবে। তাতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মমিন মণ্ডল বলেন, অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাইবান্ধা জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. রোকসানা বেগম বলেন, তিন বছর ধরে স্কুলে অনুপস্থিত থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ অনুপস্থিত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হবে।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments