December 03, 2023
পড়াশুনা

“জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়” সাত মাসেও উন্নয়ন ফির টাকা দেওয়া হয়নি- বিপাকে বিভাগগুলো

 মোল্লা তানিয়া ইসলাম তমাঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোকে প্রশাসন থেকে সাত মাসেও উন্নয়ন ফির টাকা দেওয়া হয়নি। এ জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম চালাতে আর্থিকভাবে হিমশিম খাচ্ছে বিভাগগুলো। সাধারণত নতুন ব্যাচে শিক্ষার্থী ভর্তির পরপরই উন্নয়ন ফির টাকা বিভাগগুলোকে দেওয়া হয়। এবারের অর্থাৎ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোর সভাপতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভর্তির সময় বিভাগের উন্নয়ন ফি হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নেওয়া হতো । কিন্তু ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ফারজানা ইসলামের সময় শিক্ষার্থীরা বিভাগ উন্নয়ন ফি বাতিলের দাবি জানান । তাঁদের আন্দোলনের মুখে সে নিয়ম বাতিল করে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই উন্নয়ন ফি ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রির আয় থেকে দেওয়া শুরু করে প্রশাসন । ২০১৯-২০, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এই উন্নয়ন ফি দেওয়া হলেও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে এখনো দেওয়া হয়নি । এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ রাশেদা আখতার বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা থেকে যা আয় হয়, তার ৪০ শতাংশ ইউজিসিকে দেওয়া হয়। বাকি ৬০ শতাংশ থেকে সমস্ত খরচ বহন করে বিভাগের উন্নয়নের ফি–ও দেওয়া হয়। এ বছরও উন্নয়ন ফির টাকা দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। আমার কাছে ফাইল এসেছিল, আমি সই করে দিয়েছি। আশা করছি, অতি দ্রুত বিভাগগুলো টাকা পেয়ে যাবে।’ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ এই উন্নয়ন ফি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন বিভাগের সভাপতিরা। দর্শন বিভাগের সভাপতি আনোয়ারউল্লাহ ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, ‘উন্নয়ন ফি না পেয়ে আমাদের বিভাগের অবস্থা বেহাল। আমরা কাজ করতে পারছি না। একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একাডেমিক দিকে নজর নেই। উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, সহ-উপাচার্যদের দপ্তর ঠিকভাবে চলছে; কিন্তু বিভাগগুলোর কী অবস্থা সেদিকে তাঁদের কোনো খেয়াল নেই। আনোয়ারউল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘এই বিভাগ উন্নয়ন ফির টাকা আসে ভর্তি পরীক্ষায় ফরম বিক্রির আয় থেকে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি করে ১৯ কোটি টাকা আয় করে যথাসময়ে বিভাগের উন্নয়নের জন্য ফি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ফরম বিক্রির ২২ কোটি টাকা পাওয়ার পরও এখন পর্যন্ত উন্নয়ন ফি দিতে পারছে না। এই টাকা কোথায় যায়? মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সভাপতি মো. সালেকুল ইসলাম বলেন, ‘পরপর দুবার বিভাগের উন্নয়ন ফি যথাসময়ে দেওয়া হলেও এ বছর তা দেওয়া হয়নি। আমরা কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টিতে সেটা আনার চেষ্টা করেছি। এই টাকা না পেয়ে আমাদের বিভাগ চরম অসুবিধায় আছে। আমাদের পাঁচ কোটি টাকা দামের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আছে, যেগুলো বিদেশ থেকে উপহার হিসেবে আমরা এনেছি। সেগুলোও নষ্ট হচ্ছে। টাকার অভাবে সেগুলো দেখভাল করতে পারছি না। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিভাগগুলোতে ‘উইকেন্ড মাস্টার্স’ চালু আছে, তারা উন্নয়ন ফির এই টাকার বিষয়ে ততটা আগ্রহী নয়। তবে যেগুলোতে নেই, তারা এই টাকার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করেছে।উন্নয়ন ফির টাকার জন্য গত মার্চে কলা ও মানবিকী অনুষদের নয়টি বিভাগের সভাপতিরা উপাচার্য বরাবর একটি আবেদন জমা দেন। এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের সভাপতি শামীমা সুলতানা বলেন, ‘আবেদনে আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিভাগ উন্নয়ন ফি দেওয়ার জন্য উপাচার্যকে বলেছিলাম। তবে আমরা এখনো ওই ফি পাইনি।’
জানতে চাইলে উপাচার্য নূরুল আলম বলেন, ‘মার্চে কলা ও মানবিকী অনুষদের কয়েকজন সভাপতি বিভাগ উন্নয়ন ফির জন্য আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁরা একটি আবেদন দিয়ে গেছেন। বিভাগগুলো যেন শিগগিরই উন্নয়ন ফি পেয়ে যায়, সেই চিন্তা আমরা করছি। কবে নাগাদ দিতে পারব, নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়, তবে যেকোনোভাবে ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments