সারাদেশ

সুন্দরগঞ্জে মাকে দেখে না কোন সন্তান

মাকে দেখে না তিন ছেলের কেউ-ই। তরিতরকারি না থাকায় মীরগঞ্জ বাজারে গিয়েছিলেন তা কিনতে। আর এটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়াল মা সুফিয়ার বেগমের। মায়ের এ বাজার খরচ করার কথা জানতে পেরে মায়ের মুখ আর দেখবেন না বলে মায়ের বসতঘরের সামনে বেড়া দেওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তারাপুর ইউনিয়নের চাচিয়া মীরগঞ্জ গ্রামের চরকের হাট গ্রামের শফিকুল ইসলাম। মায়ের বসতঘরের সামনে সন্তানের এমন বেড়া দেওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করাসহ বেজায় চটেছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, বছর পাঁচেক আগে লুৎফর রহমান নামে এক প্রবীণ শিক্ষক মারা গেলে তার ৭০ বছরের বৃদ্ধা স্ত্রী সুফিয়া বেগম তিন ছেলেকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন একই বাড়িতে। তিন ছেলেরই বিয়ের পর বনিবনা না হওয়ায় মা সুফিয়া বেগমসহ পৃথক বাস শুরু হয় তাদের। মেঝ ছেলে মোস্তফা ও ছোট ছেলে মতিউর বাড়িও করে আলাদা আর বাড়িতেই থেকে যায় বড় ছেলে শফিকুল।
স্থানীয়রা বলছেন, বছর তিনেক থেকেই আলাদা খান মা সুফিয়া বেগম। তিন ছেলে খরচ দেওয়া তো দূরে থাক, কোনো খোঁজ খবরও রাখেন না তারা। এর আগে ছেলেরা মার ডাংও করেছে ওই মাকে। বিয়ে হয়ে যাওয়া চার মেয়ে যা দেন তা দিয়েই কোনো মতো কেটে যায় সুফিয়া বেগমের দিনকাল। তবুও সন্তানদের প্রতি কোনো অনুযোগ নেই মায়ের।
গেল কয়েকদিন আগে বাড়িতে কোনো তরিতরকারি না থাকায় একটু বেশি করে মরিচ, পেঁয়াজ, আলুসহ বিভিন্ন দরকারি পণ্য কিনতে গিয়েছিলেন মীরগঞ্জ হাটে কমদামে পাওয়া যাবে বলে। পরিধানও করেছিলেন বোরকা ও হিজাব। বাজারের কর্ণারে দাঁড়িয়ে স্থানীয় এক ভাতিজার মাধ্যমে পণ্যগুলো কিনে নিয়ে ফিরে আসেন বাড়িতে। কিন্তু বড় ছেলে শফিকুল ইসলাম তা জানতে পেরে রাতে গালাগাল করেন। শাশুড়ী পর্দার সাথে খরচ করতে গিয়েছিলেন এমন কথা বলতেই স্ত্রীকেও মারধর করে শফিকুল। পরে সাতসকালে উঠেই মায়ের মুখ আর দেখবেন না সাফ জানিয়ে ঘরের সামনে টিন দিয়ে বেড়া দিয়ে দেন তিনি। দেখা যায়, ছেলেদের বাড়িতে বিদ্যুৎ ও সিসি ক্যামেরা থাকলেও মায়ের ঘরে নেই সেই সুবিধা।
এদিকে ঘরের সামনে বেড়া দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে মা সুফিয়া বেগম স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামকে জানালে সমস্যা সমাধানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে বসেন তিনি। ক্ষমা চাইতে বলেন মায়ের কাছে। কিন্তু বড় ছেলে শফিকুল ক্ষমা না চেয়ে বরং মায়ের বক্তব্যকে এডভার্টাইজমেন্ট বলে অবিহিত করলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন চেয়ারম্যানসহ অন্যরা।
মায়ের সাথে সন্তানের এমন কর্মকান্ড সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদ, আমিনুল ইসলাম ও সাবেক মেম্বার হায়দার আলী। তারা বলছেন, “যাক গ্রামের সব মানুষ শ্রদ্ধা করে তাক কেমন ছেলেরা আটে চাইরে ডাংগায় বেহে! দেশেত কি কোনো বিচার আচার নাই? ইগল্যার অতিরিক্ত শাস্তি দেওয়া দরকার।”
আল্লাহ সন্তানদের হেদায়েত দান করুক জানিয়ে মা সুফিয়া বেগম বলেন, “মেঝ ছেলে মোস্তফার বউ এর আগে মারডাং করে ব্লাউজ ছিঁড়ে দিয়েছে। আর কেউ খোঁজ খবর নেয় না বলে তরিতরকারি কেনার জন্য মীরগঞ্জে গিয়েছিলাম। বড় ছেলে জানতে পেরে গালাগাল করে ঘরের সামনে বেড়া দিয়েছে। আরøাহ ওদের বুজ দান করুন।”
মায়ের সাথে সন্তানের এমন দুর্ব্যবহারে দুঃখ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, “ মায়ের ঘরের সামনে ছেলে বেড়া দিয়েছে জানতে পেরে আমি সমাধান করতে স্থানীয়দের নিয়ে বসেছিলাম। বড় ছেলেকে বলেছিলাম মায়ের নিকট মাফ চাইতে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, মাফ তো চাই ই নি, বরং সবার সামনে সে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে।”
বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানও। তিনি বলেন, “অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নিব। তারপরও আমি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে দেখছি। এরপর বিধবা বা বয়স্ক ভাতা লাগলে তাও করে দিবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।”

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments