স্বাস্থ্যসেবা

কর্মস্থলে থাকেন না তারাগঞ্জে কমিউনিটি ক্লিনিকের এমএইচভি’রা

সুমন আহমেদ,তারাগঞ্জ প্রতিনিধি :
রংপুরের তারাগঞ্জে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার (এমএইচভি) দের বিরুদ্ধে কর্মস্থলে না থেকেও সম্মানি ভাতা উত্তোলনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম।
তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কাযার্লয় সূত্রে জানা যায়, “কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ারের(সিবিএইচসি) আওতায় ২০১৮ সালে ২৭ মে তারাগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ১৫ টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ৯১ জন মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার(এমএইচভি) নিয়োগ দেওয়া হয়। এমএইচভিদের সম্মানি বাবদ ভাতা ধরা হয় মাসিক ৩ হাজার ৬০০ টাকা।
নিয়ম অনুযায়ী এমএইচভিদের কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি এর অধিনে নির্ধারিত ব্লকে উপস্থিত থেকে জনগনের স্বাস্থ্য সেবায় সহযোগিতা করার কথা থাকলেও কোন কোন এমএইচভি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তাদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না। এদের মধ্যে কেউ কেউ ঢাকায় কোম্পানীতে চাকুরী করে আবার কেউ এনজিও কর্মী হিসেবে অন্যত্র অবস্থান করছে। কারো বিয়ে হয়ে গেছে অন্য জায়গায় , কেউ আবার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ করে। মাসের পর মাস কর্মস্থলে না থেকেও তাদের উর্ধ্বতনদেরকে ম্যানেজ করে মাসিক সম্মানি ভাতা নিয়মিত উত্তোলন করে যাচ্ছেন। তারাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিক সরেজমিনে ঘুরে এমন নানা রকম অনিয়মের চিত্র খুজে পাওয়া গেছে।
উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নে অবস্থিত রহিমাপুর চাকলা কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে সিএইচসিপি সেতারা বেগমকে এমএইচভি”রা কর্মস্থলে বা ব্লকে আছে কি না জানতে চাইলে,তিনি আমতা আমতা করে বলতে থাকে, ওরা তো নিয়মিত আসে না। কেউ আছে আবার কেউ নেই। এর মধ্যে ভরত চন্দ্র সরকার জয়পুরহাটে আছে। মুটোফোনে ভরত চন্দ্রের সাথে কথা হলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, আমি জয়পুরহাটে একটি এনজিওতে কাজ করি। ক্লিনিকে থাকবো কি করে। আমার সিএইচসিপি ও ইনচার্জ লোহানী স্যারতো সবই জানে। একই অবস্থা হাজিরবাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মোস্তফাজামানের। তিনিও ঢাকায় একটি কোম্পানীতে কর্মরত আছেন। তারও একই সুর লোহানী স্যারকে বলেই তো চাকুরীতে আসছি। একই ক্লিনিকের (হাজিরবাজার) মারুফা খাতুন ৬ মাস ধরে ক্লিনিক বা ব্লকে নাই। মুটোফোনে তার সাথে যোগাযোগ করলে মারূফা বলেন,আমার ৩ মাসের বাচ্চাকে নিয়ে কাজ করবো কিভাবে। আমি তো অফিসে স্যারকে বলে ছুটি নিয়েছি।একই রকম বিষয় হাড়িয়ারকুঠি মধ্যপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বম্পা রানীর। তারও ২ মাসের বাচ্চা। সৈয়দপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের জামেদুল ইসলামও ৮/৯ মাস ধরে নাই। সেও ঢাকায় একটি গার্মেন্টস কোম্পানীতে কাজ করে। আরো ভয়াবহ অবস্থা হাতিবান্দা কমিউনিটি ক্লিনিকে। সেখানে কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবন নিমার্নাধীন এবং প্রায় এক বছর ধরে সিএইচসিপি না থাকায় কোন এমএইচভি কাজ করা তো দুরের কথা ক্লিনিকের আসে পাশেও যায় না।
তেমনি কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না মেনানগর মাটিয়ালপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের জয়া রানী। তার বিয়ে হয়ে গেছে অন্যত্র। দক্ষিন কুর্শা,ডাঙ্গাপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিমা আক্তার, চিলাপাক মাটিয়াল পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের মোস্তাফিজার, শাহিনুর, হাজিপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের নাজমুন্নাহারসহ উপজেলার ১৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রায় ২০/২২জন এমএইচভি কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্র এর স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও এমএইচভি”দের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইনচার্জ আওরঙ্গজেব লোহানী বলেন, কে ক্লিনিকে আছে বা কে নেই তা আমি বলতে পারবো না সিএইচসিপিরা বলতে পারবে।তারা তাদের লিডার।’ আপনি তাদের ইনচার্জ আর সকল অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধেই জানতে চাইলে তিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলেন, আমি তো অত কিছু বলতে পারবো না, আপনারা টিএইচও স্যারের কাছে বসেন।
তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. নীল রতন দেব বলেন, এমএইচভিদের কর্মস্থলে না থাকার অভিযোগ অনেক আগে থেকে। আমি নিজেও বেশ কয়েকটি ক্লিনিকে গিয়ে তাদের বেশ কয়েকজনকে অনুপস্থিত পেয়েছি । যারা অনুপস্থিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কেউ কাজ না করে সন্মানি পাবে তা হবে না।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments