খেলা
পীরগঞ্জ ফুটবল একাডেমির লিয়ন ব্রাজিল যাচ্ছেন!
পীরগঞ্জ ফুটবল একাডেমির কৃতি খেলোয়াড় দরিদ্র পরিবারের লিয়ন প্রধান ফুটবল খেলায় প্রশিক্ষণ নিতে ব্রাজিলে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ ক্রীড়া পরিদপ্তরের সহোযোগিতায় তিনি ওই প্রশিক্ষণে যাচ্ছেন। আগামী মে মাসে দুই মাসের প্রশিক্ষণে তিনি অংশ নিবেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট, বালক (অনুর্ধ-১৭)-২০২১ এর প্রতিভাবান ৪০ জন খেলোয়াড়ের বিকেএসপিতে ২ মাসব্যাপী উন্নত প্রশিক্ষণ থেকে ব্রাজিলে অধিকতর উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ১১ জনকে বাছাই করা হয়। এরমধ্যে ফুটবল মাঠে ফরোয়ার্ড খেলোয়াড় হিসেবে পীরগঞ্জের লিয়ন প্রধান রয়েছেন। সেইসাথে আরও ৪ জন খেলোয়াড়কে অতিরিক্ত হিসেবে বাছাই করা হয়েছে। গত ৪ এপ্রিল ক্রীড়া পরিদপ্তর থেকে খেলোয়াড়দের নামের চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহনের জন্য ওই খেলোয়াড়রা আগামী মে মাসের শেষের দিকে ব্রাজিলে দুই মাসের প্রশিক্ষণে যাবেন। লিয়ন প্রধান বিকেএসপিতেও ভর্তি হয়ে খেলছেন। তিনি পীরগঞ্জ সরকারি শাহ আব্দুর রউফ কলেজে এইচএসসি'র দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। পীরগঞ্জ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের ধনশালা গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও মাতা খাদিজা বেগমের একমাত্র ছেলে সন্তান। লিয়নের এক বোন রয়েছে। বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, বসতভিটা ছাড়া আমার জমি নেই। সংসারের খরচ চালাতে অন্যের জমিতে কাজ করি। আমার দুই ছেলেমেয়ের খাবারই দিতে পারি নাই। স্কুলে যাওয়ার জন্য লিয়ন একটা বাইসাইকেল চেয়েছিল। অভাবের কারণে সাইকেলটা দিতে পারি নাই। পায়ে হেটেই ক্লাস করেছে।লেখাপড়ার খরচও কস্ট করে চালাচ্ছি। অভাবের মধ্যে বড় হওয়া আমার ছেলেটাই ফুটবল খেলার জন্য বিদেশে (ব্রাজিল) যাচ্ছে। আনন্দে বুক ভরে গেছে বলেই দুচোখ ভরে তার চোখের পানি গড়িয়ে পড়া শুরু হয়।
পীরগঞ্জ ফুটবল একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কোচ মাহমুদুল হাসান সোহেল বলেন, তরুণ ও যুব সমাজকে মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে রক্ষায় পড়ালেখার পাশাপাশি খেলার বিকল্প নেই। ফুটবল খেলাকে ধরে রাখতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমাদের একাডেমির ক্ষুদে খেলোয়াড় লিয়ন প্রধান বিকেএসপিতেও ভর্তি হয়েছে। ফুটবল খেলায় প্রশিক্ষণ নিতে ব্রাজিলে সুযোগ পাওয়ায় লিয়নকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
লিয়ন প্রধান জানান, আমি বিকেএসপিতে ভর্তির সময় সারাদেশের প্রায় ১ লক্ষ খেলোয়াড়ের মধ্যে ৪০ জনকে বাছাই করা হয়। ওই ৪০ জনের মধ্যে আমি সুযোগ পেয়েছি। এবারে ক্রীড়া পরিদপ্তর থেকে ৪০ জনের মধ্যে ১১ জনকে বাছাই করা হলে আমিও সুযোগ পেয়েছি। পড়ালেখার পাশাপাশি আমি ফুটবল খেলে আসছি। কিন্তু পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে আমার কোন ইচ্ছাই পুরন হয়নি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া খেলার জন্যই বিদেশে যাচ্ছি। জীবনে প্রতিষ্ঠার জন্য সবার দোয়া চাই।
ওই একাডেমির প্রধান পৃষ্ঠপোষক তরুণ শিল্প উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, লিওনের জন্য সকলের কাছে দোওয়া চাই। ফুটবল খেলায় সে যেন পীরগঞ্জ তথা উত্তরবঙ্গের মুখ উজ্জল করতে পারে। আমাদের একাডেমির আরও ৩ জন ফুটবল খেলোয়াড় জাতীয়পর্যায়ে যেতে পারে। এজন্য বাছাইও হয়েছে।
যুব সমাজকে সুস্থ শরীরে গড়ে তুলতে নির্মল বিনোদন হিসেবে ফুটবল খেলার বিকল্প নেই বলেও তিনি জানান।
Comments