September 08, 2024
সারাদেশ

বাতাসে নড়বড় করে সিন্দুবালার ঝুপরি ঘর, কথা রাখেনি কেউ

গাইবান্ধাঃআমার ভাঙা ঘরে থাকতে ভয় লাগে। বাতাস হলেই নড়বড় করে। আকাশে মেঘ দেখলে দৌঁড় দিতে হয় অন্যের বাড়িতে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘর পাবার জন্যে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন কাজ হয়নি।

জমি আছে ঘর নেই- এ প্রকল্পের আওতায় আমাকে যদি একটি পাকা ঘর দিতেন তাহলে হয়তো শেষ বয়সে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের তরফবাজিত (দক্ষিণপাড়া) গ্রামের মৃত মনিন্দ্রনাথ সরকারের স্ত্রী সিন্দুবালা সরকার।

জানা গেছে, সাতবছর আগে মারা গেছেন সিন্দুবালার স্বামী। অন্যের বাড়িতে শ্রম দিয়ে কোনোমতে চলে তার জীবিকা। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে তার বসবাস। কুয়াশা-বৃষ্টি-বাতাসের আতঙ্কে ভাঙা ঘরে নির্ঘুম রাত কাটে তার । এ থেকে রেহাই পেতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের জন্য ঘুরেছেন প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে। সবাই প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও তার কপালে জোটেনি সেই কাঙ্খিত ঘর।  

সম্প্রতি সরেজমিনে জানা যায়, মাত্র কয়েক শতক জমি রেখে সিন্দুবালার স্বামী মারা গেছেন। এছাড়া নেই কোনো সহায়-সম্বল। ইতোমধ্যে বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়লেও জীবিকার তাগিদে ছুটতে হচ্ছে কৃষকের মাঠে বা অন্যের দুয়ারে। বেঁচে থাকার তাগিদে কখনো কৃষকের ফসলি জমিতে শ্রম বিক্রি, আবার কখনো অন্যের বাড়িতে করতে হয় ঝিয়ের কাজ। এভাবে জীবিকা নির্বাহ করে চলছেন সিন্দুবালা। এরই মধ্যে ওইসব কাজের জন্যও কদর কমেছে তার। কারণ একটাই, বার্ধক্য বয়স ও নানা অসুস্থতার কারণে এলাকার মানুষ তাকে এখন কাজের জন্য তেমনটা ডাকেন না। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে সিন্দুবালাকে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ওই বিধবার একমাত্র শোবার ঘরটিও জরাজীর্ণ অবস্থা। ছিদ্র টিনের চালায় লাগানো হয়েছে পলিথিন ও ট্রিপল। দিনের বেলায় বেড়ার ফুটো দিয়ে দেখা যায় সুর্য্যের আলো। রাতে চালার উপরে দিয়ে নজরকাড়ে আসমানের তারা। জোড়াতালি এ ভাঙা ঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে চলছেন সিন্দুবালা। এক মুঠো অন্নের যোগানে সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে রাতে ঠিকভাবে ঘুমাবেন কিন্ত চোখে আসে না ঘুম। শীতের কুশায় আর বৃষ্টি-বাতাসে আতঙ্কে একাকী নির্ঘুম রাত কাটে তার। বর্ষাকালে আকাশের মেঘ দেখলে দৌঁড় দিতে হয় অন্যের বাড়িতে। আর শীতকালে কনকনে বাতাস আর কুয়াশায় ভিজে যায় বিছানাপত্র। নানা প্রতিকুলতার মধ্যে ঝুঁকিপুর্ণ এ ঘরে বসবাসের কারণে বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধেছে সিন্দুবালার শরীরে। এসব রোগ নিরাময়ে নিয়মিত ওষুধ খাবেন, এমন সামর্থও নেই তার। একেবারই জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে কোনোমতে বেঁচে রয়েছে ওই ভাঙা ঘরটিতে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ ঘরেই একাকী বসাবাস করে চলছেন।  

সিন্দবালার ভাতিজা চঞ্চল সরকার বলেন, স্বামী হারিয়ে সিন্দুবালা এখন খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তার কোন সন্তানাদি নেই। একটি মাত্র ঘর তাও আবার ভাঙাচুরা। একদম বসবাস অনুপযোগি। তাই আমি একটি টিনসেড ঘর নির্মাণ করেছি, সেই ঘরে তাকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান শুভ (কাওছাড়া মন্ডল) মুঠোফোনে বলেন, সিন্দুবালার ঘর না থাকার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নেওয়া হবে।

সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রোকসানা বেগম বলেন, সিন্দুবালার বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা করা হবে।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments