September 16, 2024
সারাদেশ

দাম বাড়ালে সংকট, কমলে মজুত ফুরায় না

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃতরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ১২ লিটারের সিলিন্ডার ৯৯৯ টাকায় ভোক্তার হাতে ওঠার কথা। কিন্তু দেশের উত্তরের জেলা গাইবান্ধাসহ বেশিরভাগ এলাকায় এখনো বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১৫০ টাকায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেছে চলতি মাসের ৩ তারিখে। ওইদিন সন্ধ্যা থেকেই এ মূল্য কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ কারণে ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা লেগেই থাকছে।

গাইবান্ধার সাত উপজেলার বিভিন্ন গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই ভোক্তাদের কাছ থেকেও বেশি দাম নিতে হচ্ছে বলে দাবি খুচরা বিক্রেতাদের। এতে চরম ক্ষোভ জানিয়েছেন ক্রেতারা। তারা হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন প্রশাসনের।গ্যাসের সিলিন্ডার কিনে বাড়ি ফিরছিলেন গৃহিণী সুমাইয়া ইসলাম (৩৫)। বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন পলাশবাড়ী পৌর সহড়ে। এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ‘রান্না ওঠাতে গিয়ে দেখি গ্যাস শেষ। কাছেই এক দোকানে যাই সিলিন্ডার কিনতে। ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের দাম নিলেন ১ হাজার ২৫০ টাকা। দাম কমিয়ে এখন ৯৯৯ টাকা করা হয়েছে বলতেই ব্যবসায়ী বললেন আগের মাল এখনও শেষ হয়নি। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’যমুনা গ্রুপের ১২ কেজি ওজনের একটি গ্যাস সিলিন্ডার ১ হাজার ২৫০ টাকায় কিনে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন মমিনুল ইসলাম। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কী আর বলি ভাই। এর আগে একবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর কথা চলছিল। তখনও দাম বাড়ানো হয়নি। ভাবছিলাম আগেভাগে একটা সিলিন্ডার কিনে রাখি। কিন্তু ঘরে থাকা সত্ত্বেও সেবার আমাকে কেউ সিলিন্ডার দেয়নি। মাল নেই বলে বিদায় দিয়েছেন। আর এবার দাম কমেছে তো বলছেন, আগের মাল পর্যাপ্ত আছে সেগুলো এখনও শেষ হয়নি। এজন্যই তারা নাকি আগের দামে বিক্রি করছেন।ক্রেতা রায়হান মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুনেছি গ্যাসের দাম কমে ৯৯৯ টাকা হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে নিলো ১ হাজার ১৫০ টাকা। তাহলে কি দাম কমানোর নামে নাটক চলছে, নাকি কম দাম সাধারণ মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয়?ক্রেতাদের অভিযোগ, শুধু গ্যাসের ক্ষেত্রে নয়, যেকোনো পণ্যের দাম বাড়ানোর সংবাদ পাওয়া মাত্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বিক্রি বন্ধ করে দেন ব্যাবসায়ীরা। পরে দাম বাড়ার দিন থেকে তা বিক্রি শুরু করেন। আর যদি দাম কমে তাহলে মজুদ তাদের শেষ হয় না। চলে মাসের পর মাস। বিষয়গুলো কেউ যে একজন দেখবেন সেই মানুষটি নেই হাটবাজারে।

অপরদিকে একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা যমুনা, ওমেরা ও লাফস্ কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন ১ হাজার ১৫০ টাকা করে। পেট্রো ম্যাক্স বিক্রি করছেন ১ হাজার ১২০ টাকা ও ডেলটা বিক্রি করছেন ১ হাজার ১০০ টাকা করে বসুনধরা ১২৫০ টাকা। ডিলার পয়েন্ট থেকে বেশি দামে কেনার কারণে এ দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিলার কর্তৃক নিয়োজিত এক বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, রোববার থেকে ১২ লিটারের সিলিন্ডারে ২০ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ১০০ টাকায় দোকানগুলোতে দেওয়া হচ্ছে। দাম কমেছে জানি। কিন্তু আমাদের করার কিছুই নেই। যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয় সেভাবেই কাজ করতে হয়। কারণ আমরা তাদের কর্মচারী মাত্র।পেট্রো ম্যাক্স ও যমুনা এলপিজি সিলিন্ডারের ডিলার জীবন সাহা বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ক্রয় করতে না পারলে বিক্রি করবো কীভাবে। ১ হাজার ৮৫ টাকা দরে কোম্পানি আমার কাছে বিক্রি করেছে। আমি কীভাবে কমে দেবো?

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের গাইবান্ধা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ৯৯৯ টাকা নির্ধারণ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কিন্তু বাজারে কী অবস্থা তা জানা নেই। শুধু গ্যাস নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। বাজারে আরও অনেক প্রডাক্ট আছে। সেগুলোও দেখতে হয়।গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, ক্রেতাদের কাছে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বেশি নেওয়ার কোনো তথ্য পাইনি। এরপরও নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হবে।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments