September 20, 2024
রাজনীতি

ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন ও অসঙ্গতির অভিযোগ॥ বাতিলের দাবি

রংপুর জেলা সংবাদদাতা॥
রংপুর জেলা ছাত্রদলের বেহাল দশা। মোটর সাইকেল চুরি সিন্ডিকেটর সদস্য, চুরিসহ বিভিন্ন মামলার আসামী, অছাত্র ও মাদকাসক্ত সহ নানা অপরাধে সাথে জড়িতদের দেয়া হয়েছে পদ-পদবী। সম্প্রতি ঘোষিত এ জেলার আহবায়ক কমিটি গঠনে ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন, নানান অসঙ্গতি-সমন্বয়হীনতা ও অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। খোদ ছাত্রদলের জেলা কমিটির সদস্য সচিব হিসাবে যিনি দায়িত্ব পেয়েছেন সেই আফতাবুজ্জামান সুজন মোটর সাইকেল চোর সিন্ডিকেট দলের অন্যতম সদস্য। রয়েছে মাদকসেবন ও বিক্রির অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে ঠাকুরগাও, হারাগাছসহ বিভিন্ন থানায় রয়েছে একাধিক মামলা। কোন শক্তির জোরে বির্তকিত এমন একজনকে জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হলো তা নিয়ে দলটির নেতাকর্মীসহ অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। এতে বিএনপিসহ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিব্রত ও চরম ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। জেলার সিনিয়র যুগ্ম আহবায়কের নেই ছাত্রত্ব। মাদক সেবনসহ নানান অপক্রমের অভিযোগ করেছে দলটির নেতকার্মীরা। অভিযোগ উঠেছে জেলা বিএনপির আহবায়ক-সদস্য সচিবসহ শীর্ষ নেতারা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে এমন বিতর্কিত কমিটির সুপারিশ করেছেন। এসব অভিযোগ লিখিত আকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি, সম্পাদক ও বিভাগীয় নেতৃবৃন্দকে দেয়া হয়েছে।
গত ৯ জুন রংপুর জেলা ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত কিংবা ভেঙ্গে না দিয়ে হঠাৎ করে পূর্বের কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ নেওয়াজ জোহাকে আহবায়ক ও হারাগাছ পৌরসভা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আফতাবুজ্জামান সুজনকে সদস্য সচিব করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি।
জানাগেছে, সদস্য সচিব হিসাবে পদ পাওয়া আফতাবুজ্জামান সুজনের বাড়ি মাদকের রাজধানীখ্যাত হারাগাছ এলাকা। তিনি হারাগাছ পৌরসভা ছাত্রদলের সদস্য সচিব হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ঠাকুরগাও সদর থানায় ২০২১ সালের ২২ এপ্রিল মোটর সাইকেল চুরি সংক্রান্ত একটি মামলায় রয়েছে। যার নং ৩০/১৩২। পুলিশ তদন্ত করে ২০২১ সালে হারাগাছ বাধের পাড়া এলাকা থেকে চোরাই মোটর সাইকেল উদ্ধার করে। পরে তদন্ত করে জানাগেছে চোরাই মোটর সাইকেলটি ঠাকুরগাও থেকে চুরি করে আনা হয়েছে। পুলিশ ওই মামলার চাজর্শীটও দেয়। যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া মাদক সংক্রান্ত নানান অভিযোগ রয়েছে। তার ছাত্রত্ব নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, সদ্য ঘোষিত রংপুর জেলা ছাত্রদলের কমিটিতে দীর্ঘদিনের রাজপথের পরিচিত নেতাদেরর বাদ দিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ের কিছু নেতাকে রাখা হয়েছে। পদ-পদবী দেয়ার ক্ষেত্রে মানা হয়নি সিনিয়র-জুনিয়র কিংবা রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে। কেন্দ্র ঘোষিত ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়কের বিরুদ্ধে মাদক সেবন, ছাত্রত্ব নেই ও দলে পদ দেয়া নাম করে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে মোটর সাইকেল চুরি সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত থাকাসহ মাদক সেবন ও বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। একই সাথে কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছেন তাদের অনেককেই দলটির নেতাকর্মীরা চেনেন না। রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এতে রংপুর জেলা সহ বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে নেতাকর্মীরা চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি ঘোষিত রংপুর জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি ঘোষণার পর থেকেই চলছে সমালোচনার ঝড়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানাভাবে এই কমিটিতে পদপ্রাপ্ত সদস্য সচিবসহ অনেক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে নানান বির্তক দেখা দিয়েছে। শুধু বিএনপি কিংবা ছাত্রদল নয়, রংপুর জেলার কমিটি নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা হাস্যকর বক্তব্য দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতির জন্য জেলা বিএনপি শীর্ষ নেতৃবৃন্দের দায়ি করেছেন অনেকেই।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগের দুই নেতা জানান, রংপুরে ছাত্র রাজনীতির একটা ঐতিহ্য রয়েছে। বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। কারণ তাদের দলেতো গণতন্ত্র নেই। ছাত্রদলের নেতাদের ছাত্রত্ব কোথায়, টাকা হলেই তাদের ছাত্র সংগঠনেতো চোর, ছিনতাইকারি, মাদকসেবনকারি ও অপরাধীরা স্থান পাবে এটাই স্বাভাবিক। এর মাধ্যমে রংপুরের ঐতিহ্যময় ছাত্ররাজনীতি কুলষিত হলো বলে তারা মন্তব্য করেন।
পীরগাছা উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক লোকমান হোসেন বলেন, জেলা কমিটি গঠন হলো অথচ উপজেলার আহবায়ক ও সদস্য সচিবকে কোন পদ দেয়া হলো না। অথচ ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মীদের পদ দেয়া হয়েছে। পৌরসভার আহবায়ককে মূল্যায়ন না করে সদস্য সচিবকে মোটর সাইকেল চুরি সিন্ডিকেটের আসামীকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। যার বিরুদ্ধে চুরির মামলা রয়েছে। মাদক সেবনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এর মাধ্যমে সদ্য ঘোষিত জেলার আহ্বায়ক কমিটি একটি সমন্বয়হীন, অগ্রহণযোগ্য, নামসর্বস্ব মৃতপ্রায় কমিটিতে পরিণত হয়েছে। আমরা রাজপথের ত্যাগী ও সক্রিয়, গ্রহণযোগ্যদের মাধ্যমে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি বাতিল পূর্বক নতুন কমিটির দাবি জানাচ্ছি।
সদ্য বিলুপ্ত জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি সজিব মজুমদার বলেন, রংপুর জেলা ছাত্রদলের কমিটিতে ত্যাগী ও রাজপথের সক্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তা প্রত্যাখান করছি। এই কমিটি দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত এক দফা আন্দোলন রাজপথে সফল করা সম্ভব বলে না বলে তিনি জানান। চুরি মামলার আসামীকে সদস্য সচিব করায় আমরা বিব্রত।
হারাগাছ পৌরসভা ছাত্রদলের আহবায়ক মো: ফরিদ ও যুগ্ম আহবায়ক বাঁধন মিয়া বলেন, জেলা কমিটির সদস্য সচিব হিসাবে দায়িত্ব পাওয়া আবতাবুজ্জামান সুজন হারাগাছ পৌরসভা কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন। তিনি দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। দলীয় কর্মসূচী, আন্দোলন সংগ্রামে তিনি ছিলেন লোকচক্ষুর আড়ালে। তাকে জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। তার বিরুদ্ধে মোটর সাইকেল চুরি সংক্রান্ত একটি মামলাও রয়েছে বলে তারা জানান।
জেলা কমিটির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আসিফ বলেন, ইউনিয়নের নেতারা জেলা কমিটিতে পদ পায়। জেলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন যারা, তাদের রাখা হয়নি। অথচ যারা ইউনিয়ন ও উপজেলায় অনেক নেতাকর্মী তৈরি করেছেন তারা পদ পান না। এখন আমরা কোথায় গিয়ে রাজনীতি করবো। যাদের জেলা কমিটিতে পদ দেয়া হয়েছে সেই কমিটির সদস্য সচিবসহ অনেককেই রাজপথে সংক্রিয় ছিলেন না। চুরি, মাদক সেবনসহ নানান অভিযোগ রয়েছে।কোন শক্তির বলে তাদের পদে রাখা হয়েছে তা বোধগম্য নয়।
এব্যাপারে সদস্য সচিব আফতাবুজ্জামান সুজনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দল ভালো মনে করেছে বলেই তাকে দায়িত্ব দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে মোটর সাইকেল চুরি সংক্রান্ত মামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, জেলা বিএনপি আহবায়ক ও সদস্য সচিবের সাথে কথা বলেন তারা বিস্তারিত বলবেন।
রংপুর জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক শরীফ নেওয়াজ জোহার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বর্তমান কমিটিতে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। ত্যাগী ও রাজপথের ত্যাগীরা স্থান পাননি। বিগত কমিটির অধিকাংশই নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আহবায়ক কমিটিতে পদে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে অনেক নেতাকর্মীর মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা অসন্তোষ। বিষয়টিগুলো নিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সম্পাদক সাথে কথা হয়েছে। তারা যেভাবে পরামর্শ দেবে। সেই মোতাবেক কাজ করা হবে।
জেলা বিএনপির আহবায়ক সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ জুয়েল জানান, রংপুর জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়কসহ কমিটির বিষয়ে নানা অভিযোগ এসেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরাধীদের স্থান ছাত্রদলে হবে না।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments