September 08, 2024
মুক্তমত

একটি তর্জনীর ইশারা- অতঃপর স্বাধীনতা ।। মোল্লা তানিয়া ইসলাম তমা ।।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে একটি তর্জনীর ইশারায় গর্জে উঠেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সাড়ে সাত কোটি মানুষ । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তর্জনী উঠিয়ে সেই ভাষণ এখন ইউনেস্কোর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের অংশ । ১৯৭১ সালের অনিশ্চিয়তা ভরা দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ উদ্দীপ্ত করে তুলেছিল পূর্ব বাংলার মানুষকে । দিয়েছিল বিপদসংকুল পথে এগিয়ে যাওয়ার পথরেখা । ২০১৭ সালের অক্টোবরে ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে এই ভাষণ এখন বিশ্বের সবার । বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে জাতির উদ্দেশ্যে বজ্রকন্ঠে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, সেই বলিষ্ট তর্জনীর ইশারায় । সেইদিন সমগ্র বাঙালি জাতি জেগে উঠেছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য। একটি তর্জনী প্রতিবাদের ভাষা ,অত্যাচারী জালিমদের হুশিয়ারী করে দেওয়া। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মূর্ত প্রতীক। একটি তর্জনী, একটি নির্দেশ, একটি যুদ্ধ, একটি জাতির মুক্তি । এই তর্জনী নতুন প্রজন্মের কাছে একটি নতুন স্বপ্ন । এই তর্জনী এখনো আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে শক্তি জোগায় । আর এই তর্জনী নিয়ে এবার ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃহত্তর বঙ্গবন্ধুর তর্জনী ভাস্কর্য মুক্তির ডাক (ঈধষষ ভড়ৎ জবফবসঢ়ঃরড়হ) নির্মাণ করা হয়েছে নরসিংদীতে । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তেজদীপ্ত তর্জনী নিয়ে নির্মিত ভাস্কর্যটি ৪১ ফুট উচু । ভাস্কর্যটি বিশ্বের হাত ভাস্কর্যের মধ্যে উচ্চতার দিক থেকে অন্যতম। এই ভাস্কর্যটি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, ভাস্কর নির্মাতা অলি মাহমুদের বিশ্বাস, এই তর্জনী নিচে দাঁড়িয়ে গভীরভাবে উপলব্ধি করলে স্বীয় জাতি, ঐতিহ্য আর গৌরবময় সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি নিজের মধ্যে ভেসে উঠবে। ভাস্কর্যটি নতুন প্রজন্মের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। ৭৫-এর পরে বিভিন্ন চক্র এদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল। চেয়েছিল এই ভূখন্ড থেকে বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস চিরতরে মুছে দিবে। কিন্তু আজকে প্রমাণিত বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা যায় না। পৃথিবীর এমন কোন রাস্ট্র নাই যার নিজস্ব ইতিহাস নেই, সবদেশে একজন জাতির পিতা আছে, রয়েছে স্বাধীনতা, নিজস্ব ভাষা, ঠিক তেমনি বাংলাদেশে আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস, একটি তর্জনী, একটি ভাষণ। যাহা সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসে সাক্ষ্য হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একইসূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়, একটি সংগ্রামের প্রতীক। তাঁর একটি তর্জনীর ইশারায় পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতার সুখ লাভ করিয়েছে। তিনি পৃথিবীতে এঁকেছেন নতুন সীমারেখার মানচিত্র, আকাশে উড়িয়েছিলেন লাল সবুজের নতুন পতাকা। বঙ্গবন্ধু মানে শক্তি, উৎসাহ আর প্রেরণা। বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ। তাঁর অসাধারণ বাগ্নীতা, মানবিকতা, মানুষের প্রতি সহমর্মতির গুণে তিনি চির অমলিন। তাঁর ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের শিহরিত করে ও অনুপ্রাণিত করে। বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। যিনি তাঁর বিচক্ষণতা, সাহস, ত্যাগ, মেধা আর অনন্য সাধারণ নেতৃত্বে, রাজনৈতিক নেতৃত্বে পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরাচার, শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবহেলিত বাঙালি জাতিকে দুর্বার অধিকার আদায়ে সচেতন করে তুলেছিলেন। তাঁর আপোষহীন নেতৃত্বে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু করে ছিল। এই আন্দোলনকে বেগবান করেছিল, অপ্রতিরোধ্য করেছিল যা শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম দিয়েছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাস্ট্রের। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক ও অবিচ্ছেদ্য সত্তা। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ তাঁর অমর কীর্তি। এই দেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত, মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে সক্ষম এক সোনার বাংলাদেশ, এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশ গড়তে বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ নামক এই ছোট্ট ভূ-খন্ডটির জন্মের সাথে যার নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত তিনি আর কেউ নন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একজন সন্তানের জন্মের সাথে তার পিতার সম্পর্ক যেমন থাকে, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের সাথে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক। শেখ মুজিবুর রহমান "সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালী” হিসেবে বিশ্বব্যাপী নন্দিত এক চরিত্র আমাদের বঙ্গবন্ধু। ডেভিড ফ্রস্টের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, "ঞযবু যধাব মরাবহ বাবৎুঃযরহম ভড়ৎ সব নবপধঁংব ও ধিং ৎবধফু ঃড় মরাব বাবৎুঃযরহম ভড়ৎ ঃযবস. ও ধিহঃ ঃড় সধশব ঃযবস ভৎবব. ও যধাব হড় ড়নলবপঃরড়হ ঃড় ফরব. ও ধিহঃ ঃড় ংবব ঃযবস যধঢ়ঢ়ু. ও নবপড়সব বসড়ঃরড়হধষ যিবহ ও ভববষ ঃযব ষড়াব ধহফ ধভভবপঃরড়হ সু ঢ়বড়ঢ়ষব মধাব সব." রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্রষ্টা । তিনি ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়েরা খাতুন। ১৯৩৮ সালে গোপালগঞ্জ মহকুমা পরিদর্শনে আসা বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ. কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উপস্থিতিতে কিশোর মুজিব স্কুলের ভাঙা ছাদ দিয়ে পানি পড়া বন্ধে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেই জানান দিয়েছিলেন যে, বাংলার ভাগ্যাকাশে আবির্ভূত হতে চলেছে এক নতুন সত্তার, এক নতুন ধূমকেতুর। এরপর থেকে রাজনীতির মঞ্চে তার উত্থান এবং সাফল্য সবই ইতিহাস। ভারতভাগের পর যুবনেতা শেখ মুজিব ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ছাত্রলীগের পরিণতির সাথে সাথে নিজের মেধা ও মানুষের জন্য কাজ করার প্রেরণা থেকেই উদ্বুদ্ধ বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে নিয়ে গেছেন স্বাধীনতার চূড়ান্ত রূপে। পাকিস্তান পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে তিনি যখন ভাষণ দিতেন, তখন কখনোই পূর্ব-পাকিস্তান বলতেন না, বলতেন পূর্ব বাংলা। বাংলার বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের দাবিতেই তিনি তার জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন জেলের প্রকোষ্ঠে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ছাত্র শেখ মুজিব অনবদ্য ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা দিয়ে তিনি বাংলার মুক্তি সংগ্রামকে আরও বেগবান করেছিলেন। পাকিস্তানের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে করতে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলার নয়নের মণি, সাধনার ধন । মার্কিন কূটনৈতিক অ্যার্চার ব্লাড তার গ্রন্থে লিখেছেন, শেখ মুজিব ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের “মুকুটহীন সম্রাট।” তবে এই মুকুটহীন সম্রাট হয়ে ওঠার পেছনের ইতিহাসটা সবাই গভীরভাবে লক্ষ্য করে থাকবে। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর এক নিঃস্বার্থ স্বপ্ন ছিলো শোষণ, বঞ্চনামুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। তাই তো তিনি বলেছিলেন," এ প্রধানমন্ত্রীত্ব আমার কাছে কাঁটা বলে মনে হয়। আমি যদি বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে না পারি, আমি যদি দেখি বাংলার মানুষ দুঃখী, আর যদি দেখি বাংলার মানুষ পেট ভরে খায় নাই, তাহলে আমি শান্তিতে মরতে পারবো না।" ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিপথগামী কিছু সেনাসদস্যের বর্বরোচিত হামলার কারণে তাঁর স্বপ্নগুলো তিনি নিজ হাতে বাস্তবায়ন করার সুযোগ পাননি। কিন্তু আজকের বাংলাদেশ থেমে নাই। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, প্রতিনিয়ত বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথকে অনুসরণ করে গণমানুষের মুখে হাসি ফোটানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। যে স্বাধীনতা আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আর অনুপ্রেরণায় অর্জন করতে পেরেছি, সেই স্বাধীনতা ধরে রাখতে হলে আমাদেরকে বঙ্গবন্ধুর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দেশের জন্য মিলেমিশে কাজ করে যেতে হবে। তবুও যেন এক হাহাকার গুঞ্জে উঠে বারবার, “যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই। যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই। তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা, আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা “। আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে আমাদের ছোট্ট এই লাল-সবুজ পতাকার দেশটি। যে দেশটির প্রবৃদ্ধি এখন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও বেশী এবং যে দেশটি এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য একটি রোল মডেল। সেই স্বাধীন বাংলাদেশ নামটি উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে যে অমর, চিরবিপ্লবী মহানায়কের নাম চলে আসে তিনি আমাদের সকলের প্রিয়, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু দেশ ও দশের কথা ভেবেছেন। তিনি মনে ও প্রাণে গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি সবসময় মনে করতেন ব্যক্তির চেয়ে দল বড় আর দলের থেকে দেশ। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাংলাদেশের মানচিত্র বিশ্বের বুকে ঠাঁই পেতনা। বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করার ক্ষমতা কোন বাঙালীর নেই। তিনি যেমন ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ববর্তী মুক্তির সংগ্রামের নায়ক ঠিক তেমনি স্বাধীনতা পরবর্তী অর্থনৈতিক মুক্তি সংগ্রামের স্বপ্নদ্রষ্টা। সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের জন্য অধিকার আদায়ে তিনি ছিলেন একটি পরিবারের পিতার মত তাইতো তিনি জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু শোষণহীন সমাজ গঠনের জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন। বাংলার স্বাধীনতা পরবর্তী শিল্প ও কৃষিখাতে সমান মনোযোগী ছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ এই চার বছরে জাতির পিতা যে স্বপ্ন নিয়ে এগিয়েছিলেন তা আগস্টের এক কালোরাতে কয়েক মূহুর্তের মধ্যেই নি:শেষ হয়ে যায় স্বাধীনতাবিরোধী বিপথগামী কিছু সেনার হাতে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু’ ও তার পরিবারের উপর বর্বরোচিত হামলা এবং নৃশংস হত্যাকান্ড বাংলার ইতিহাসের কালো অধ্যায় হয়েই থাকবে। যে মানুষটি দেশ ও দেশের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরণ সংগ্রাম করে গেছেন সেই মানুষটি ও তার পরিবারের উপর ঘৃন্য বর্বরোচিত এই হামলা ছিল বাংলার স্বাধীনতাপ্রিয় প্রতিটি মানুষের পিঠে চাবুকের কষাঘাতের মতো। বাঙালী কেবলমাত্র একজন পিতাকেই হারায়নি, হারিয়েছিলো একটি ছায়াশীতল বটবৃক্ষ, যার অভাব আজও জাতি অনুধাবন করে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে সেদিন বঙ্গবন্ধু’ই কেবল রক্তাক্ত হননি, রক্তাক্ত হয়েছিলো স্বাধীন বাংলার লাল সবুজ পতাকাটিও। সেই রক্তের দাগ আজও শুকায়নি। ব্রিটিশ সাংবদিক ডেভিড ফ্রস্ট একটি সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘আপনি যখন দেখলেন, ওরা কবর খনন করছে তখন আপনার মনে কার কথা জাগলো? আপনার দেশের কথা? না আপনার স্ত্রী-পুত্র-পরিজনের কথা? উত্তরে বঙ্গবন্ধু নিঃসংকোচে বললেন. ‘আমার প্রথম চিন্তা ছিলো আমার দেশ. তারপর আমার পরিবার। আমি আমার জনগনকেই বেশী ভালোবাসি।’সারা জীবন বঙ্গবন্ধুর একটিই স্বপ্ন ছিলো , বাংলার দুঃখি, অবহেলিত আর দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। তাঁর একটিই সাধ ছিলো নির্যাতিত মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতা। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ফিরে প্রথম স্বাধীন বাংলায় পা রেখেই আবেগ আপ্লুত ও অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন “ আমি আজ বাংলার মানুষকে দেখলাম, বাংলার আকাশকে দেখলাম, বাংলার আবহাওয়াকে অনুভব করলাম। বাংলাকে আমি সালাম জানাই, আমার সোনার বাংলা , আমি বড় ভালোবাসি বোধহয় তার জন্যই আমাকে বাংলায় ডেকে নিয়ে এসেছে।” বঙ্গবন্ধুর চোখেও তখন ছিলো সাড়ে সাত কোটি বাংলার মানুষের আশা আর অশ্রুসিক্ত ভালোবাসা। এজন্যই শতবর্ষ পরে, আজও তিনি অম্লান হয়ে আছেন কোটি কোটি বাঙালীর অন্তরে। দেশের ও দেশের মানুষের জন্য এ রকম ত্যাগী নেতা বিশ্বের ইতিহাসে কোথাও আছে বলে মনে হয় না। পরিশেষে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সুপ্রভাত কবিতাটির শেষের কয়েকটি লাইনের কথা মনে পড়ছে,“উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই। নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই, তার ক্ষয় নাই”।   

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments