September 16, 2024
সারাদেশ

রাণীশংকৈলে টাকা চুরির বিচার করতে গিয়ে গ্রাম পুলিশ মামলার আসামী

রাণীশংকৈল,(ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের উমরাডাঙ্গী গ্রামে টাকা চুরির বিচার করতে গিয়ে মামলার আসামী হয়েছেন ওই গ্রামের গ্রাম্য পুলিশ নুরুল ইসলামসহ ৪জন। গত শনিবার ১৩ আগস্ট সরজমিনে গিয়ে এসব ঘটনা জানা গেছে স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে গত ১৭জুলাই ওমড়াডাঙ্গী গ্রামের সইদুল হকের ছেলে মেহেদী হাসান নামে এক ছেলে ওই গ্রামের রফিকুল ইসলমামের ছেলে মানিক হোসেনের ১০হাজার টাকা বাড়ির জানালা দিয়ে চুরি করে। টের পেয়ে মানিক ও তাঁর স্ত্রী বাড়িতে বলাবলি করে যে মেহেদী আজকে তাদের বাড়িতে বেশ কয়েকবার এসেছিল এটা তারই কাজ।
মানিক কাঁদতে কাঁদতে বলে এটা মেহেদীর কাজ কারণ এর আগেও সে এই গ্রামে সাখাওয়াতের বাড়িতে টাকা চুরি, জবায়দুর রহমান পাঞ্জাবীর বাড়ির পাশের মাঠরথেকে ছাগল চুরি, রুহুল পিয়নের দোকান থেকে টাকা চুরি এবং সাবিনা ইয়াসমিন লিলির বাড়িতে দু-তিনবার টাকা চুরি করেছে। এটা গ্রামের সবাই জানে আজকে আমার ঘরের জানালা দিয়ে জামার পকেট থেকে সেই টাকাটা চুরি করেছে।
পরে মানিক মেহেদীকে বাড়িতে ডেকে অনেক বুঝানোর পর বলে তোমাকে ২০০০টাকা খাওয়ার জন্য দিয়ে দিবো অবশিষ্ট ৮ হাজার টাকা দিয়ে দাও। এ কথায় মেহেদী রাজী হয়ে যায়। পরে বড়িতে টাকা আনতে গিয়ে মেহেদী আর আসেনি। এঘটনায় মেহেদীকে চুরি করার কথা স্বীকার করার জন্য ঐ গ্রামের আনোয়ার ও সাবিনা মেহেদীর বাড়িতে গিয়ে তার বাবা মাকে ঘটনা সব খুলে বলে,এবং টাকা চুরির ঘটনাটি মেহেদীকে বলে কিন্তু মেহেদী স্বীকার করেনা। এরপর মেহেদীর বাবা মাকে বলে, আনোয়ার ও সাবিনা মেহেদীকে নিয়ে বাড়ির পাশে টাকা চুরির ব্যাপারটি স্বীকার করাতে নিয়ে যায়। এরপর মানিকের বাবা রফিকুলও এসে যোগ দেয়। এরপর এক এক করে অনেকে এসে মেহেদীকে টাকা চুরি করছে কিনা? সেটা জানতে চায়। এভাবে বিকাল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত সবাই মিলে মেহেদীকে স্বীকার করানের চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে স্বীকার করতে না পারায় সকলে উত্তেজিত হয়ে মেহেদীর হাত বেঁধে বিচারের জন্য মহিলা ইউপি সদস্য ও স্বামী গ্রাম্য পুলিশ নুরুল ইসলামের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে উত্তেজিত জনতা বলে এই ছেলে অতীতেও গ্রামে অনেক চুরি করেছে মাইর দিলে সব চুরির ঘটনা স্বীকার করবে। এরপর সবাই মেহেদীকে মারতে থাকে। পরে ছেলের দাদা ও রফিকুল নামে একজন পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ চকিদারের বাড়ি সংলগ্ন পাকা রাস্তা থেকে মেহেদীকে উদ্ধার করে প্রথমে থানায় পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই রাতেই মেহেদীকে বাড়ি যাওয়ার পরামর্শ দেন। মেহেদীর বাবা মা তাকে বাড়ি নিয়ে যান। পরদিন রাতে মেহেদীর বাবা বাদী হয়ে গ্রাম্য পুলিশ নুরুল ইসলাম,রফিকুল, আনোয়ার ও মানিক এই ৪ জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আসামী নুরুল জানান, আমি মারপিটের সাথে মোটেও জড়িত নই। আমার স্ত্রী মহিলা মেম্বার তাই সেদিন বিচারের জন্য ছেলেটিকে অনেক লোক মিলে আমার বাড়িতে নিয়েগেছিল। সেখানে ইতোপূর্বে যার যার চুরি হয়েছে তারা সবাই মিলে ছেলেটিকে মেরেছে, আমিও মেহেদীকে অনেক ধমক দিয়েছিলাম। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। আমার স্ত্রী ৩ বারের মহিলা মেম্বার তাই আমার ও আমার স্ত্রীর জনপ্রিয়তা নষ্ট করার জন্য কিছু সংখ্যক লোক আমার নামে মামলা করেছে। যেদিন তারা মামলা করে তার পরদিন রাতে আমি বাড়ি যাওয়ার পথে মেহেদীর দাদা নিয়ামত, রুহুল,সামিউল,সইদুল, মনিরুলসহ ধারালো দেশী অস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে আমর পথ অবরোধ করে। আমি কোনমতে জানে বেঁচে বাড়ি ফিরি। তারা আমার বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে আমাকে মারতে চায়, কিন্তু গ্রামবাসী টের পেয়ে তাদের ধাওয়া করলে তারা চলে যায়।
এবিষয়ে সাবিনা ও আনোয়ার হোসেন বলেন, সেই ছেলে তার বাড়ি থেকে নিজ ইচ্ছায় আমাদের সঙ্গে গ্রাম পুলিশের বাড়িতে গিয়েছে। এবং স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে আমি টাকা নিয়েছি।
টাকার মালিক মোঃ মানিক বলেন, আনোয়ার নামে ব্যক্তি আমাদের কাছে নিয়ে আসে আমরা সবাই মিলে তাকে আমাদের গ্রামের গ্রাম্য পুলিশ নুরুল হক ও তাঁর বউ মহিলা সদস্য হওয়ায় তাদের বাড়িতে তাকে নিয়ে যায়। এবং সে আমার টাকা সে চুরি করেছে এ কথা সে আমাদেরকে স্বীকারোক্তি দিয়েছে আমরা সেটা ভিডিও ধারণ করে রেখেছি।
ওই গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেন,ঐ ছেলে এলাকার অনেক মানুষের বাড়িতে এর আগে চুরি করেছে। সে নিজে স্বীকারোক্তি দিয়েছে এবং ধরাও পড়েছে। ঐদিন সে গ্রাম পুলিশ নুরুলের বাড়িতে নিজ ইচ্ছায় গেছে।
এব্যাপরে টাকা চুরির অভিযুক্ত মেহেদী হাসানের বাবা মা বলেন, আমার ছেলের দুষ্টামী করে এর আগে এরকম দু-একটি ঘটনা ঘটিয়েছে। সেদিনের ঘটনায় আনোয়ার ও সাবিনা আমাদেরকে বলে যে, আমরা তাকে বাড়ীর পাশে নিয়ে গিয়ে টাকা চুরির ব্যপারটি তাকে বুঝিয়ে বলবো এরপর আমরা সন্ধ্যায় শুনতে পায় যে মেহেদীকে নুরূল চকিদারের বাড়ীতে নিয়ে মারপিট করা হচ্ছে। সাথে সাথে সেখানে গিয়ে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ মেহেদীকে উদ্ধার করে প্রথমে থানায় পরে হাসপাতালে ভর্তি করান।
এ ব্যাপারে লেহেস্বা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন-আমি ঘটনাটি শুনার পর গ্রাম্য পুলিশ নুরুলের কাছে জানতে চাইলে সে বলেন- আমি মেহেদীকে মাইর পিট করিনি। তবে এব্যাপারে একটি মামলা হয়েছে বলে চেয়ারম্যান জানান। রাণীশংকৈল থানার ওসি গুলফামুল ইসলমা মন্ডল বলেন, এ ব্যাপারে থানায় একটি মারপিটের মামলা দায়ের হয়েছে।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments