খেলা

তীরে এসে তরী ডুবল আফগানদের

তীরে এসে তরী ডুবল আফগানিস্তানের। সুপার ফোরে নাম লেখাতে আফগানদের সমাধান করতে হতো জটিল এক সমীকরণের। লঙ্কানদের দেওয়া ২৯২ রানের লক্ষ্যটা টপকাতে হতো ৩৭.১ ওভারে। একটা সময় সেই সমীকরণটা প্রায় সমাধানের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও গিয়েছিল আফগানিস্তান।
সুপার ফোর নিশ্চিতের সমীকরণ বলছিল শেষ চারে নাম লেখাতে এক বলে আফগানদের প্রয়োজন ছিল ৩ রান। উইকেটের একপ্রান্তে সে সময় ছিলেন নাজিবুল্লাহ জাদরানের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। অপরপ্রান্তে তাকে সাপোর্ট দিচ্ছিলেন রশিদ খান। হাতে ছিল দুই উইকেট।
কিন্তু মোহাম্মদ নবি, কারিম জানাত ও হাশমতউল্লাহ শাহিদির গড়ে দেওয়া জয়ের শক্ত ভীতে দাঁড়িয়েও শেষ পর্যন্ত সুপার ফোরে খেলার স্বপ্নটা বিসর্জন দিতে হলো আফগানদের। এক বলের আক্ষেপে পুড়ে এশিয়া কাপ মিশন শেষ হলো আফগানিস্তানের।
সুপার ফোর নিশ্চিত তো হয়নি তাদের, বরং মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে ছিটকে যাওয়ার পাশাপাশি দুই রানে হারকে সঙ্গী করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে আফগানদের। আর এই জয়ে শেষ দল হিসেবে সুপারে ফোর নিশ্চিত হলো শ্রীলঙ্কার।
শ্রীলঙ্কার ছুড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যের জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় আফগানিস্তান। দলের স্কোরবোর্ডে ২৭ রান যোগ করতেই সাজঘরে ফিরে যান দুই আফগান ওপেনার। কাসুন রাজিথা নিজের প্রথম দুই ওভারেই তুলে নেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ (৪) ও ইবরাহিম জাদরানের (৭) উইকেট।
দ্রুত দুই ওপেনারকে হারিয়ে সতর্ক ব্যাটিং শুরু করেন গুলবাদিন নাঈব ও রহমত শাহ। কিন্তু দলকে বেশিদূর টেনে নিয়ে যেতে পারেননি এই দুজন। ১৬ বলে ২২ করে নাঈবের সাজঘরে ফেরার মধ্য দিয়ে ভাঙে সেই জুটি।
এরপর হাশমতউল্লাহ শাহিদিকে সঙ্গে নিয়ে রানের গতি বাড়াতে থাকেন রহমত শাহ। ৪০ বলে ৪৫ করে রহমত বিদায় নিলে উইকেটে এসেই গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ঝড় তোলেন মোহাম্মদ নবি।
চার ছক্কার ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে দলকে নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের জটিল সমীকরণ সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। একের পর এক বাউন্ডারিতে মাত্র ২৪ বলের তুলে নেন অর্ধশতক।
১৫.৫ ওভারে দলীয় সংগ্রহ শতরানে পৌঁছেছিল আফগানিস্তান। চার ছক্কার ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে ঝড়ে মাত্র ১০ ওভারেই স্কোরবোর্ড ২০০ রানে নিয়ে যান নবি। সে সময় আফগানিস্তানকে হাতছানি দিচ্ছিল লঙ্কানদের ছিটকে দিয়ে সুপার করে জায়গা করে নেওয়ার সুযোগ।
কিন্তু কে জানতো নবির বিদায়ের ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে যাবে দৃশ্যপট? ৩২ বলে ৬৫ করে নবি আর ৬৬ বলে ৫৯ করে শাহিদির বিদায়ের পর ম্যাচ ধীরে ধীরে চলে যেতে থাকে শ্রীলঙ্কার কোর্টে।
করিম জানাতের ১৩ বলে ২২, নাজিবুল্লাহ জাদরানের ১৫ বলে ২৩ আর রাশিদ খান হার না মানা ১৬ বলে ২৭ রানের ইনিংস খেলেও সমাধান করতে পারেননি রান রেটের কঠিন সমীকরণটা।
সুপার ফোর হাতছাড়া হলেও জয়টা ছিল লঙ্কানদের হাতের মুঠোয়। কেননা জয়ের জন্য ১৩ ওভারে ৩ রান প্রয়োজন ছিল আফগানদের। হাতে ছিল দুই উইকেট।
৩৭ তম ওভারে এসে ধনঞ্জয় ডি সিলভা তার প্রথম বলেই মুজিব উর রহমান আর চতুর্থ বলে তুলে নেন ফজল হক ফারুকির উইকেট। আর তাতেই রীতিমতো অসম্ভব এক হারকে সঙ্গী করে মাঠ ছাড়তে হয় আফগানদের।
এর আগে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই আফগান বোলারদের ওপর মারমুখী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও দিমুথ কারুনারত্নে। পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে এই দুই ব্যাটারের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের সুবাদে স্কোরবোর্ডে বিনা উইকেটে ৬২ রান যোগ করে শ্রীলঙ্কা।
কিন্তু ইনিংসের একাদশতম ওভারে গুলবাদিন নাঈবের স্লোয়ার মিস টাইমিং হওয়ায় কভার অঞ্চলে মোহাম্মদ নবির হাতে ধরা পড়েন দিমুথ করুনারত্নে। আর তাতে করেই ভাঙে লঙ্কানদের ৬৩ রানের উদ্বোধনী জুটি। মাঠ ছাড়ার আগে কারুনারত্নের ব্যাট থেকে আসে ৩৫ বলে ৩২ রান।
সঙ্গীর বিদায়ে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন নিশাঙ্কা। সঙ্গে নেন কুশাল মেন্ডিসকে। কিন্তু তিন ওভার বাদেই নাঈবের দ্বিতীয় শিকার বনে ৪০ বলে ৪১ রান করে মাঠ ছাড়তে হয় নিশাঙ্কাকেও।
বাংলাদেশের বিপক্ষের ম্যাচে জয়ের অন্যতম নায়ক সাদিরা সামাউইক্রিমা আফগানিস্তানের বিপক্ষে জ্বলে ওঠার আগেই নিভে যান সেই গুলবাদিনের সুবাদে। আফগান এই পেসারের তৃতীয় শিকার বনে মাত্র ৩ রান করেই সাজঘরের পথ ধরতে হয় তাকে।
ব্যাক টু ব্যাক তিন উইকেট হারিয়ে হুট করেই কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায় লঙ্কানরা। কিন্তু সেই চাপ কেটে যেতে থাকে কুশাল মেন্ডিস ও চারিথ আশালাঙ্কার দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে। উইকেট পতনের লাগাম টেনে ধরে দুজনে মিলে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন দলকে।রানের চাকা সচল রাখার পাশাপাশি দেখেশুনে করা ব্যাটিংয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৩ তম অর্ধশতক হাঁকান মেন্ডিস।
ইনিংসের ১১-১৭ ওভারের ভেতর হওয়া লঙ্কানদের ছন্দপতনের রেশ কেটে যেতে থাকে তাদের ব্যাটিংয়ের সুবাদে।
দলীয় ১৮৮ রানে আশলাঙ্কা ব্যক্তিগত ৩৬ রান করে বিদায় নিলে ভাঙে লঙ্কানদের ১০২ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি। সঙ্গী বিদায় নিলেও ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন মেন্ডিস।
কিন্তু দলীয় ২২৬ রানে রশিদ খানের হাতে জীবন পেলেও ফিরতি থ্রোতে রান আউট হন মেন্ডিস। সেঞ্চুরি থেকে আট রান দূরে থাকতেই একবুক হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
শেষ দিকে দুনিথ ওয়েলালেগের হার না মানা ৩৩ ও মহেশ থিকসানার ২৮ রানের সুবাদে ৮ উইকেট হারিয়ে আফগানদের সামনে ২৯১ রানের পুঁজি দাঁড় করায় শ্রীলঙ্কা।
আফগানদের হয়ে চারটী উইকেট নেন গুলবাদিন নাঈব। দুটি উইকেট নেন রাশিদ খান আর একটি উইকেট যায় মুজিব উর রহমানের ঝুলিতে।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments