সারাদেশ
হরিণাকুন্ডুর শেখপাড়া বেড়বিন্নী এখন পুরুষ শুন্য গ্রাম, চলেছে ভাংচুর ও লুটপাট
ঝিনাইদহ-
ঝিনাইদহের হরিণাকু-ু উপজেলার শেখপাড়া বিন্নি এখন ভুতুড়ে গ্রাম। আলতাফ হোসেন নামে এক ব্যাক্তি খুন হওয়ার পর গ্রামের বেশির ভাগ পুরুষ গ্রেফতার আতংকে বাড়ি ছেড়েছে। কোন কোন বাড়িতে মহিলারাও নেই। হত্যার পর চলেছে ভাংচুর ও লুটপাট। এখনো রাতের আঁধারে কে বা কারা পুরুষ শুন্য বাড়িগুলোতে ঢু মারছে। সামনে যা পাচ্ছে তাই নিয়ে চম্পট দিচ্ছে। পুলিশ জানায় গত ১৭ এপ্রিল আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু‘পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আলতাফ হোসেন নামে বেড়বিন্নী গ্রামের এক ব্যক্তি নিহত হন। এরপর থেকেই সেখানে উত্তেজনা চলছে। ক‘দিন ধরে মিডিয়াকর্মীদের কাছে খবর আসছে সেখানে গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকাছাড়া একপক্ষের বাড়িঘরে ভাংচুর ও লুটপাটের। সরেজমিনে ওই গ্রামদুটিতে ঢুকতেই দেখা মেলে পুলিশের সতর্ক অবস্থানের। কথা হয় সেখানে দায়িত্বরত সহকারি উপপরিদর্শক মোজাফ্ফর হোসেনের সাথে। তিনি জানান, যেকোনো ধরণের অনাকাঙ্কিত ঘটনা এড়াতে তারা ক‘দিন ধরেই পালাক্রমে রাতদিন দায়িত্ব পালন করছেন। গ্রামের দুটি প্রবেশমুখেই তাদের পাহারা রয়েছে। ভাংচুর কিংবা লুটপাটের খবর সঠিক নয় বলে পুলিশের এই কর্মকর্তার দাবি করলেও ঘরের মেঝেতে লুটপাট ও ভাংচুরের চিহ্ন রয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, একজন নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে তাই গ্রেপ্তার এড়াতে একপক্ষের লোকজন বাড়িছাড়া রয়েছে। কিছুদুর যেতেই পথেই সুন্দরি খাতুন নামে এক নারীকে একটি ছাগল নিয়ে যেতে দেখা যায়। তিনি জানান, তারা আসামী পক্ষের লোক। মারামারির দিন থেকে তারা বাড়িছাড়া। তার বাড়ির অসবাবসহ এই ছাগলটিও লুট করা হয়েছিল। পুলিশের সহযোগিতাই অন্যপক্ষের একজনের বাড়ি থেকে ছাগলটি উদ্ধার করেছেন। এ সময় ছকিনা খাতুন নামে আরও এক নারীর একটি গরুও পুলিশ উদ্ধার করে দিয়েছে বলে তিনি জানান। এই নারীর দাবি, তাদের পক্ষের অন্তত ৩০/৩৫টি বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়েছে। লুট করা হয়েছে ঘরের আসবাব, গরু-ছাগল, মোটরসাইকেলসহ অনেককিছু। শেখপাড়া বিন্নী গ্রামে ঢুকে একধরণের সুনসান নীরবতা লক্ষ করা যায়। পুরো গ্রামটিতে হাতেগোনা ৫/৬জন পুরুষের দেখা মেলে। তাদের সবাই নিহতের পক্ষের লোকজন। এদের মধ্যে রুবেল নামে একব্যক্তি জানান, মারামারির সময় কিছু বাড়ি ভাংচুর হয়েছে। তবে কোনো লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি। তার দাবি, তাদের সহযোগিতায় প্রতিপক্ষরা নিজেরাই নিজেদের বাড়িঘরের মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন। গ্রামের অন্তত ২০টি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে এসব ঘরের আসবাব। কোথাও কোনো মানুষের উপস্থিতি নেই। ভাংচুর করা হয়েছে প্রতিটি ঘরের জানালা-দরজা ও টিনের চালা। এগুলো আসামী পক্ষের লোকজনের বাড়িঘরের দৃশ্য। আসমানী খাতুন নামে এক নারী জানান, তার স্বামীসহ তাদের পক্ষের প্রায় তিন শতাধিক মানুষ বাড়িছাড়া রয়েছেন। তারাও ঘটনার দিন রাত থেকে পালিয়ে ছিলেন। আজ বাড়িঘরের আবস্থা দেখতে এসেছেন। তার দাবি, তার বাড়ির তেমন কোনো ক্ষতি না হলেও তাদের আনেকের গরু, ছাগল, মোটরসাইকেল ও আসবাবসহ অনেককিছু লুট করা হয়েছে। বাড়িঘরসহ কৃষিকাজে ব্যবহারের পাওয়ার টিলার ও ইজিবাইক ভাংচুর করা হয়েছে। রাতে অন্যগ্রাম থেকে মানুষ এসে লুটপাট করে। তারা নারীদের সাথেও খারাপ আচরণ করে। তাই আতঙ্কে তারাও বাড়িতে থাকেন না। তবে সুফিয়া খাতুন নামে এক নারী দাবি করেন, প্রতিপক্ষের সহযোগিতায়ও তাদের অনেকে নিজেদের বাড়ির মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের এই দুটি গ্রামে বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল হোসেন ও সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের পক্ষে ওই এলাকায় সামাজিক নেতৃত্বে রয়েছেন মতিয়ার রহমান এবং সাবেক চেয়ারম্যানের পক্ষে সিরাজুল ইসলাম নামে দুই ব্যক্তি। মতিয়ার রহমান বলেন, প্রায় একমাস আগে বেড়বিন্নী গ্রামের তাদের পক্ষের এক মেয়ে প্রতিপক্ষের এক ছেলের সাথে চলে যায়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তার দাবি, দুই সপ্তাহ আগে তাদের পক্ষের রাজু নামে এক শিক্ষকের কাছে প্রতিপক্ষের একজনের ছেলের প্রাইভেট পড়ানোর টাকা নিয়ে রাজু ও তার চাচাসহ আরও একজনকে মারধর করে প্রতিপক্ষরা। এ ঘটনায় কয়েকজন জেলহাজতও খাটে। ১৪ এপ্রিল জামিনে বের হয়েই গত ১৭ এপ্রিল আলতাফ হোসেন নামে তাদের একজনকে পিটিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। তবে লুটপাট ও ভাংচুরের কথা সঠিক নয় বলেও দাবি করেন তিনি। মামলার আসামী হয়ে বাড়িছাড়া থাকায় এ বিষয়ে অপর পক্ষের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তার এড়াতে একপক্ষ বাড়িছাড়া রয়েছে। গ্রামে সার্বক্ষণিক পুলিশি পাহারা রয়েছে। এখানে কোনো লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হরিণাকু-ু থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রিয়াজুল হাসান বলেন, বর্তমানে সেখানে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে।। নারী ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাসহ ওই এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত সেখানো কোনো ধরণের লুটপাট বা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি বলেও পুলিশের এই কর্মকর্তার দাবি।
Comments