সারাদেশ

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরেই জঙ্গিবাদের উত্তান- এরশাদুল হক রঞ্জু

এই তো কিছুদিন আগের ঘটনা।ছোট্ট শিশু জায়ান বাবা-মায়ের সঙ্গে গিয়েছিল ভ্রমণে।ফিরল লাশ হয়ে।চির প্রস্থানের পথেও বাবা-মায়ের স্পর্শ পাচ্ছে না জায়ান।কারণ জঙ্গি বোমা হামলায় গুরুতর আহত হয়ে আইসিইউতে তার বাবা আর মা বাবার পাশে।

ইস্টার সানডেতে শ্রীলংকায় রেস্তোরাঁয় সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় নিহত হয় জায়ান।সন্ত্রাসবাদের শিকার হয় মায়াবি ছোট্ট শিশুটি।আর এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি জায়ানের বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স।বাবাকে আইসিইউতে রেখে লাশ হয়ে ফিরল জায়ান।ছেলেকে শেষ দেখা দেখতে পারলেন না মশিউল।জায়ান চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি।স্ব-পরিবারে শ্রীলংকা বেড়াতে গিয়েছিল।ইস্টার সানডেতে বাবা-ছেলে সেখানকার সাংগ্রি লা হোটেলের নিচতলার রেস্তোরাঁয় সকালের নাশতা করতে গিয়ে বোমা হামলার শিকার হন।সেই সময় হোটেল কক্ষে জায়ানের মা থাকায় প্রাণে বেচে যান শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়া ও ছোট ভাই দেড় বছর বয়সী জোহান চৌধুরী।ঠিক ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্ট ১দল উঙখল সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধু সহ স্ব-পরিবারকে হত্যা করে সৌভাগ্য ক্রমে আল্লাহর অশেষ রহমতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও বোন রেহেনা লন্ডনে থাকার কারণে প্রাণে বেচে যান।

জঙ্গি সিরিজ বোমা হামলায় জায়ানের বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স আহত হয়ে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অস্ত্রোপচার হয়েছে।শরীরে বোমার স্প্লিন্টার।পাকস্থলীতেও প্রচণ্ড চোট,শরীর থেকে রক্ত ঝরেছে তিন কেজির মতো।

জঙ্গিদের সম্পর্কে খ্রিস্টান চার্চ বলেন...জঙ্গিদের উদ্দেশ্য হল পাপ,শয়তান ও এই বিশ্বের অন্ধকারের শাসক,উচ্চক্ষেত্রে আত্মিক অধঃপতন-এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা।জঙ্গী হলো একই সাথে একটি বিশেষণ ও একটি বিশেষ্য,এবং সাধারণত পুরোদমে স্বক্রিয়,যুদ্ধংদেহী-মনোভাবাপন্ন ও আগ্রাসী,বিশেষত 'জঙ্গী সংস্কারক' হিসেবে একটি বিশেষ কারণের সমর্থনকারী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।জঙ্গি একজন সৈনিকের ন্যায় দ্বায়িত্ব পালন করা"।বহিঃদখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক সংগঠন হিসেবে মিলিশিয়া সম্পর্কিত আধুনিক মতবাদটি ১০শ শতকের জার্মান-মার্কিন সেনাবাহিনী ফারড হতে এসেছে।সঙ্কটকালীন সময়ে,উক্ত মিলিশিয়াগণ তাঁদের বেসামিরক দায়িত্ব ত্যাগ করে সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এবং জরুরি অবস্থা শেষ হওয়ার পর আবার পুনরায় তাঁদের বেসামরিক পদে ফিরে আসে।

কিন্তু সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে জঙ্গি আর বর্তমান জঙ্গি শব্দটি ভিন্ন রুপ ধারণ করেছে।জঙ্গি বর্তমান বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আতংকের নাম।জঙ্গি নিবন্ধিত সৈনিককে বোঝানো হয় না:এটি এমন ব্যক্তি যে অতি উদ্যমী ও অনেক সময় চরমপন্থী কর্মকাণ্ড ধারণাকে কোন উদ্দেশ্য,বিশেষত বর্তমান ইসলাম ধর্মের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই তারা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন কায়দায় হামলা করে চলছে।একজন জঙ্গি কর্মীকে জঙ্গি হিসেবে বর্ণিত নয় এমন কর্মীর তুলনায় অধিক জেরাপ্রবন ও আগ্রাসী বলে মনে হয়।

প্রকৃতির রূপ বৈচিত্র্যের লীলা নিকেতন রূপসী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।ইতিহাস বলে,প্রাচীন জনপদ বঙ্গ থেকে আজ ২২ শতকের তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে বাংলাদেশে আসতে বাংলা মাকে অতিক্রম করতে হয়েছে দুর্গম পথ।সূচনা লগ্ন থেকে বঙ্গ জনপদটির স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সভ্যতা ও সংষ্কৃতি থাকলেও এই ভূমি শাসন করে গেছে পাল ও সেনরাজা,সুলতানী শাসক,মোঘল বাদশা,বাংলার বার ভুঁইয়া এবং সর্বশেষ পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজ-উদ-দৌল্লার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে এদেশ তথা পুরো উপমহাদেশের শাসনভার চলে যায় ইংরেজদের হাতে।দুইশত বছরের পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত হয়ে এই বঙ্গভূমিকে আবার পরাধীনতা ও শোষণের শেকলে বন্দি হতে হয়েছিল পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের হাতে।কিন্তু স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ এসেছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে।স্বাধীনতার রক্তিম রাজটিকা জয়ের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বাঙালিদের উপহার দিয়েছিলেন সোনালী ও সুখী জীবনের দীপ্ত অঙ্গিকার।বাংলার স্বাধীনতায় গৌরব ও সৌরভে বাঙালি হৃদয়ে এসেছিল প্রাণের সজীবতা।কিন্ত জাতির পিতার সেই স্বপ্ন সোনার বাংলার অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে প্রাণপণ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি।বিশ্বায়নের আজকের এই দিনে জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসূরী বঙ্গকন্যা, বিশ্বনেত্রী,জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যাচ্ছিলেন,সেই মুহুর্তে অশুভ শক্তি রূপে আবির্ভাব হলো জঙ্গিবাদের।

আজকের দিনে জঙ্গিবাদ একটি আতংকময় সন্ত্রাসের নাম।বাংলা মায়ের ধমনীর শোনিত ধারায় আজ প্রবেশ করেছে জঙ্গিবাদের নীল বিষ।এই বিষ ক্রমশ ধ্বংসাত্মক হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বাংলার পথেপ্রান্তরে।জাতি আজ শংকিত।বাংলার সব শ্রেণী-পেশার মানুষ আজ জঙ্গিবাদ নামক সন্ত্রাসের কালো ছোবল থেকে নিরাপদ নয়।প্রত্যুষে স্বজন থেকে বিদায় নেওয়া লোকটি সন্ধ্যায় লাশ হয়ে ফিরছে।এ যেন এক বিভীষিকাময় প্রহরের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন।

১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যার পর এদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অনুপ্রবেশ হয়।মূলত সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মাধ্যমে বীজ বপন হয় জঙ্গিবাদের।ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হয় জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ ইত্যাদি।বিগত বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে প্রকাশ্যে মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের সূত্রপাত হয়।বাংলা ভাই এবং তার সাগরেদরা সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা করে হত্যা করেছিল শান্ত বাংলার নিষ্পাপ সন্তানদের।বর্তমানে জঙ্গিবাদের উৎপত্তি মোড় নিয়েছে ভিন্ন দিকে।পূর্বে মাদ্রাসার অসহায় গরিব ছাত্রদের ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করা হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের সম্ভ্রান্ত পরিবারের এবং ভাবধারায় জীবন-যাপনে অভ্যস্ত তরুণরা জঙ্গিবাদে জড়িত হয়ে পরেছে।উন্নত দেশের তরুণরা যেখানে বিজ্ঞান ও শিল্পবিল্পবের চেতনায় তাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেখানে আমাদের দেশে বিপথগামী তরুণসমাজ জঙ্গিবাদ নামক আত্মঘাতী ও ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়ে জাতিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।সমাজের এলিট পরিবারের সন্তানরা জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে প্রমাণ করল যে মাদক ও এইডস এর চেয়ে ভয়াবহ ও মারাত্মক ঘাতক ব্যাধি হলো জঙ্গিবাদ।এইতো করানা ভাইরাসের আগের রমজানে গুলশানে অভিজাত রেস্টুরেন্ট হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় বিদেশী নাগরিক সহ ২২ জন নিহত হওয়ার ঘটনা এবং শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় জাতি আজ বিস্মিত।বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় জঙ্গিবাদ এখন অন্তরায়।তাই জঙ্গিবাদ নির্মূল এখন সময়ের দাবি।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন মক্কা বিজয় করলেন তখন ফিরছিলেন মক্কার দিকে বিজয়ীর বেশে তার একজন সাহাবার হাতে ছিল বিজয়ের পতাকা,তিনি ছিলেন খুবই উত্তেজিত এটাই স্বাভাবিক আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে অস্থ ছিল কেউ অঘটন ঘটিয়ে ছিল আবার কেউ ঘটায় নেই।সেই সাহাবা খুব উত্তেজিত কন্ঠে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলে রাসুলুল্লাহ আমরা এখন সব খতম করে ফেলবো।রাসুলুল্লাহ বলেন আজকে আমরা খতম করতে যাচ্ছি না,মহব্বতের জন্য যাচ্ছি,ভালোবাসার জন্য যাচ্ছি।সাহাবার এই উক্তির জন্য তার শাস্তি স্বরুপ হাত থেকে পতাকা কেরে নেয়া হয়েছিল।বর্তমান বিশ্বেও বাংলাদেশে আতংকের নাম জঙ্গি।জঙ্গিদেরকে আইএস বলা হয়।এদের আস্তানা হচ্ছে সিরিয়ায় ১টি অংশে।ওরা হাজার কিলোমিটার দূরে গিয়ে জার্মানিতে বোমা ফাটায়,ফ্রান্সে গিয়ে ট্রাক চাপিয়ে মেরে ফেলে,ওরা বেলজিয়ামে গিয়ে বোমা ফাটায়,আমেরিকা ফাটায়,ইংল্যান্ডে ফাটায়,পাকিস্তানে মসজিদে,হাসপাতালে বোমা ফাটায়,কয়েকদিন আগে শ্রীলঙ্কার গীর্জায়,হোটেল,রোস্তরায় জঙিরা হামলা করে শতশত মানুষ মেরে ফেলছে।আমি ব্যক্তিগত ভাবে জঙ্গিদের সাক্ষাত পেলে তাদের একটা প্রশ্ন করতাম তোমার বাড়ির পাশে তো ইসরায়েল!ইসরায়েলকে আমরা বলি ইসলামের বড় শত্রু।তুমি হাজার হাজার মাইল দূরে বোমা না ফাটায় মাত্র ৫০ মাইল দূরে ইসরায়েলে গিয়ে বোমা ফাটাও না কেন??আমি এই জন্য আইএসকে ইসলামি এস্টেট বলিনা,আইএস মানে ইজরাইল এস্টেট বলি।এরা সারা পৃথিবীতে ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এই কাজ গুলো করছে।আর আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ বিদেশে চাকুরী করে ভিসা বন্ধ হয়ে যাবে,বিদেশী বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাবে আর এটাইতো তারা চাইছেন।সুতরাং আমাদের জঙ্গিবাদকে বিশ্লেষণ করতে হবে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে একটা দিক বিশ্লেষণ করলে হবেনা।আমাদের দেশের গুলশানে হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে চলছে,স্বজাগও রয়েছে।দেশের সরকার ও প্রশাসন কঠোর জন্য খুব বেশি আঘাত করতে পারে নাই তবে জঙ্গিবাদের আতংক দেশের প্রতিটি নাগরিকের ভিতরে আছে।আর সব থেকে কষ্টের বিষয় হচ্ছে যারা করছে তারা আমাদের দেশের ও ইসলামী রাষ্ট্রের কিছু বিকৃত মানসিক ছেলে ও মেয়ে তারা কেউ হয়তো আবার আমাদের প্রতিবেশি।সেখানে মাদ্রাসার ছাত্র আছে কিংবা ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্র এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়,বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ও ছাত্র আছে।কারা আছে সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়,বিবেচ্য বিষয় হলো ধান তো যে জমিতেই হয় যেটা ধানের উপযোগী এবং সেই আবহাওয়াও থাকতে হয়,তা না হলে ধান হবেনা।

এই জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রটা কে তৈরি করেছে এই আবহাওয়াটা কে সৃষ্টি করেছে সেটা জানা আগে অনেক বেশি জরুরি।আমাদের দেশের আর কোন সন্তান যেন জঙ্গিবাদের দিকে না যায় সেদিকে আমাদের দেশের প্রতিটি নাগরিককেই সচেতন হতে হবে এবং জঙ্গিবাদকে কারা মদদ দিচ্ছে তাদের অর্থের যোগান কোথা থেকে আসছে সেগুলো ফাইন্ড আউট করে সমাধান বের করতে হবে।।(লেখকঃ স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ,রংপুর জেলা শাখা।)

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments