রাজনীতি

রংপুরে কৃষক সমিতির 'তিস্তা কৃষক সমাবেশ'

তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় কর, সেচের পানির বিতরণে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের অনিয়ম-হয়রানি বন্ধ কর।
বাংলাদেশ কৃষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে তিস্তা নদীর ন্যায্য হিস্যা আদায় ও বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের পানি বিতরণে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের অনিয়ম-হয়রানি-দুর্নীতি বন্ধের দাবিতে রংপুরের শাপলা চত্তরে 'তিস্তা কৃষক সমাবেশ' অনুষ্ঠিত হয়। নগরীর পাবলিক লাইব্রেরি চত্তরে সমাবেশের আয়োজন করা হলেও পুলিশের বাধার মুখে শাপলা চত্তরে অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল রংপুর শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

তিস্তা কৃষক সমাবেশ থেকে কৃষক জনগোষ্ঠী নিম্নোক্ত দাবিসমূহ উত্থাপন করেছে:

• সারাবছর তিস্তা নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ নিশ্চিত কর।

• ভারতের সঙ্গে দ্রুত পানি চুক্তি করে পানির হিস্যা আদায় কর। তিস্তা নদীকে মেরে ফেলার হাত থেকে রক্ষা কর।

• তিস্তাসহ অন্যান্য নদী, খাল, বিল, জলাশয় পরিকল্পিতভাবে খনন করে তলদেশের নাব্যতা বজায় রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।

• দেশপ্রেমিক নদী গবেষকদের পরামর্শের ভিত্তিতে তিস্তার পানি

সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

• তিস্তা নদীর দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াত ও কৃষিপণ্য দ্রুত হাট-বাজারে নেওয়ার জন্য সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন কর।

• নদী ভাঙন, কৃষকের ফসল, গবাদিপশু, ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য পরিকল্পিত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কর।

• নদী ভাঙনে (সিকস্তি) ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষতিপূরণ দাও। জেগে উঠা জমি (পয়স্তি জমি) প্রকৃত মালিকদের ফিরিয়ে দাও। ভূমিহীন মানুষকে খাসজমি বরাদ্দ দাও।

• বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের পানি বিতরণে ও গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগে অনিয়ম-হয়রানি-দুর্নীতি বন্ধ কর। অপারেটরদের দৌরাত্ম্য রোধ কর।
কৃষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মোহাম্মদ আলতাফ হোসাইন এর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবিদ হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন কৃষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, সহসাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য রাগীব আহসান মুন্না, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি আমজাদ হোসেন সরকার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রংপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও গাইবান্ধা জেলা কমিটির সভাপতি মো: সাদেকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ্যাড. মহসিন রেজা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো: তাজুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির সভাপতি মো: ইয়াকুব হোসেন, ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোর্তুজা আলম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কুড়িগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি নূর মোহাম্মদ আনসার, দিনাজপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হাসান সিদ্দিকী, কুড়িগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার রায়, লালমনিরহাট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মধুসূদন রায়সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে সংহতি বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি রংপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড কাফী সরকার।

সমাবেশে কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট রংপুর নীলফামারী গাইবান্ধা ও ঠাকুরগাঁও জেলার কয়েক হাজার কৃষক অংশগ্রহণ করে।


সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের বিশেষভাবে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারীসহ অন্যান্য জেলার কৃষকসহ সাধারণ জনগোষ্ঠী এবং এই জেলাসমূহের পরিবেশ, প্রকৃতি, প্রাণ ও জীববৈচিত্র্য তিস্তা নদীর উপর নির্ভরশীল।
শুষ্ক মৌসুমে বিশেষভাবে ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত তিস্তা নদী প্রায় পানিশুন্য হয়ে শুকনো বালুর রাশিতে পরিনত হয়। এই সময়কালে নদী মাছ শুন্য হয়ে যাওয়ার মৎস্যজীবীরা চরম সঙ্কটের মুখোমুখি হয়। সেচের পানির অভাবে কৃষি জমি বিরানভূমি হয়ে পরে। পরিবেশ, প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়। বিগত অনেক বছর ধরেই এই অঞ্চলের কৃষকরা ফসল উৎপাদনে হিমশিম খাচ্ছে। কৃষি জমির জৈবশক্তি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। ফসল উৎপাদনে উৎপাদন খরচ লাগামহীন ভাবে বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু কৃষক তার ফসলের লাভজনক দাম পাচ্ছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে দ্রুতই দেশের খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির সম্মুখীন হবে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ৫৭ টি আন্তঃসীমান্ত নদী প্রবাহিত হয়েছে। এরমধ্যে ৫৪ টি নদী ভারত- বাংলাদেশে যৌথভাবে প্রবাহিত। তিস্তা নদী একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং দীর্ঘতর নদী।
ভারত মধ্যে পানির প্রবাহ বন্টন ও নদী ব্যবস্থাপনার জন্য যৌথ নদী কমিশন আছে। গঙ্গা নদী পানি চুক্তিও বিদ্যমান থাকলেও চুক্তিভঙ্গ করে তিস্তা নদীর উপর ভারতের গজলডোবায় বাধ নির্মাণ করে বাংলাদেশের প্রাপ্য পানি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এরফলে তিস্তাসহ তিস্তা থেকে প্রবাহিত প্রায় ২৪ টি নদী পানিশুন্যতায় মৃতপ্রায়।
ভারত তিস্তা চুক্তি করার অঙ্গিকার করলেও বাস্তবে চুক্তি করার বিষয়ে বারবার অনিহা প্রকাশ করছে।
দেশের উত্তর - পশ্চিমাঞ্চলে ফসল উৎপাদন জন্য সেচ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে তিস্তা সেচ প্রকল্প চালু করলেও তিস্তার উৎস মুখে ভারত পানি আটকে রেখে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করায় তিস্তা শেষ প্রকল্প সক্রিয় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহের চেয়ে অনেক গুণ বেশি পানি ছেড়ে দেয়ায় উত্তরবঙ্গের বিস্তর এলাকায় বন্যা কবলিত হয়ে ফসল, ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, পরিবেশ প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
নেতৃবৃন্দ সমাবেশে পুলিশের বাধা দেয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

নেতৃবৃন্দ আরো বলে, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, কৃষি সেচের জন্য ভূউপরস্থ পানি সংরক্ষণের জন্য নদী, খাল, বিল, জলাশয় দখলমুক্ত, পরিকল্পিতভাবে খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা, পরিবেশ-প্রকৃতি, প্রাণ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার দাবিতে বাংলাদেশ কৃষক সমিতি কৃষক জনগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই সংগ্রাম করছে। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ জেলার কৃষকরা রংপুরে 'তিস্তা কৃষক সমাবেশ' ও বিক্ষোভ মিছিল আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে।

আগামী দিনে তিস্তা নদীসহ মানবদেহের শিরা-উপশিরার মতো প্রবাহিত নদীসমূহকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে , পরিবেশ-প্রকৃতি -প্রাণ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে, জীবন-জীবিকার নিরন্তর সংগ্রামে উত্তর জনপদের কৃষি ও কৃষকদের বাঁচাতে অবিলম্বে কার্যকর ব্যাবস্থা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন না করলে বাংলাদেশ কৃষক সমিতি উত্তরবঙ্গের ১৬ টি জেলার কৃষকদের সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন পালন করবে।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments