অপরাধ

চট্টগ্রাম স্টেশন রোড পতিতাদের স্বর্গরাজ্য

চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানা এলাকায় পবিত্র রমজান মাসে আবাসিক হোটেল ও বেশ কিছু স্থানে পতিতা, খদ্দের ও দালালদের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে কোতোয়ালি থানার স্টেশন রোড এলাকার জামে মসজিদের পাশের একাধিক আবাসিক হোটেল এখন পতিতাদের স্বর্গরাজ্য। যদিও সংশ্লিষ্ট থানার ওসি বলছেন, প্রতিদিনই এসব বন্ধে অভিযান পরিচালিত হয়। তবে স্থানীয় ও মুসল্লীরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে পতিতাবৃত্তির সুযোগ করে দিচ্ছে আবাসিক হোটেলগুলো।
সম্প্রতি পতিতা ও খদ্দের ও দালালদের উপদ্রবে অতিষ্ঠ স্টেশন রোড জামে মসজিদের মুসল্লীরা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে জায়গায় জায়গায় ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছে। একাধিক মুসল্লী ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, এই রমজান মাসে মসজিদের গা ঘেঁষে স্থাপিত মেট্রো ইন, গনি আবাসিক হোটেল সহ স্টেশন রোডে সিংহভাগ আবাসিক হোটেলে পতিতা ও খদ্দেরদের উৎপাত উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে গেছে। পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন ও চৈতন্য গলি কবরস্থানের সামনে ভাসমান পতিতার সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। আর এসব ডিঙ্গিয়ে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত মুসল্লীদের নামাজ আদায় করতে যেতে হচ্ছে মসজিদে। এখন তো রাতে তারাবির নামাজের আগে ও পরে এসব বিষয় আরো বেশী বিব্রতকর হয়ে উঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে স্টেশন রোডের বেশ কিছু আবাসিক হোটেলে স্থায়ী পতিতার হাট বসছে। এছাড়া স্বল্পমূল্যে ভাসমান পতিতাদের অসামাজিক কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে এই রোডের একাধিক আবাসিক হোটেল। সরেজমিন ঘুরে রাত ৯টার পর এসব হোটেলে পতিতা ও খদ্দেরদের অবাধ বিচরণ দেখা গেছে। ৫৯, স্টেশন রোডে অবস্থিত মেট্রো কমপ্লেক্সের ২য় তলা থেকে মেট্রো ইন আবাসিক হোটেল। হোটেলের বাহিরে সার্বক্ষণিক দালাল ও খদ্দেরের বিচরণ দেখা গেছে। স্টেশন রোড ধরে হাঁটলে কয়েকটি বাদে বেশির ভাগ আবাসিক হোটেলগুলির একই চিত্রের দেখা মিলেছে।
ইতিপূর্বে অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে নগরের কোতোয়ালি থানা এলাকার ১৮টি আবাসিক হোটেলের লাইসেন্স বাতিল চেয়ে আবেদন করেছিলেন কোতোয়ালি থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল কবির। সেই তালিকাতেও ছিল মেট্রো ইন ও গনি হোটেলের নাম। এছাড়া স্টেশন রোডের হোটেল গেইটওয়ে আবাসিক, হোটেল গেস্ট ইন, ইকবাল বোর্ডিং ও হোটেল ঢাকা আবাসিক, জহুর হকার্স মার্কেটের পাশে লয়েল রোডে হোটেল দরবার আবাসিক ও হোটেল আদর আবাসিক, ফিরিঙ্গিবাজার ব্রিজঘাট এলাকার হোটেল নেভাল আবাসিক ও হোটেল কর্ণফুলী আবাসিক, নন্দনকানন শিক্ষা অফিসের পাশে হোটেল মুসলিম আবাসিক ও হোটেল বিরাজ, বিআরটিসি এলাকার হোটেল সিলভার ইন ও হোটেল হিলটাউন আবাসিক, পুরাতন গির্জা সড়কের হোটেল লুসাই ইন, কে সি দে সড়কের হোটেল সাউদিয়া, লালদিঘির পাড় এলাকার হোটেল এস নাইট (সুপার হেস্ট হাউস) এবং রঙ্গম কনভেনশন হল এলাকার হোটেল ক্যামেলিয়া (হোটেল সম্রাট) এর বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে লাইসেন্স বাতিল চেয়ে গত ২০২৩ সালের ৭ জুলাই জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনটি করা হয়।
নির্ধারিত অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে যে কেউ এখানে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতে পারে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে এক পেশাদার পতিতার দালাল। তিনি বাংলাদেশ বুলেটিন বলেন, থানা পুলিশের সাথে সেটিং আছে৷ যাদের (হোটেল মালিক পক্ষ) পেমেন্ট দিতে দেরি হয় সেখানেই রেইট (পুলিশের অভিযান) চলে। পতিতা ও খদ্দেররা গ্রেফতার হলেও সামান্য কিছু জরিমানা কিংবা কারাবাস করে দ্রুত বেরিয়ে আসে বলেও জানায় দীর্ঘ একযুগ ধরে পতিতার দালালির কাজে জড়িত এই ব্যক্তি। অভিযোগ আছে হোটেল গুলিতে পতিতাবৃত্তি ছাড়াও নিয়মিত মাদক সেবনের সুব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। নির্ধারিত কিছু কক্ষে নিয়মিত মাদক কেনা বেচার পাশাপাশি মাদক সেবন করা হয়।
এসব বিষয়ে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম ওবায়েদুল হক বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত এসব আবাসিক হোটেলে অভিযান পরিচালনা করছি, প্রায় সেখান থেকে অনেককে আটক করে কোর্টে চালানও দিচ্ছি৷ কিন্তু এসব হোটেল মালিকদের লজ্জা শরম নাই।” স্টেশন রোড় জামে মসজিদ মুসল্লীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানান৷
আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ার সুযোগে গ্রেফতার পতিতা ও খদ্দের দ্রুত আদালত থেকে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এস এম রাশেদ চৌধুরি। তিনি বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, “থানা থেকে আসামিকে কোন ধারায় বা কি মামলায় কোর্টে চালান দিচ্ছে সেটার ওপর ভিত্তি করেই কিন্তু মাননীয় বিচারক আসামিকে শাস্তি দেন। এখন যদি কাউকে শুধু ৮৮ ধারায় চালায় দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে তার সহজে ছাড়া পাওয়ার সুযোগ থাকে। এছাড়া পতিতাদের যারা ব্যবহার করে ব্যবসা করছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থেকে যাচ্ছে।” পতিতাদের ব্যবসার ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত আবাসিক হোটেল গুলির মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া গেলে এসব পতিতাবৃত্তি বন্ধ করা সম্ভব হবে মনে করছেন এই আইনজীবী।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments