অপরাধ

ফুলবাড়ীতে ১টি দুর্ধর্ষ ডাকাতিসহ ৯টি চুরি, রক্ষা পায়নি স্মৃতি স্তম্ভের নিরপত্তা বেষ্টনীর গ্রীল॥

ফুলবাড়ী, দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে হঠাৎ করেই চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল রোববার ভোর রাতে একটি দুর্ধর্ষ ডাকাতিসহ গত এক মাসে ৯টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদারকির অভাব। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেও মিলছেনা কোন প্রতিকার দাবী ভুক্তভুগীদের।
গত ৫মে থেকে ৬এপ্রিল পর্যন্ত পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে তিনটি দোকান, পাঁচটি বাড়ী এবং একটি স্মৃতি স্তম্ভে এ সমস্ত চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, গত শনিবার দিবাগত রাতে (রোববার ৫ এপ্রিল ভোর রাতে) উপজেলার এলুয়াড়ী ইউনিয়নের লালদিঘী বাজারে পিকআপ (ছোট ট্রাক) নিয়ে এসে নৈশ্য প্রহরীকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে আটকে রেখে তিনটি দোকানের সার্টারের তালা ভেঙ্গে দুর্ধষ ডাকাতি সংঘটিত হয়। এসময় ডাকাতদল তিনভাই ট্রেডার্স থেকে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার কিটনাশক, সাগর ট্রেডার্স থেকে ৫ লাখ টাকার কিটনাশক ও নগদ ১০ হাজার টাকা ডাকাতি করে নিয়ে যায়। একই সাথে ওই বাজারের পল্লব টেলিকম নামের এক বিকাশ এজেন্টের দোকানের তালা ভেঙ্গে নগদ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এঘটনায় রোববার দুপুরে ফুলবাড়ী থানার পুলিশ পরিদর্শক ওসি তদন্ত শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
লালদিঘী বাজারের নৈশ্য প্রহরী ইউনুছ আলী জানান, রাত আনুমানিক ৩টার দিকে হটাৎ একটি পিকআপ বাজারে এসে থামে। এরপর পিকআপ থেকে ৭/৮জন লোক নেমে এসে আমাকে দেশী অস্ত্রের মুখে আটকিয়ে তিনটি দোকানের মালামাল ও টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। তারা চলে যাওয়ার পর স্থানীয়দের সহায়তায় আমি দোকান মালিকদের ঘটনা জানালে তারা বাজারে আসেন।
ভুক্তভুগি ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন মন্ডল, আশিকুর রহমান, পল্লব দাস বলেন, বসতবাড়িসহ দোকানঘরে চুরি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা কি করে ব্যবসা করবো। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
একই রাতে আলাদীপুর ইউনিয়নের আলাদীপুর গ্রামের নিবাস বর্ম্মণের বাড়ীতে চোরেরা প্রাচীর টপকে প্রবেশ করে দেড় ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। এসময় বাড়ীর গৃহীনি সুশিলা বর্ম্মণ টের পেয়ে চিৎকার করলে চোরেরা পালিয়ে যায়।
এদিকে গত ২৯ এপ্রিল রাতে মুক্তিযুদ্ধের সময় শহিদ হওয়া ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সেনাসদস্যদের স্মরণে ফুলবাড়ী সরকারী কলেজের পেছনে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের লোহার নিরাপত্তা বেষ্টনির গ্রিল চুরি করে নিয়ে গেছে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা এছার উদ্দিন বলেন, এটি একটি নিন্দনীয় ঘটনা। চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।
অপরদিকে গত ২৮ এপ্রিল রাতে পৌর এলাকার চকচকা গ্রামের মাইক ও সাউন্ড সার্ভিসের ব্যবসায়ী পৌর কর্মচারী মোশারফ হোসেনের বাড়ীতে ‘গভীর রাতে প্রবেশ করে চোরেরা ৫ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এর মধ্যে ২টি কম্পিউটার সেট, ৯টি ব্যাটারী, মাইকের ইউনিট, মাউথ পিস, তার, মাইক সার্ভিসের বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে যায়। মোশারফ হোসেন বলেন, সেদিন আমার ছেলেরা বাড়ীর বাহিরে ছিল, চোরেরা চেতনানাশক ওষুধ স্প্রে করে বাড়ীর অন্যদের অচেতন করে আমার ব্যবসার মালামাল চুরি করে নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করেও পুলিশ আসেনি।
এছাড়া গত ২৬ এপ্রিল রাতে উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামে ধান কাটা মেশিন থেকে ৬ টি ব্যাটারি চুরি হয়েছে এবং অপর একটি বাড়ি থেকে ১ টি বৈদ্যুতিক মটার চুরি হয়েছে। গত ৬ এপ্রিল দুপুরে শিবনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুর এলাকার আনোয়ারুল ইসলাম এর বাড়ী থেকে নগদ ৬০ হাজার টাকা চুরি হয়েছে। তারা বাড়ীর বাইরে কাজ করছিল এই সুযোগে চোরেরা এ চুরি সংঘটিত করে।
গত মাসে নিমতলা মোড়ের সেলুন সংলগ্ন পার্সের দোকানের টিন কেটে টেবিলের ডয়ার ভেঙ্গে ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এই ঘটনায় ভূক্তভূগি থানায় অভিযোগ করেন।
এছাড়ও গত ২৫ এপ্রিল দিবাগত রাতে ফুলবাড়ী পৌর এলাকার ০২নং ওয়ার্ডের চাঁদপাড়া গ্রামের মতিয়ার রহমানের বাড়ীতে চেতনানাশক ওষুধ স্প্রে করে দুর্ধষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় চোরেরা বাড়ীতে থাকা নগদ ৬৫ হাজার টাকা, স্বর্ণের এক জোড়া কানের দুল ও হাতের চুরি নিয়ে যায়। এসময় বাড়ীতে থাকা মোটরসাইকেল নিতে দরজা কাটতে গেলে বাড়ীর লোকজন টের পেয়ে চিৎকার করলে চোরেরা পালিয়ে যায়। এর কিছুদিন আগে একই গ্রামের আমিরুল ইসলামের বাড়ী থেকে প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকার গরু চুরি করে নিয়ে যায়।
গত ১৪ এপ্রিল দিন দুপুরে শিবনগর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর( বড়বন্দর) গ্রামে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মঞ্জুআরা বিউটির বাড়ীতে নগদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা ও সাত ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়েছে।
বিউটি বলেন, বাড়ীতে না থাকার সুযোগে ভেন্টিলেটার ভেঙ্গে এবং টিন খুলে ঘরে ঢুকে আলমারির দুটো ড্রয়ার ভেঙ্গে নগদ টাকা সহ স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে নিয়ে গেছে। এসব মাদক সেবনকারিদের কাজ হতে পারে। থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, তবে এখনও কাউকে আটক করতে পারেনি।
স্থানীয়রা বলছেন, ফুলবাড়ীতে মাদকের কারবার বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মাদকের করাল গ্রাসে যুব সমাজ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মাদকের কারনে এসব চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। তাই মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে।
ফুলবাড়ী থানার পুলিশ পরিদর্শক ওসি তদন্ত শফিকুল ইসলাম এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, লালদিঘী বাজারের ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখেছি এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেছি। ওসি সাহেব নেই তিনি এলেই তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমানকে থানায় না পেয়ে তার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি একটা মিটিংএ আছি, ফ্রি হয়ে ফোন দেব বলে ফোন কল কেটে দেন।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments