অপরাধ

তুরাগে চোরাই তেলের ব্যবসার আড়ালে চুরি ছিনতাই ও জমজমাট মাদক বাণিজ্য

মোল্লা তানিয়া ইসলাম তমাঃ  রাজধানীর তুরাগ থানার অন্তর্গত আব্দুল্লাহপুর- নবীনগর ও উত্তরা ১২নং সেক্টরের খালপাড় থেকে মেট্রোরেল পর্যন্ত এবং মিরপুর বেড়িবাঁধ সড়কের পাশে সরকারি জমি দখল করে টিনের বেড়ার মাধ্যমে দোকান বসিয়ে গাড়ি থেকে তেল চুরি, মাদক ব্যবসা ও ছিনতাই করা এক রকমের পেশায় পরিণত হয়েছে । এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে সরাসরি গাড়ি থেকে জ্বালানি তেল অকটেন, ডিজেল, পেট্রোল ও মাদক ক্রয়- বিক্রয় করার পাশাপাশি চুরি ছিনতাই করে থাকে । তাদের হিসাব আবার অন্য রকম, তা হলো লিটারে দুই লিটার, যার মূল্য প্রায় তিনের একাংশ টাকা পেয়ে থাকে গাড়ির ড্রাইভার । বিনিময়ে মাদক সেবী ড্রাইভাররা তাদের কাছ থেকে পেয়ে থাকে গাঁজা, ইয়াবাসহ নানা জাতের মাদক । ইতিপূর্বে এ ব্যাপারে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও তার কোন প্রতিকার হয়নি । প্রায় ২৪ ঘণ্টাই প্রকাশ্যে মাদক ও চোরাই তেলের রমরমা ব্যবসা করতে দেখা যায় । সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, এই সিন্ডিকেটের লোকেরা পুলিশের কয়েকটি টিমকে টাকা দিয়ে থাকে । শুধু তাই নয়, থানায় মাসিক- সাপ্তাহিক মাসহারা দিয়ে থাকে তারা । এই প্রতিবেদকের নিকট কিছু প্রত্যক্ষদর্শিরা এমন কথাও বলে থাকেন যে, তুরাগ থানা এলাকার আব্দুল্লাহপুর- নবীনগর ও উত্তরা ১২নং সেক্টরের খালপাড় থেকে মেট্রোরেল পর্যন্ত এবং মিরপুর বেড়িবাঁধ সড়কের পাশে তুরাগ থানা এলাকায় অন্তত ৮ থেকে ১০টি চোরাই তেল ও মাদক ব্যবসার স্পট রয়েছে । এই স্পট গুলোর টাকা শুধু থানা পুলিশই পায়না, নামধারী কিছু নেতা, ভুঁইফোড় কথিত সাংবাদিকও পেয়ে থাকে । সাহেব আলী মাদ্রাসার একটু দক্ষিণ ও পশ্চিমে ২টি চোরাই জ্বালানি তৈল ও মাদক স্পোর্টের মালিক কুদ্দুস মিয়া (৫৫) দম্ভ করে বলেন, আমি মাদারীপুরের লোক, সাবেক নৌ মন্ত্রী সাজাহান খান আমার আত্মীয় । তাছাড়া আমি স্থানীয় থানা পুলিশ সাংবাদিক ও এলাকার নেতাদের ম্যানেজ করেই এই এলাকায় ৩/৪টি স্পট দ্বারা এই ব্যবসা করে থাকি । কেউ আমার কিছুই করতে পারবে না । আপনার যদি কিছু দরকার হয় বলেন দিয়ে দেই চলে যান, ঝামেলার কোন দরকার নেই । ইতিপূর্বে আমার এই ব্যবসা নিয়ে কয়েকটি চ্যানেল ও পত্রিকায় অনেক প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে, তাতে আমার কিছুই হয়নি আর আপনি দু কলম লিখে আমার বিরুদ্ধে কি করতে পারবেন । তার পাশেই আরেক চোরাই তৈল ও মাদক ব্যবসায়ী রানা বলেন, আমি এলাকার স্থানীয় ও প্রভাবশালী জলিল মিয়ার লোক । আপনার চাইতে বাঘা বাঘা সাংবাদিক এখানে আসা যাওয়া করে, তারাই আমাকে বড় ভাই বলে সম্বোধন করে । আমরা স্থানীয় থানা পুলিশ সাংবাদিক ও এলাকার নেতাদের ম্যানেজ করেই এই ব্যবসা করে থাকি । কেউ আমাদের কিছু করতে পারবে না, এখন আপনি এখান থেকে কেটে পড়েন তা নাহলে আপনার বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যাবে । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক বাসিন্দারা জানান, অনেক ড্রাইভার তেলের বিনিময়ে এদের কাছ থেকে মাদক নিয়ে যায়, আবার অনেকে এই স্পটে বসেই মাদক সেবন করে থাকে । আরেকটি গ্রুপ এখানে বসে মাদক সেবন করে ও সুযোগ বুঝে পথচারীদের গতিরোধ করে ছিনতাই করে থাকে । গত ২৯/২/২০২০ইং তারিখ সন্ধ্যার দিকে কুদ্দুসের স্পটের সদস্যরা পথচারী আবুল খায়ের ও মারুফ নামে দুই ব্যক্তিকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ও ছুরি দ্বারা আঘাত করে তাদের মোবাইল, টাকা পয়সাসহ সর্বস্ব লুটে নেয় । পরে ভুক্তভোগী আবুল খায়ের চিকিৎসা শেষে পরের দিন ১/৩/২০২০ইং তারিখে তুরাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং- ২ । মামলা হওয়ার পর থানার এস আই মোঃ ওয়াজিউর রহমান অভিযান চালিয়ে এই চক্রের কয়েক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ও ছিনতাইকৃত মালামাল কুদ্দুসের চোরাই তেলের স্পট থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় । গ্রেপ্তার কৃতরা কয়েকদিন জেল খেটে জামিনে বের হয়ে আবারো তারা জড়িয়ে পড়ে এইসব অপরাধ মূলক কর্মকা-ে । এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা একাধিকবার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হলেও এক মুহূর্তের জন্যও থেমে থাকেনি তাদের বিভিন্ন রকম অবৈধ কর্মকা- । তাদের এত সব অপকর্ম অনেক সময় প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে । এলাকাবাসী এদের ভয়ে সবসময় আতংকিত, যদি তারা তাদের কোন ক্ষতি করে । বর্তমানে এই চক্রের মূল হোতারা হলেন, কামারপাড়া সাহেব আলী মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় কুদ্দুস, জলিল, রানা, সুইসগেট এলাকায় শরীফ, মেট্রোরেল সংলগ্ন এলাকায় আল আমীন, আব্দুল কাদের, খালপাড় এলাকায় দিপু, পঞ্চবটি এলাকায় জয়, আলী আকসার, রাকিবসহ বেশ কয়েকজন ।

Jamie Belcher

info@jagobahe24.com

News portal manager

Follow Me:

Comments