সারাদেশ
ঝিনাইদহ জেনারেল হাসপাতালের লিফট চালায় সিকিউরিটি গার্ড, ঘন ঘন যান্ত্রিক ত্রুটিতে রোগীরা থাকেন আতংকে!
ঝিনাইদহ-
ঝিনাইদহ আড়াই’শ বেড জেনারেল হাসপালের লিফট মানেই এখন আতংক। যখন তখন লিফট বন্ধ হয়ে রোগী ও তার স্বজনরা বিপদের সম্মুখিন হলেও কোন প্রতিকার নেই। কারণ এ দুটি লিফট চালান হাসপাতালেরই তিনজন সিকিউরিটি গার্ড। এ বিষয়ে তারা দক্ষ না হলেও তাদের হাতেই সোপর্দ করা হয়েছে আটতলা ভাবনের দুইটি লিফট। ফলে প্রতিনিয়ত লিফট আটকে রোগীদের বিড়ম্বনায় ফেলে দেয়। ঝিনাইদহ আড়াই’শ বেড জেনারেল হাসপালটি চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশ বার লিফটের মধ্যে আটকে পড়েছে মানুষ। সর্বশেষ গত ১৫ মে রোববার রাতে লিফটের মধ্যে ১১ জন নারী ও শিশু আটকা পড়ে। লিফটে থাকা জরুরী নাম্বারে কল করা হলে দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড মহিদুল ইসলাম জানান, “এখন আমার ডিউটি নেই”। অথচ সর্বক্ষন দুই লিফটে দুইজন অপারেটর থাকার কথা। পরে আটকে পড়া ওই ১১ জন ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে সহায়তা চাইলে ঝিনাইদহ দমকল বাহিনীর সদস্যরা আধঘন্টা পর আটকেপড়াদের উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ঝিনাইদহ আড়াই’শ বেড জেনারেল হাসপালের লিফটের দায়িত্বে রয়েছেন ইমামুল ইসলাম, মহিদুল ইসলাম ও রয়েল হোসেন নামে তিনজন সিকিউরিটি গার্ড। তারা হাসপাতালে আউট সোর্সিংয়ে কর্মরত। সিকিউরিটি গার্ড মহিদুল ইসলাম বলেন, তাদের লিফট চালানোর বিষয়ে তার কোন অভিজ্ঞতা নেই। গ্লোবাল লিফট কোম্পানীর প্রকৌশলীরা এসে তাদের কেবল অন অফ শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। ফলে ঘন ঘন লিফটে রোগী ও তাদের স্বজনরা আটকে পড়লেও যান্ত্রিক ত্রুটির সুনিদ্দিষ্ট কোন কারণ তিনি খুজে পান না। এক কথায় তাদের কাছে কোন প্রতিকার নেই। সিকিউরিটি গার্ড ইমামুল ইসলাম জানান, লিফট চালুর পর থেকে এই দেড় বছরে প্রায় ৫০/৬০ বার যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা গেছে। প্রতিবারই লিফটে আটকা পড়েছে মানুষ। এ নিয়ে লিফট আরোহীদের মাঝে এক ধরণের আতংক কাজ করছে। তিনি জানান, লিফট নিয়ে কোন সমস্যায় পড়লে তারা কোম্পানীর টেকনিশিয়ান ইয়াছিনকে ফোন করেন। তিনি মুঠোফোনে যা করতে বলেন তাই তারা করেন। লিফট অপারেটরে দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি গার্ডেদের ভাষ্য লোভেল্টেজের কারণে ঘনঘন লিফট আটকে যাচ্ছে। এ ভাবে চলতে থাকলে বড় ধরণের কোন দুর্ঘটনা ঘটারও আশংকার কথাও তারা জানিয়েছেন। লিফটের মধ্যে আটকে পড়া ঝিনাইদহের সাংস্কৃতিক কর্মী একরামুল হক লিকু জানান, এ ভাবে ঘনঘন লিফট আটকে গেলে অসুস্থ রোগীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। তিনি দ্রুত দক্ষ লিফটম্যান ও টেকনিশিয়ান নিয়োগের দাবী জানান। হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আব্দুল কাদের জানান, গত এপ্রিল মাসে হাসপাতালে ১৬ হাজার ৭৯১ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে ৩ হাজার ২৫৪ জন ভর্তি হন। তিনি বলেন প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩’শ রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এসব রোগী ও তাদের স্বজনরা প্রতিনিয়ত লিফট ব্যবহার করছেন। তিনি দাবী করেন, হাসপাতালের লিফট দুইটি নি¤œমানের। এদিকে ঝিনাইদহ আড়াই’শ বেড জেনারেল হাসপালের লিফট নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। ঝিনাইদহ গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জেড়াল্ড অলিভার গুত্তা জানান, ঝিনাইদহ হাসপাতালের লিফট আধুনিকমানের। এতোই আধুনিক যে লিফটে মানুষ আটকে পড়ার কোন সম্ভাবনা নেই। লো-ভোল্টেজ বা বিদ্যুৎ চলে গেলে লিফটটি প্রিজার্ভ করে রাখা তার নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় নিকটস্থ ফ্লোরে এসে থামবে। নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, লিফট চালানোর মতো হাসপাতালে কোন দক্ষ লোক নেই। তাছাড়া লিফটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও রক্ষনাবেক্ষন করার জন্য সার্বক্ষনিক একজন টেকনিশিয়ান ও নুন্যতম চারজন দক্ষ লিফটম্যান প্রয়োজন, যা হাসপাতালে নেই। নির্বাহী প্রকৌশলী জেড়াল্ড অলিভার গুত্তা আরো জানান, এ বিষয়ে তিনি লিফট কোম্পানীর সঙ্গে যোগাযোগ করে বর্তমান অপারেটরদের প্রশিক্ষক প্রদানের কথা হাসপাতালের তত্বাবধায়ককে অবহিত করেছেন। কিন্তু তাদের কোন আগ্রহ নেই। ঝিনাইদহ জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ রেজাউল ইসলাম জানান, তিনি অনেক স্থানে চাকরী করেছেন। সব খানেই দেখেছেন লিফট সুন্দর ভাবে চলে। ব্যতিক্রম কেবল ঝিনাইদহ হাসপাতালে। তিনি বলেন, করোনাকালে তড়িঘড়ি করে হাসপাতালের নতুন ভবন চালু হওয়ার কারণে গনপূর্ত বিভাগ ও ঠিকাদার নি¤œমানের লিফট সরবরাহ করেছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি মন্ত্রানালয়কে লিখিত ভাবে অবহিত করেছেন। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, গত বছর করোনাকালীন সময়ে ঝিনাইদহ আড়াই’শ বেড জেনারেল হাসপাতালটি চালু হয়। ৩৮ কোটি চাকা ব্যায় ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ হয়। হাসপাতালে ১৫টি কেবিন ব্লক, ৫টি অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ বিভাগ, সিসিইউ বিভাগ, সিটিস্ক্যান ব্যবস্থা, এম আরআই, বহির্বিভাগ চিকিৎসা ব্যবস্থা, নিজস্ব বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, চলাচলের জন্য ৩টি সিঁড়ি ও ২টি বেড লিফট রয়েছে।
Comments